Advertisement
০২ মে ২০২৪

মিশছে রাসায়নিক, চিন্তা আনারসে

দেখতে একেবারে গাছপাকা। কিন্তু স্বাদ-গন্ধ নেই। পকেট থেকে টাকা খসছে, কিন্তু রসনা মিটছে না। বাজার থেকে কেনা আনারস নিয়ে এমন অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের।

অভিযানে কাঁকসার বিডিও। —নিজস্ব চিত্র।

অভিযানে কাঁকসার বিডিও। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬ ০০:৫৯
Share: Save:

দেখতে একেবারে গাছপাকা। কিন্তু স্বাদ-গন্ধ নেই। পকেট থেকে টাকা খসছে, কিন্তু রসনা মিটছে না। বাজার থেকে কেনা আনারস নিয়ে এমন অভিযোগ রয়েছে ক্রেতাদের। বেশি মুনাফার লোভে আগেভাগে আনারস পাকিয়ে তোলার জন্য মেশানো হচ্ছে রাসায়নিক, বাজারে অভিযানে নেমে তা নজরে পড়েছে বলে দাবি প্রশাসনের কর্তাদের। তা বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে বলে তাঁদের আশ্বাস।

কাঁকসা ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পানাগড় বাজারের আনারসের গুণমান নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই ক্রেতাদের অভিযোগ-অনুযোগ শোনা যাচ্ছিল। শুক্রবার বাজারে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় বিডিও অরবিন্দ বিশ্বাসের। আনারসের পিছনে গোলাপি রাসায়নিক দেখতে পান তিনি। বাজার ঘুরে এমন ৫৫টি আনারস পান তিনি। ফল বিক্রেতারা দাবি করেন, উত্তরবঙ্গ থেকে আনারসগুলি এ ভাবেই এসেছে, বিডিও বলেন, ‘‘রাসায়নিকে পাকানো ফল খাওয়া বিপজ্জনক। আনারসের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হবে। বেআইনি কিছু মিললে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ নিয়মিত নজরদারির আশ্বাস দেন তিনি।

শুধু পানাগড় নয়, আনারসের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন দুর্গাপুরের অনেক ক্রেতাও। দুর্গাপুর বাজার, বেনাচিতি বাজার, মামরা বাজার, চণ্ডীদাস বাজারের বিভিন্ন ফলের দোকানেও পাকা আনারস কিনে স্বাদ মিলছে না বলে অভিযোগ। ইস্পাতনগরীর বি-জোনের বাসিন্দা রণজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চণ্ডীদাস বাজার থেকে দেখেশুনে ৩৫ টাকা দিয়ে বড় পাকা আনারস কিনে এনেছিলাম। কাটার পরে হতাশ। কোনও গন্ধ নেই, স্বাদ নেই!’’ সগড়ভাঙার বাসিন্দা মৌমিতা কোনার বলেন, ‘‘দুর্গাপুর বাজার থেকে হলুদ দেখে আনারস কিনে এনে ঠকেছি। কী যে হচ্ছে বুঝতে পারছি না!’’

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফল পাকার সময়ে প্রাকৃতিক ভাবে তাতে ইথিলিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। সবুজ রং বদলে পাকা রং ধারণ করে। আম, কলার মতো ফলে বাইরে থেকে রাসায়নিক প্রয়োগ করে ইথিলিনের পরিমাণ বাড়িয়ে পাকানো যায় সহজেই। কিন্তু আনারস ব্যতিক্রম। গাছে থাকাকালীন পাকে আনারস। এক তৃতীয়াংশ হলুদ হলে তবে গাছ থেকে তা আলাদা করতে হয়। কিন্তু সময় বাঁচাতে বেশি মুনাফার লোভে চাষিদের একাংশ কাঁচা অবস্থায় তুলে ফেলেন। কিন্তু বাইরে থেকে ইথিলিন প্রয়োগে আনারস পাকে না। তবে ইথিলিন আনারসের খোসার সবুজ অংশ হলুদ করে তোলে। তাতে বাইরে থেকে দেখে আনারস পাকা বলে মনে হয়। কিন্তু তা মোটেও সুস্বাদু বা সুগন্ধী হয় না। এই ধরনের আনারসেই বাজার ছেয়েছে বলে কর্তারা মনে করছেন।

চিকিৎসকেরা জানান, রাসায়নিক দেওয়া ফল নিয়মিত খেলে পেটের রোগ, শ্বাসকষ্ট থেকে যকৃত বা বৃক্কের সমস্যা হয়। এমনকী, ক্যানসারও হতে পারে। বেশি ক্ষতি হয় শিশুদের। দিন কয়েক আগে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বর্ধমানে বিভিন্ন ফলের দোকানে গিয়ে আপেলের উপরে মোমের প্রলেপ দেখে ফল বিক্রেতাদের সতর্ক করেন।

দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা জানান, ফল নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে। প্রশাসনের তরফে নজরদারির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাজারে নিয়মিত অভিযান হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pineapple chemical
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE