Advertisement
E-Paper

গায়ে ক্ষত অভিযুক্তের, তবু ‘ফিট’

গত ১৮ জুন পূর্বস্থলী ২ ব্লকের লক্ষ্মীপুরের সিংহালি এলাকায় নাজমুন্নিসা বিবি নামে এক বছর কুড়ির তরুণীর অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয় তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে। ওই ঘটনায় পুড়ে জখম হন তাঁর স্বামী সাইফুদ্দিন শেখও।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ০২:৩১

স্ত্রীকে খুনে অভিযুক্ত এক যুবকের গায়ের নানা জায়গায় পোড়ার ক্ষত। বিচারকের এজলাসে অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে পেশ করা হয়েছিল। ওই যুবককেই ‘ফিট’ বলে শংসাপত্র দেওয়ায় সোমবার ভরা আদালতে পূর্বস্থলী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসককে ভর্ৎসনা করেন কালনার এসিজেএম কুসুমিকা দে মিত্র।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১৮ জুন পূর্বস্থলী ২ ব্লকের লক্ষ্মীপুরের সিংহালি এলাকায় নাজমুন্নিসা বিবি নামে এক বছর কুড়ির তরুণীর অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয় তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে। ওই ঘটনায় পুড়ে জখম হন তাঁর স্বামী সাইফুদ্দিন শেখও। মৃতার বাপের বাড়ি পূর্বস্থলী থানায় খুনের মামলা দায়ের করে। শনিবার পূর্বস্থলী থানার পুলিশ সাইফুদ্দিনকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করায়। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আদালতে তোলার আগে অভিযুক্তের ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হয়। অথচ এ দিন শরীরের নানা জায়গায় পোড়ার ক্ষত-সহ অসুস্থ সাইফুদ্দিনকেই পুলিশ এজলাসে নিয়ে আসে। এজলাসে ওঠার ক্ষমতাও তাঁর ছিল না। দু’জন কোন রকমে ধরে তাঁকে তুলে দেন কাঠগড়ায়। কথাও বলতে পারছিলেন না ওই যুবক।

এই ঘটনা চোখ এড়ায়নি বিচারকের। যিনি সাইফুদ্দিনকে ‘ফিট’ শংসাপত্র দিয়েছিলেন, সেই পূর্বস্থলী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার শুভ রায় এবং মামলার তদন্তকারী অফিসার রণজিৎ মুখোপাধ্যায়কে সশরীরে সোমবার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন এসিজেএম। বিচারক দুজনকেই কেন এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে লিখিত রিপোর্টও দিতে বলেন। একই সঙ্গে অসুস্থ যুবককে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তির নির্দেশ কালনা উপ-সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়।

এ দিন দু’জনই হাজির হন আদালতে। তাঁরা সঙ্গে আনেন একটি করে রিপোর্ট। তবে রিপোর্টে খুশি হননি বিচারক। ক্ষুব্ধ বিচারক চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, ‘কথা বলতে পারছে না, দাঁড়াতে পারছে না, এমন এক জনকে কী করে ফিট বলে জানিয়ে দিলেন’! নিজে না দেখেই চিকিৎসক রিপোর্ট লিখেছেন কিনা, সে প্রশ্নও তোলেন বিচারক। শুভবাবু দাবি করেন, অভিযুক্তের পুরনো পোড়ার ক্ষত ছিল। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তিনি বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। হাসপাতাল ছেড়ে দেয় ২৭ জুন। শনিবার তাঁকে সক্ষম মনে হয়েছিল। এ কথা জেনে আরও ক্ষুব্ধ হন বিচারক। তিনি জানান, পুরনো ক্ষত ছিল। অথচ সে কথা কেন রিপোর্টে লিখলেন না? শুভবাবুর সঙ্গে কথা বলার সময়ই এজলাসে ডেকে পাঠানো হয় কালনা উপ-সংশোধনাগারের জেলর। তিনি বিচারককে জানান, সাইফুদ্দিনের ডান হাত, পেটের নীচে ও পায়ে ক্ষতচিহ্ন ছিল। অসুস্থ যুবককে ভর্তি করানো হয়েছে কালনা হাসপাতালে। বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করেন পুলিশের ভূমিকাতেও। তদন্তকারী অফিসারের প্রতি তাঁর প্রশ্ন, অসুস্থ অভিযুক্তকে কেন আদালতে নিয়ে এলেন? উত্তরে রণজিৎবাবু বলেন, ‘‘চিকিৎসক ফিট শংসাপত্র দেওয়ায় আদালতে আনা হয়েছিল।’’ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (পূর্বস্থলী ২) মৃণাল হালদার বলেন, ‘‘আদালতে ঠিক কী ঘটেছে, জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

এ দিন এজলাসে কথাবার্তা চলাকালীন হাজির ছিলেন প্রায় ২০ জন আইনজীবী। তাঁদের একাংশ আদালতে দাবি করেন, অনেক সময়ই অভিযুক্তকে পরীক্ষা না করে ফিট শংসাপত্র দিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে।

Doctor Law
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy