দুর্ঘটনার পরে চালকের লাইসেন্স বৈধ নয় বলে চুক্তি মোতাবেক বিমার টাকা দিতে অস্বীকার করেছিল বেসরকারি সংস্থা। সম্প্রতি বর্ধমান জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ওই বেসরকারি সংস্থাকে গাড়ি মেরামতির পুরো খরচই সুদ-সহ ৪৫ দিনের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিমা সংক্রান্ত দুটি মামলাতেও অভিযোগকারীদের পক্ষে রায় দিয়েছেন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারকরা।
জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল ওই বিমা সংস্থার কাছে গাড়ির বিমা করান রানিগঞ্জের সিহারশোলের রামবাগান এলাকার জয়নারায়ণ সিংহ। এক মাস পর পাটনায় গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আসানসোলের বেশ কয়েকটি কারখানায় গাড়ি সারানোর পরে প্রয়োজনীয় নথি সমেত ওই বিমা সংস্থায় আবেদন করেন জয়নারায়ণবাবু। তাঁর দাবি, কয়েকবার চিঠি চালাচালির পরে ওই সংস্থা জানিয়ে দেয়, দুর্ঘটনার সময় চালকের কাছে বৈধ লাইসেন্স ছিল না। তাই কোনও রকম বিমামূল্য দেওয়া যাবে না। এরপরে গত বছরের ২৯ অগস্ট জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। তবে সমন দেওয়ার পরেও শুনানিতে ওই সংস্থার তরফে কেউ হাজির হননি। গত ২ জানুয়ারি অশোককুমার মণ্ডলের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বিচারকমণ্ডলী ওই বেসরকারি বিমা সংস্থাকে নির্দেশ দেন, পাটনার বাইপাসে মালবাহী গাড়ি দুর্ঘটনার সময় চালকের লাইসেন্স বৈধ ছিল। ফলে ৪৫ দিনের মধ্যে গাড়ির ক্ষতিপূরণ বাবদ সুদ সহ ৮ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৩০ টাকা মিটিয়ে দিতে হবে। ওই সংস্থাকে চার হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়।
দুর্গাপুরের মধুসূদন দত্ত লেনের প্রতিমা মুখোপাধ্যায় দু’বছর আগে চেন্নাইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করান। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি তিনি ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। পরের দিন অস্ত্রোপচারের হয়। তারপরের দিন তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রতিমাদেবীর দাবি, ওই হাসপাতালের ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৪৮৭ টাকা মিটিয়ে দেওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থায় বিমামূল্য ফেরত চেয়ে চিঠি পাঠান তিনি। কিন্তু ১ লক্ষ ৭০০ টাকার চেক দেওয়া হয় তাঁকে। বিমা সংস্থার দাবি ছিল, হাসপাতালের ঘড় ভাড়া, খাওয়া বা পরিষেবা সংক্রান্ত কোনও টাকা দেওয়া যাবে না বলে চুক্তি রয়েছে। ওই বছরেই ৪ ডিসেম্বর ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন প্রতিভাদেবী। আদালত পাওনা ৮৯ হাজার ৭৮৭ টাকা ৬ শতাংশ সুদ সমেত ৪৫ দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন ওই বিমা সংস্থাকে। এ ছাড়া মামলা খরচ ও জরিমানা বাবদ অতিরিক্ত সাত হাজার টাকা দিতে বলা হয়। দুর্গাপুরের ডিএসপি কর্মী সুদীপকুমার ঘোষও তাঁর স্ত্রী সুকৃতি ঘোষের চিকিৎসা বাবদ ২২ হাজার ২০৬ টাকা বিমা সংস্থা দিচ্ছে না বলে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। প্রায় সাত মাস ধরে শুনানি চলার পর কয়েক দিন আগে ওই বিমা সংস্থাকে টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
ওই তিনটে মামলার অভিযোগকারীদের আইনজীবী শুভ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গাড়ি দুর্ঘটনার মামলায় অন্য পক্ষ আদালতে লড়াই করেনি। ফলে এক তরফা ভাবেই বিচারকরা রায় দিয়েছেন। বাকি দু’টি মামলাতেও বিচারকদের পর্যবেক্ষণ আমাদের পক্ষে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy