Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

প্রাচীন সেগুন কাঠ ঘিরে চড়কের মেলা কালনায়

নিত্যদিনের রোজনামচা থেকে খানিক সরে এসে সেজে উঠছে গোটা গ্রাম। এসেছে বাহারি আলো। নানা মনোহারি দ্রব্য নিয়ে হাজির হয়েছেন বিক্রেতারা। একটি লম্বা সেগুন কাঠকে ঘিরে তৈরি হয়েছে জমাট ভিড়। বাড়ির ছাদেও উঁকি মারছে কৌতূহলী মুখ। মঙ্গলবার চড়ক উৎসবের দিন এ ভাবেই মেতে উঠল কালনা শহরের চারাবাগান এলাকা।

চড়ক দেখতে ব্যস্ততা। —নিজস্ব চিত্র।

চড়ক দেখতে ব্যস্ততা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৬
Share: Save:

নিত্যদিনের রোজনামচা থেকে খানিক সরে এসে সেজে উঠছে গোটা গ্রাম। এসেছে বাহারি আলো। নানা মনোহারি দ্রব্য নিয়ে হাজির হয়েছেন বিক্রেতারা। একটি লম্বা সেগুন কাঠকে ঘিরে তৈরি হয়েছে জমাট ভিড়। বাড়ির ছাদেও উঁকি মারছে কৌতূহলী মুখ। মঙ্গলবার চড়ক উৎসবের দিন এ ভাবেই মেতে উঠল কালনা শহরের চারাবাগান এলাকা।

গ্রামের মাঝে শিব মন্দির লাগোয়া একটি পুকুরকে ঘিরেই এই উৎসব। গ্রামের প্রবীণেরা জানান, বহু বছর আগে প্রায় ৩০ ফুট লম্বা একটি সেগুন কাঠ তৈরি করা হয়েছিল। বছরের অন্য সময় কাঠটি পুকুরের মধ্যে থাকে। চড়কের দিন চারেক আগে সেটিকে জল থেকে তুলে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে পুজো শুরু হয়। পুকুর থেকে সেগুন কাঠ তোলার পর স্থানীয় মহাপ্রভু মন্দির থেকে বিগ্রহ আনা হয় গ্রামের শিব মন্দিরে। সেখানেই চলে মূল পুজোপাঠের কাজ। এ বারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মঙ্গলবার চড়কের দিন মহাপ্রভু মন্দিরকে সাজানো হয়েছিল ফুলের মালা দিয়ে। চারাবাগান তো বটেই, অন্যান্য এলাকা থেকেও ভিড় করেছিলেন মানুষ।

চারাবাগান এলাকায় চড়কের ব্রত পালন করেন গোপাল মণ্ডল নামে এর সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ। তাঁর বাড়ি স্থানীয় হাঁসপুকুর এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চড়কের মাস খানেক আগে থেকেই তাঁর ব্রত শুরু হয়। এই সময় তাঁর হাতে থাকে বেতের ছড়ি। চড়কের কয়েক দিন আগে পুকুরের পাশেই আস্তানা তৈরি করেন। সেগুন কাঠ তোলার পরের দিন অনেক গ্রামবাসী তাঁকে ফল দিয়ে আসেন। এই দিনটি গ্রামে ফল উৎসব নামে পরিচিত। পরের দিন হয় পালিত হয় নীল উৎসব। প্রতি বছর এ দিন চড়ক মন্দিরে প্রায় কয়েক হাজার মহিলা পুজো দিতে আসেন। রাতে হয় নাচের অনুষ্ঠান। গ্রামবাসীরা বিভিন্ন দেবদেবীর সাজে সেজে আসেন। শেষ দিন হয় চড়ক। তার পরের দিন আম দিয়ে শোল মাছের টক খাইয়ে তাঁর ব্রত ভাঙা হয়।

গোপালবাবু বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় শরীরে বঁড়শি ঢোকানোর রেওয়াজ নেই। শুধু কোমরে দড়ি বেঁধে ঘোরানো হয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দা প্রতাপ দত্ত, বাপ্পা সিংহরায়, সাহেব শেখরা জানান, প্রাচীন এই চড়ক উৎসব দেখতে অন্যান্য গ্রাম থেকেও মানুষ আসেন। তবে তাঁদের আক্ষেপ, যে পুকুর ঘিরে চড়কের মূল উৎসবটি হয় বর্তমানে সেটি সংস্কারের অভাবে প্রায় মজতে বসেছে।

কালনা কানাদিঘি পাড়ের চড়ক উৎসবও জনপ্রিয়। কালনা শহরের স্টেশন রোডের পাশেই এই চড়ক ঘিরে মেলা বসেছে। ভক্তদের মধ্যে বাতাসা বিতরণ হল এই চড়কের বৈশিষ্ট্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE