সকাল থেকে বেরিয়ে সেই রাতে বাড়ি ফেরা। কী ভাবে যে দিন কেটে যেত, বুঝতেই পারতাম না। চার জনের পেট চালানোর মতো রোজগারও হয়ে যেত। কী ভাবে যে আচমকা সব বন্ধ হয়ে গেল, এখনও যেন বুঝে উঠতে পারছি না।
দু’কামরার মাটির ঘরে সংসার। মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে প্রথম শ্রেণিতে। আগে দিনমজুরি করতাম। এখন ভাতার স্টেশনে চা বিক্রি করি। বর্ধমান-কাটোয়া লাইনে ট্রেন বেড়েছে, ভিড়ও বাড়ছে দেখে বছর তিনেক আগে এই কাজ শুরু করি। কাজের ফাঁকে প্রচুর মানুষের সঙ্গে কথা হয়। দিনে পাঁচ-সাতশো টাকার চা বিক্রি হয়। লাভ থাকে একশো-দেড়শো টাকা। তাতেই চার জনের পেট চলে যায়। তার মধ্যে ছেলেমেয়ের পড়ার খরচও জুগিয়ে চলেছি।
করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হতে শুরু করার পরেই লোক কমতে শুরু করে ট্রেনে। তার পরে ‘লকডাউন’ শুরু হয়ে গেল। কেউ বাইরে বেরোয় না। আমিও বেরোচ্ছি না। রোজগারও নেই। ছেলেমেয়ের স্কুল-অঙ্গনওয়াড়ি থেকে চাল-আলু দিয়েছে। তাতে সমস্যা কিছুটা মিটেছে। ধর্মঘটের দিনও চা বিক্রি করতে বেরিয়েছি। কিন্তু এক ভাইরাস সব যেন তছনছ করে দিচ্ছে। অনেকের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, এই ভাইরাস কতটা ক্ষতিকর। তাই আপাতত পেটের চিন্তার থেকে বাঁচার চিন্তাটাই বেশি মাথায় আসছে। বেঁচে থাকলে কষ্ট হলেও খাবার ঠিক জুটে যাবে। দু’বেলা না হোক, এক বেলা তো খেতে পাব। রেশন থেকে বিনামূল্যে চাল দেবে বলে শুনছি। সেটা পেলেও আমাদের মতো অনেকের উপকার হয়।
নিষেধ সত্ত্বেও অবশ্য এখনও অনেককে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখছি। বাড়িতে টিভি নেই বলে ছেলেমেয়ে পড়শির বাড়িতে কার্টুন দেখতে যায়। তবে ওরাও পরিস্থিতিটা আঁচ করছে। তাই কষ্ট হলেও বায়না করছে না কোনও কিছু নিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy