Advertisement
E-Paper

প্রতি রাতে শিয়ালকে ভোগ নিবেদন, বর্ধমানের দুর্লভা কালীর মন্দিরে এখন শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা

৩০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আজও সমাধান হয়নি বর্ধমান শহর লাগোয়া লাকুড্ডিতে পূজিতা ‘দুর্লভা কালী’-র উপাসনা ঘিরে থাকা নানা রহস্যকাহিনির। কালীপুজোর আগে জমজমাট সেই মন্দির প্রাঙ্গণ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৩৪
file image

দুর্লভা কালীর মূর্তি। — নিজস্ব চিত্র।

দুর্গম স্থানে তাঁর বাড়ি। তাই নাম দুর্লভা কালী। আবার অন্য মত বলে, দুর্লভ নামের এক পুরোহিত মায়ের আরাধনা করতেন। সেই থেকে নাম দুর্লভা কালী। এক সময় চারপাশে ছিল ঘন জঙ্গল। নিত্য আনাগোনা ছিল হিংস্র জন্তুদের। এখন মন্দিরের পাশ দিয়েই গেছে জাতীয় সড়ক। জঙ্গল অতীত। গা ছমছমে ভাবটাও আর নেই। তবুও, ঐতিহ্য আঁকড়ে আজও দাঁড়িয়ে দুর্লভা কালী। বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে লাকুর্ডি পেরিয়েই এই দুর্লভা কালীর মন্দির।

৩০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। আজও সমাধান হয়নি বর্ধমান শহর লাগোয়া লাকুর্ডিতে পূজিতা ‘দুর্লভা কালী’র উপাসনা ঘিরে থাকা নানা রহস্যকাহিনির। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে অনেক কিছুই। মন্দিরে শিবাভোগ দেওয়ার প্রথা রয়েছে। শিবাভোগ অর্থাৎ শিয়ালকে ভোগ দেওয়া। মন্দিরে আজও সন্ধ্যায় যা রান্না হয়, তা ভোগ হিসাবে দেওয়া হয় শিয়ালকে। কথিত আছে, গোকুলানন্দ ব্রহ্মচারী নামে এক সাধক ঘুরতে ঘুরতে এখানে উপস্থিত হন। এক দিন স্নান করতে গিয়ে তাঁর পায়ে একটি পাথর ঠেকে। সেই রাতেই স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি দেবীকে এখানে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে বর্ধমানের মহারাজার আনুকূল্য লাভ করেন। শোনা যায়, তিনি নাকি মহারাজকে অমাবস্যায় পূর্ণচন্দ্র দেখিয়েছিলেন। এখানে সাধকের পঞ্চমুণ্ডির আসন রয়েছে। রয়েছেন ভৈরবও। পুরনো মূর্তির জায়গায় এখন নতুন মূর্তিতেই নিত্যপুজো হয়। যদিও পুরনো মূর্তিটি এখনও পাশের ঘরে রাখা রয়েছে। দুর্লভা কালী দর্শন করতে বহু দূর-দূর থেকে মানুষ মন্দিরে আসেন। প্রতি বছর কালীপুজোর রাতে হয় প্রচুর ভক্তসমাগম।

Image of the Durlabha Kali Temple

দুর্লভা কালীর মন্দির। — নিজস্ব চিত্র।

প্রবাদ রয়েছে, বর্ধমানের মহারাজা এক দিন জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে দেখতে পান, তালপাতার ছাউনিতে এক সন্ন্যাসী বসে সাধনা করছেন। সেটা ছিল অমাবস্যার রাত। ওই দিন গোকুলানন্দ বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাবকে তাঁর দৈবশক্তি দিয়ে অমাবস্যার রাতে পূর্ণচন্দ্র দেখিয়েছিলেন। মহারাজ মুগ্ধ হয়ে গোকুলানন্দকে ১০ বিঘা জমি এবং মায়ের একটি মন্দির তৈরি করিয়ে দেন। কালীমন্দিরের পাশেই করা হয় তিনটি শিবমন্দিরও।

তবে দেবীর নাম দুর্লভা হওয়া নিয়ে একটি অন্য গল্পও প্রচলিত আছে। বর্তমানে মন্দিরের সেবায়েতরা জানান, গোকুলানন্দের দেহত্যাগের পরে দুর্লভ ভট্টাচার্য নামে এক পুরোহিতকে নিয়োগ করেন রাজা বিজয়চাঁদ। পুরোহিত দুর্লভ ভট্টাচার্যের নামে দেবী এখানে দুর্লভা কালী নামে পরিচিত। সেই পরিবারের সদস্য লক্ষ্মী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দেবী এখানে শ্বেতপাথরের মূর্তিতে পূজিতা হন। তবে দেবীর মূর্তিটি প্রথমে মাটির ছিল। পরে তা অষ্টধাতুর তৈরি করানো হয়। সেই মূর্তিটি চুরি যায়। এর পরে বর্ধমানের মহারাজা বিজয়চাঁদ মহতাব বেলকাঠের মূর্তি তৈরি করিয়ে দেন। কিন্তু সময়ের ফেরে বেলকাঠেও ঘুণ ধরে। এর পর ভট্টাচার্য পরিবারের পক্ষ থেকে সিমেন্টের দেবীমূর্তি তৈরি করানো হয়। বছরখানেকের মধ্যে সিমেন্টের তৈরি মূর্তিতেও ফাটল দেখা দেয়। তার পর ভট্টাচার্য পরিবার রাজস্থান থেকে শ্বেতপাথরের মূর্তি নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করে মা দুর্লভাকে।’’

Kali Puja 2023 East Bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy