নিয়ম বহির্ভূত ভাবে কলেজ পরিচালনার অভিযোগ উঠেছিল দুই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বিরুদ্ধে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে দুর্গাপুরের বিধাননগরের দুই কলেজের আসন সংখ্যা অর্ধেক করে দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে ‘রিট পিটিশন’ দাখিল করেছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সেই পিটিশন খারিজ করে হাইকোর্ট জানিয়েছে, ওই দুই কলেজের অনুমোদন বাতিল হওয়ার মতো পরিস্থিতি রয়েছে। কলেজের আর্থিক অবস্থা জানতে উপযুক্ত তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট।
দুর্গাপুরের বিধাননগরের শহিদ সুকুমার ব্যানার্জী সরণিতে ‘বেঙ্গল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ (বিসিইটি) গড়ে ওঠে ২০০১ সালে। ২০০৯ সালে শুধু ছাত্রীদের জন্য ‘বেঙ্গল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ফর উইমেন’ (বিসিইটিডব্লিউ) গড়ে তোলেন কর্তৃপক্ষ। নানা কারণে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাওয়ায় ২০১৪ সালে দুই কলেজের শিক্ষকদের একাংশকে স্টেশন থেকে পড়ুয়া ধরে আনার নির্দেশ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এ ছাড়া আরও অভিযোগ ওঠে, কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বেতন মাসের নির্দিষ্ট সময়ে দেওয়া হয় না। আগাম নোটিস ছাড়াই চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলায় কলেজ কর্তৃপক্ষের নজর নেই। প্লেসমেন্ট যথায়থ নয়। এ সব অভিযোগে সেই বছরের অগস্টে আন্দোলন শুরু করেন কলেজ শিক্ষকেরা।
আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় কলেজ কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে প্রায় ৯০ জন শিক্ষককে বরখাস্ত করেন। শিক্ষকদের আন্দোলনকে সমর্থন করায় বেশ কিছু পড়ুয়াকেও ‘সাসপেন্ড’ করা হয়। অন্যায় ভাবে তাঁদের বরখাস্ত করা হয়েছে দাবি তুলে ফের আন্দোলনে নামেন শিক্ষকেরা। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কলকাতায় কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি) সামনে অনশন শুরু করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি’ গড়ার কথা ঘোষণা করা হয়। অনশন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষকেরা। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে দুই কলেজের স্নাতক স্তরের আসন সংখ্যা ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গত বছর জুনে কলেজের চেয়ারম্যান এস কে শর্মা হাইকোর্টে ‘রিট পিটিশন’ দাখিল করেন। কোর্টে অন্তর্বতীকালীন স্থগিতাদেশ পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। আসন সংখ্যা অর্ধেক করতে হয়নি। তবে সম্প্রতি হাইকোর্ট সেই পিটিশন খারিজ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, দুই কলেজের অর্ধেক আসনের অতিরিক্ত ভর্তি নেওয়া পড়ুয়াদের অন্য কোনও উপযুক্ত কলেজে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে। ওই পড়ুয়াদের কাছ থেকে নেওয়া যাবতীয় অর্থ ফেরত দিতে হবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে। এ ছাড়াও হাইকোর্ট জানিয়েছে, ওই দুই কলেজের অনুমোদন পুরোপুরি বাতিল করার মতো পরিস্থিতি রয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের আর্থিক অবস্থা জানতে বিশ্ববিদ্যালয় এবং এআইসিটিই-কে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উপযুক্ত সংস্থাকে দিয়ে ২০০২ সালের ‘মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট’-এর ভিত্তিতে তদন্তের নির্দেশে দিয়েছে আদালত। এক লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে কলেজের চেয়ারম্যানকে।
হাইকোর্টের এই অবস্থানকে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা নিজেদের জয় বলে মনে করছেন। তাঁদেরই এক জন প্রদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘কলেজ কর্তৃপক্ষের অনিয়মের বিরুদ্ধে দু’বছর ধরে আমরা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি। আমরা যে ঠিক পথেই এগিয়েছি, হাইকোর্টের নির্দেশের পরে তা পরিষ্কার।’’ কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অব টেকনিক্যাল এডুকেশন অনুমোদিত আসন সংখ্যার ভিত্তিতে আমরা ভর্তি নিয়েছি। তা এখন কী ভাবে কম করা যেতে পারে, এ কথা জানিয়ে আদালতে ইতিমধ্যে একটি আবেদন করেছি। আদালত যা নির্দেশ দেবে, তা মেনে চলা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy