Advertisement
০৭ মে ২০২৪

শৌচাগার তৈরির টাকা কোথায়, দাঁইহাটে তরজায় জড়াল দু’দল

পানীয় জলের সমস্যা, কলেজ তৈরির দাবি, স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে দাঁইহাটে। প্রতি পুরভোটের সময় এই দাবিপূরণের প্রতিশ্রুতি নিয়েই ভোটারের দরবারে যায় রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্ত এ বার এদের পিছনে ফেলে সামনে এল শৌচাগার তৈরিতে অনিয়মের নালিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দাঁইহাট শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৪
Share: Save:

পানীয় জলের সমস্যা, কলেজ তৈরির দাবি, স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে দাঁইহাটে। প্রতি পুরভোটের সময় এই দাবিপূরণের প্রতিশ্রুতি নিয়েই ভোটারের দরবারে যায় রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্ত এ বার এদের পিছনে ফেলে সামনে এল শৌচাগার তৈরিতে অনিয়মের নালিশ।

কংগ্রেসের অভিযোগ, তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা এ বারের প্রার্থী সমর চক্রবর্তী শৌচাগার তৈরির অনুদান বিলিতে দুর্নীতি করেছেন। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, উপভোক্তাদের কাছে টাকা নেওয়ার পরেও কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা শৌচাগার তৈরি করে দেয়নি। তরজায় জমে গিয়েছে পুরভোটের প্রচার।

দাঁইহাট পুর এলাকা হলেও বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের এখনও শৌচকাজ সারতে ভাগীরথী অথবা কোনও জলাশয়ের ধারে যেতে হয়। শহরের ভিতরের অনেক এলাকায় কোনও কমিউনিটি শৌচাগার নেই। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যূনতম মূল্যে শৌচাগার নির্মাণ প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত হয় দাঁইহাট পুরসভা। তখন সমীক্ষা করে দেখা যায়, শহরের প্রায় দেড় হাজার বাড়িতে কোনও শৌচাগার নেই। তখন প্রাথমিক পর্যায়ে দাঁইহাটে ৪৬৬টি বাড়িতে শৌচাগার তৈরির অনুমোদন দেয় সরকার। ২০১১ সালের ২ নভেম্বর শৌচাগার তৈরির জন্য আনুমানিক ৪৭ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার অনুমোদন আসে। এর মধ্যে পুরসভার অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষ ৬৫ হাজার ৯৭৫ টাকা জমা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় একটি শৌচাগার তৈরি করতে মোট খরচ ধরা হয় ১০ হাজার টাকা। তার ১০ শতাংশ অর্থাৎ ১০০০ টাকা দেবে উপভোক্তা। বাকি টাকা দেবে পুরসভা।

পুরসভার কর্তারা জানান, প্রকল্পের বরাদ্দ সব টাকা না আসায় জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু উপভোক্তাকে শৌচাগার তৈরির জন্য ৪০০০ টাকা করে অনুদান দিয়েছিল পুরসভা। কংগ্রেসের অভিযোগ, এই অনুদান দেওয়ার সময় নিয়ম ভাঙেন তৃণমূল কাউন্সিলর সমর চক্রবর্তী। বিভিন্ন পথসভায় কংগ্রেস অভিযোগ করছে, সমরবাবু ৫ নম্বর ওয়ার্ডের উপভোক্তাদের তালিকায় অন্য দু’টি ওয়ার্ডের দু’জন উপভোক্তার নাম ঢুকিয়ে দিয়ে শৌচাগারের অনুদান তুলে নিয়েছিলেন। যদিও পরে এই ঘটনার তদন্ত শুরু হলে সমরবাবু পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়ে ওই টাকা জমা দেওয়ার আবেদন জানান। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সমরবাবু দু’জন উপভোক্তার অনুদান বাবদ ৮০০০ টাকা ফেরত দেন। স্থানীয় কংগ্রেস নেতারা সমরবাবুর সেই চিঠি ও অনুদান ফেরত দেওয়ার চালানের প্রতিলিপি দাঁইহাট শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে বিলি করছেন। তাঁদের দাবি, তৃণমূল কাউন্সিলর যে বেআইনি ভাবে অনুদান তুলেছিলেন তার প্রমাণ ওই চিঠি ও চালান।

দাঁইহাটের বিদায়ী পুরপ্রধান কংগ্রেসের সন্তোষ দাসের দাবি, “তৃণমূল আমাদের কাউন্সিলরদের উপর শৌচাগার কেলেঙ্কারির দায় চাপাতে চাইছে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা সত্যি জানানোর জন্য প্রচারে শৌচাগার কেলেঙ্কারিতে আসলে কার নাম উঠেছিল সেটা বলছি।” যদিও এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী সমর চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, “আমার ওয়ার্ডের উপভোক্তা তালিকায় অন্য ওয়ার্ডের উপভোক্তাদের নাম রয়েছে সেটা প্রথমে জানতাম না। জানার পরেই অনুদানের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করি।’’ তাঁর আরও দাবি, শৌচাগার নিয়ে কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভা অনেক কেলেঙ্কারি করেছে। সেগুলি ঢাকবার জন্যই প্রচারে মিথ্যা অভিযোগ করছে তাঁরা।

বেশিরভাগ উপভোক্তা শৌচাগারের অনুদান না পাওয়ার জন্য কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভাকে দায়ী করে পাল্টা প্রচারে নেমেছে তৃণমূল। একই অভিযোগ করেছে সিপিএম। তাদের অভিযোগ, অনেক উপভোক্তা ১০০০ টাকা জমা দেওয়ার পরেও পুরসভা থেকে কোনও অনুদান পায়নি। তৃণমূলের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সুদীপ্ত রায়ের অভিযোগ, “শৌচাগারের জন্য কেউ ৪০০০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছে, আবার কেউ এক টাকাও অনুদান পায়নি। কংগ্রেস পরিচালিত পুরসভার দূরদর্শিতার অভাবের জন্য দাঁইহাটে শৌচাগার তৈরির প্রকল্প সফল হয়নি।” সিপিএমের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী বিদ্যুৎ ভক্তর অভিযোগ, “শৌচাগারের টাকা লুঠ করেছে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তেরা।”

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে বিদায়ী পুরপ্রধান সন্তোষবাবু জানান, শৌচাগার তৈরির জন্য রাজ্যের কাছ থেকে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা পাওনা রয়েছে দাঁইহাট পুরসভার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE