‘সুসংবাদ’ জানিয়ে কেউ লিখেছে, ‘ভর্তি চলিতেছে।’ একই বয়ান জানিয়ে কেউ আবার ‘দক্ষ শিক্ষিকা ও উপযুক্ত ল্যাবরেটারি’ রয়েছে বলে জানিয়েছে। বিজ্ঞাপনে এমনই লড়াই বেধেছে বর্ধমান শহরের দু’টি স্কুলে। সবটাই, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তির জন্য।
বাঁকা নদীর পাড়ে শহরে দু’টি নামী স্কুল, বিদ্যার্থী ভবন গার্লস ও বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস। ছাত্রীরও অভাব নেই দুই স্কুলেই। তা হলে শহরের নানা প্রান্তে এমন বিজ্ঞাপন কেন? দু’টি স্কুলেরই কর্তৃপক্ষের দাবি, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। সে কথা জানাতেই বিজ্ঞাপন।
কিন্তু শহরের শিক্ষা মহলের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জনের দাবি অন্য। তাঁদের দাবি, এ ধরনের বিজ্ঞাপন সাধারণত বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিকে দিতে দেখা যায়। শিক্ষকদের দাবি, অনেক অভিভাবকই চান, ছেলেমেয়েকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত দিল্লি বোর্ডের স্কুলে পড়িয়ে সরকারি স্কুলে ভর্তি করাতে। এই মনোভাব বুঝে, ২০১০ সালে বিদ্যার্থী ভবন বিজ্ঞান বিভাগে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনার ব্যবস্থা শুরু করে। কয়েক বছর বাদে হিন্দিকে ‘প্রথম ভাষা’ হিসেবে নেওয়ারও সুযোগ তৈরি করা হয়। কিন্তু এ সবের পরেও দেখা যায়, মোট ৫০টি আসনের মধ্যে ১৩টি আসন ফাঁকাই থেকে গিয়েছে।
এ বারই প্রথম কালীবাজারে মিউনিসিপ্যাল গার্লস হাইস্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা শুরু হয়েছে। তাদের বিজ্ঞাপনে সেই ‘সুসংবাদ’ ফলাও করে জানানোও হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রাবণী মল্লিকের দাবি, ‘‘এ বছরই ইংরেজি মাধ্যম চালু হতে চলেছে। বিজ্ঞাপন না দিলে মেয়েরা জানবে কী করে।” স্কুল সূত্রে দাবি, কলা ও বিজ্ঞান দু’টি বিভাগেই ছাত্রী ভর্তির উপযুক্ত পরিকাঠামো রয়েছে।
শহরের অন্য স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে ইংরেজি মাধ্যম চালু হওয়ায় বিদ্যার্থী ভবনও বিজ্ঞাপনের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে বলে বিভিন্ন মহলের একাংশের দাবি। যদিও স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা রায়ের দাবি, ‘‘বিজ্ঞাপন তো দিতেই হবে। তা না হলে পড়ুয়া অভিভাবকরা জানবেন কী ভাবে, আমাদের স্কুলেও উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর সুযোগ রয়েছে।” বিজ্ঞাপনের বয়ানে ফলাও করে লেখা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে তাদের স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা চলছে। রয়েছেন দক্ষ শিক্ষিকারাও।
তবে শহরের বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশের দাবি, এমন সুস্থ প্রতিযোগিতা আসলে বর্ধমান এবং দু’টি স্কুলেরই পড়াশোনার মানোন্নয়ন ঘটাতে সাহায্য করবে।