সহায়ক মূল্যে ধান কেনায় গতি আনতে ফের বৈঠক হয়ে গেল জেলা পরিষদে। সেখানে ধান বিক্রি করতে গিয়ে চাষিরা যে ধরনের সমস্যায় পড়ছেন, যে সব প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে কোনও পক্ষই সদুত্তর দিতে পারেন নি। এর মাঝেই চাষিরা ধান নিয়ে কিসান মান্ডিতে আসছেন না কেন, সে প্রশ্ন তোলেন খোদ জেলা খাদ্য নিয়ামক, সাধনকুমার পাঠক।
বুধবার বর্ধমান জেলা পরিষদের অঙ্গীকার ভবনে ওই বৈঠকে সাধনবাবু বলেন, “গত সাত দিনে বেশ কয়েকটি কিসান মান্ডিতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, কর্মীরা চেক নিয়ে বসে রয়েছেন, অথচ চাষিদের দেখা নেই। কোথাও দু’টো কুপন তো, কোথাও ১৬টি কুপন পড়ে রয়েছে।” অথচ ধান কেনা নিয়ে প্রশাসনের নানা স্তরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন চাষি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তাঁর প্রশ্ন, কিসান মান্ডিতে গেলে যাতায়াত বাবদ ক্যুইন্টাল প্রতি অতিরিক্ত ১৫টাকা পাবেন চাষিরা, তারপরেও চাষিদের কেন কিসান মান্ডিতে দেখা যাচ্ছে না?
বৈঠকে চালকল মালিক, সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির কর্তা, খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা ছাড়াও জেলা পরিষদের কর্তারা হাজির ছিলেন। তাঁরা জানান, জমি থেকে ধান ওঠার বহু পরে কিসান মান্ডিতে সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হয়েছে। ততদিনে প্রান্তিক চাষিরা বেশির ভাগ ধান ফড়েদের হাতে তুলে দিয়েছেন। তা ছাড়া দূরে হওয়ার জন্যও অনেক চাষি কিসান মান্ডিতে যেতে চাইছেন না। আবার কিসান মান্ডিতে যেতে গেলে চাষির শংসাপত্র জোগাড় করাও একটা সমস্যা বলে তাঁদের মত। খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, সহায়ক মূল্য ধান কেনা নিয়ে জেলার মধ্যে সবচেয়ে সরব কালনা। অথচ এখানকার একটি ব্লকের কিসান মান্ডিতে মাত্র ১১৭ জন চাষি ধান বিক্রি করেছেন। গত জানুয়ারি থেকে হিসেব করলে দেখা যাবে, জেলার ১৭টি কিসান মান্ডি থেকে এখনও পর্যন্ত ৫৪,৫৭৬ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে। খাদ্য নিয়ামক বলেন, “চাষিরা কেন মান্ডিতে আসছেন না, তা সবিস্তারে খোঁজ নিয়ে দেখা দরকার।” এ দিন তিনি অভিযোগ করেন, কালনা ২ ব্লক ছাড়া জেলার আর কোথাও সরকারের এজেন্সিরা ধান কেনার শিবির করেনি। এ নিয়ে বিভিন্ন এজেন্সির কাছে বারবার চিঠি করা হয়েছে, কিন্তু কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। এজেন্সির তরফে শিবির হলে ধান কেনার গতি অনেক বাড়ত বলেও তাঁর মত।
বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্তারা চাইছেন, চালকল মালিকরা আরও বেশি করে সহায়ক মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনুন। আর এই ধান কেনার ব্যাপারে চাল সরু না মোটা দেখার কোনও প্রয়োজন নেই বলেও এ দিন চালকল মালিকদের সাফ জানিয়ে দেন স্বয়ং সভাধিপতি দেবু টুডু। দেবুবাবু বলেন, “আমাদের কাছে খবর আসছে ফড়েরা চাষিদের শংসাপত্র ও পরিচয়পত্র দেখিয়ে চালকলে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করছে। আপনারা পরিচয়পত্র দেখে নিয়ে প্রকৃত চাষির থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কিনুন। এতে ফড়েদের উৎপাত কমবে। আর আপনারা ধানের গুণ বিচার না করে স্রেফ প্রকৃত চাষি কি না দেখে ধান কিনুন।”
আর চালকল মালিকরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার রাজ্য স্তরে একটি বৈঠক হয়ছে, সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে রাজ্য সরকার চালকল মালিকদের কাছ থেকে সরাসরি ‘লেভি’ আদায় করবে না। এর ফলে চালকল মালিকরাও সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্য ধান কিনতে বাধ্য থাকবেন না। বর্ধমান জেলা চালকল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল মালিক বলেন, “আমরা কিসান মান্ডির মাধ্যমে ধান কিনব। কিন্তু যতক্ষণ না রাজ্য সরকার আমাদের কাছ থেকে লেভি নেবে, ততক্ষণ সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান কিনব না। ওই ধান কিনলে আমাদের প্রচুর লোকসান হবে।” সভাধিপতি তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, “প্রকৃত চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনুন। চাষিদের টোকেন অনুপাতে রাজ্য সরকার যাতে লেভি নেয় তার জন্য আমরা চেষ্টা চালাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy