Advertisement
২৩ মার্চ ২০২৩

প্রকল্পে অর্ধেক জল, বিপাকে পুরসভা

দামোদরের জলস্তর স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক নীচে নেমে যাওয়ায় সঙ্কটের মুখে পড়েছে আসানসোল পুরসভার ডিহিকা জল প্রকল্প। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ক্ষমতার তুলনায় অর্ধেক জলই সংরক্ষণ ও সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। কী ভাবে সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে, ভেবে কূল পাচ্ছেন না পুর কর্তৃপক্ষ।

জলস্তর নেমে যাওয়ায় জেগে উঠেছে পাইপলাইন। ছবি: শৈলেন সরকার।

জলস্তর নেমে যাওয়ায় জেগে উঠেছে পাইপলাইন। ছবি: শৈলেন সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২১
Share: Save:

দামোদরের জলস্তর স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক নীচে নেমে যাওয়ায় সঙ্কটের মুখে পড়েছে আসানসোল পুরসভার ডিহিকা জল প্রকল্প। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, ক্ষমতার তুলনায় অর্ধেক জলই সংরক্ষণ ও সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে। কী ভাবে সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে, ভেবে কূল পাচ্ছেন না পুর কর্তৃপক্ষ। যদিও তাঁদের দাবি, সঙ্কট কাটানোর সব রকম চেষ্টা চলছে।

Advertisement

২০১৩ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ডিহিকা জল প্রকল্পটি থেকে জল সরবরাহ শুরু করা হয়। যদিও এখনও কয়েকটি অঞ্চলে পাইপলাইন না বসায় প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হয়েছে বলা যায় না। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, দামোদরের জল প্রথমে একটি কুয়োয় সংরক্ষণ করা হয়। পরে তা পরিশোধন করে পাম্পের সাহায্যে শহরে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গত বর্ষায় আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় ডিভিসির মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারের জলস্তর অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। ডিভিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য বছর এই সময়ে মাইথনের জলস্তর থাকে প্রায় ১৬৫ ফুট। এ বার তা রয়েছে ৯০ ফুটের আশপাশে। পাঞ্চেতের জলস্তর থাকে ১২৫ ফুট। এ বার তা রয়েছে প্রায় ৭০ ফুটে। ফলে, এই দুই জলাধার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। দামোদরেও জলস্তর নেমে গিয়েছে অনেকটা। তার উপরে নির্ভরশীল ডিহিকা প্রকল্পটিও তাই সঙ্কটে।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়োজনের তুলনায় এই প্রকল্পের জলাধারে জল সংরক্ষণ ও সরবরাহের পরিমাণ প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, প্রকল্পটির কিছু কারিগরি ত্রুটি থাকায় সমস্যা আরও বেড়েছে। তাঁরা জানান, দামোদরের জল তুলে প্রথমে যে কুয়োয় সংরক্ষণ করা হচ্ছে তাতে প্রচুর পলি জমে গিয়েছে। সেটি সাফাই করা দরকার। কিন্তু প্রকল্পটির কারিগরি ত্রুটি থাকায় কুয়ো সাফ করা যাচ্ছে না। তবে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে দাবি করেন পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ পূর্ণশশী রায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রয়োজনীয় পরিমাণ জল সরবরাহ বজায় রাখতে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছি।’’ পাশাপাশি, কর্তৃপক্ষের তরফে পুর নাগরিকদের কাছে জলের অপচয় বন্ধ করার আবেদন জানানো হয়েছে।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০১-এর জনগণনার উপরে ভিত্তি করে আসানসোল পুর এলাকায় পানীয় জলের চাহিদা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ১৬ মিলিয়ন গ্যালন। পুরসভা এলাকায় ওই সময়ে একমাত্র কালাঝরিয়া প্রকল্প থেকে জল সরবরাহ করা হত। তার পরিমাণ ছিল প্রায় ৯ মিলিয়ন গ্যালন। ফলে, আরও প্রায় সাত মিলিয়ন গ্যালন জলের জোগান দেওয়ার দরকার ছিল। সে জন্য শহরে আরও একটি জল প্রকল্প গড়ার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়। তাই কেন্দ্রের জওহরলাল নেহরু আরবান রিনিউয়াল মিশনের আর্থিক আনুকূল্যে দামোদরের পাড়ে তৈরি করা হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকার এই ডিহিকা প্রকল্পটি। জল দফতরের মেয়র পারিষদ পূর্ণশশীবাবুর দাবি, কালাঝরিয়া ও ডিহিকা প্রকল্প দু’টি থেকে পুর এলাকায় জলের চাহিদা প্রায় পুরোপুরি মেটানো সম্ভব হচ্ছে।

Advertisement

যদিও পুরসভার অনেক এলাকার বাসিন্দারাই এই দাবি মানতে নারাজ। বার্নপুরের নরসিংবাঁধ, সুভাষপল্লি, আসানসোলের নিশ্চিন্তা, কাল্লা মোড়, কল্যাণপুরের মতো বহু এলাকার অনেক মানুষজনই দাবি করেন, নিয়মিত জল মেলে না। এই গরমে সেই সমস্যা চরমে উঠেছে। পূর্ণশশীবাবুর অবশ্য দাবি, অনাবৃষ্টি ও জলের যথেচ্ছ অবৈধ সংযোগ নেওয়ার কারণেই এই ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ কাটার অভিযানও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.