Advertisement
E-Paper

ফের পাল্টাবে অঙ্ক, আশায় বাম

শিল্পাঞ্চল জুড়ে গজিয়ে ওঠা ঘাসফুলের মাঝে শিল্পাঞ্চলে যে দুই লাল চর জেগেছিল, তাদেরই একটি পাণ্ডবেশ্বর। কিন্তু তার পরে দুই ভোটে অঙ্ক অনেকটা পাল্টে গিয়েছে। বাম-কংগ্রেস জোটের আবহে ফের আশার আলো দেখছে সিপিএম।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০০:৫৭

শিল্পাঞ্চল জুড়ে গজিয়ে ওঠা ঘাসফুলের মাঝে শিল্পাঞ্চলে যে দুই লাল চর জেগেছিল, তাদেরই একটি পাণ্ডবেশ্বর। কিন্তু তার পরে দুই ভোটে অঙ্ক অনেকটা পাল্টে গিয়েছে। বাম-কংগ্রেস জোটের আবহে ফের আশার আলো দেখছে সিপিএম। যদিও উন্নয়নের খতিয়ান এ বার এই আসনও তাদের দখলে আনবে বলে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল।

১৯৬৭ সালে অন্ডাল ও পাণ্ডবেশ্বর ব্লক নিয়ে গঠিত হয়েছিল উখড়া বিধানসভা কেন্দ্র। ১৯৭৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত টানা সেই কেন্দ্র ছিল বামেদের দখলে। ২০১১-তে সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরে লাউদোহা ও পাণ্ডবেশ্বরকে একত্র করে পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা তৈরি হয়। সেই ভোটে তৃণমূলের প্রার্থী জাহির আলমকে প্রায় আট হাজার ভোটে হারিয়ে দেন সিপিএমের গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের ন’টি আসনের মধ্যে সে বার শুধু জামুড়িয়া ও পাণ্ডবেশ্বর আসনেই জয়ী হয়েছিল বামেরা।

কিন্তু দু’বছর পরে পঞ্চায়েত ভোটে সেই জয়ের ধারা সিপিএম ধরে রাখতে পারেনি। সে বার দুর্গাপুর-ফরিদপুর (লাউদোহা) ব্লকের ছ’টি পঞ্চায়েতের সব ক’টিই দখল করে তৃণমূল। পাণ্ডবেশ্বরের ছ’টি পঞ্চায়েতের মধ্যে মাত্র একটিতে জেতে বামেরা। বাকি সবেতেই ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটেও আসানসোল আসনের অন্তর্গত পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভা এলাকায় বামেদের থেকে প্রায় সাড়ে ন’হাজার ভোটে এগিয়েছিল তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় প্রায় ষাট হাজার ভোটে জয়ী হলেও এই এলাকায় তৃণমূল এবং বাম প্রার্থীর থেকে অনেকটাই পিছিয়ে ছিলেন তিনি।

তৃণমূল নেতাদের দাবি, গত বিধানসভা ভোটের আগে সীমানা পুনর্বিন্যাস ঘটিয়ে পাণ্ডবেশ্বর কেন্দ্র তৈরির পিছনে নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের। ২০০৮ সালে পাণ্ডবেশ্বরে ‘জব কার্ড কেলেঙ্কারি’ পরে বাম নেতাদের নাম জড়িয়ে পড়ার পরে উখড়া কেন্দ্রে জেতা নিয়ে সংশয়ে ছিল তারা। সে কারণেই লাউদোহার ভোটব্যাঙ্ককে কাজে লাগিয়ে আসনটি দখল করতে পাণ্ডবেশ্বরের সঙ্গে জুড়ে এই কেন্দ্র গঠন করা হয়। অন্ডাল পঞ্চায়েত এলাকাকে জুড়ে দেওয়া হয় রানিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের সঙ্গে। তৃণমূল নেতাদের দাবি, নতুন বিধানসভা কেন্দ্রে বামেদের জয়ে লাউদোহা এলাকার ভোট বড় ভূমিকা নিয়েছিল। কিন্তু তার পরে পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে মানুষের থেকে সেই সাড়া না পেয়ে এই কেন্দ্রে সিপিএম মুখ থুবড়ে পড়েছে।

পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল নেতা নরেন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘বাম নেতারা বাস্তব পরিস্থিতি আঁচ করতে পারছেন না। ওঁরা বুঝছেন না, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আমূল পাল্টে গিয়েছে। লোকসভা ভোটের হিসেব দেখেই ওঁদের বোঝা উচিত, পাণ্ডবেশ্বর নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখছেন। কী ভাবে মানুষের থেকে দূরে সরে গিয়েছেন ওঁরা নিজেরাও জানেন না।’’ তৃণমূল প্রার্থী জিতেন্দ্র তিওয়ারি শুধু বলেন, ‘‘প্রচারে মানুষের এত সাড়া পাচ্ছি যে জেতা শুধু সময়ের অপেক্ষা।’’

এই আসন ধরে রাখতে অবশ্য সিপিএম মরিয়া। দলের নেতাদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে তৃণমূলের সন্ত্রাসে মানুষ ভোট দিতে পারেননি। এক সিপিএম নেতার দাবি, একে এই এলাকায় তৃণমূল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার। তার উপরে প্রার্থী বহিরাগত হওয়ায় তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ভোটের কিছু দিন আগেই আবার তৃণমূল নেতা নরেনবাবু কলকাতা বিমানবন্দরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ধরা পড়ায় দলের ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে এলাকায়। যার ফায়দা এ বার ভোটে তাঁরা পাবেন বলে মনে করেন সিপিএমের ওই নেতা। সিপিএম প্রার্থী গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এ বারও আমাদের জয় নিশ্চিত। ওরা (তৃণমূল) ভোট লুঠ করার জন্য দুষ্কৃতীদের জড়ো করেছে ঠিকই, তবে তাতে লাভ হবে না। এলাকা ঘুরে দেখছি, মানুষ ওদের প্রতি কতটা বীতশ্রদ্ধ।”

তৃণমূল ও বামেদের সঙ্গে এই কেন্দ্রে লড়াইয়ে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থী জিতেন চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম এবং তৃণমূল, দু’দলের উপরেই মানুষ বিরক্ত। তাই এ বার ভোটারেরা আমাদেরই বেছে নেবেন।’’

state news cpm election result
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy