নাজিবুল শেখ। নিজস্ব চিত্র।
ছোট থেকেই দারিদ্রের সঙ্গে আপস করে বড় হওয়া। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই তার মজ্জাগত। তার মধ্যেই কখনও পাড়ার দাদার কাছে বই চেয়ে, কখনও স্কুলের শিক্ষকদের সাহায্যে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে সে। পরিশ্রমের মান রেখেছে সাফল্য। মাধ্যমিকে ৫৬৮ পেয়ে নজর কেড়েছে কাটোয়ার নাজিবুল শেখ।
তবে লড়াইটা নাজিবুলের থেকে বেশি ছিল তার বাবা-মায়ের। ছেলেকে যেন লাঙলের ভরসায় জীবন কাটাতে না হয়, সেই আসায় দিনরাত খেটেছেন তাঁরা। স্কুলের পাশাপাশি সাধ্যমতো গৃহশিক্ষকও রেখেছেন। বাবা-মায়ের ঘামের দাম দিয়েছে ছেলেও। তিন ভাই বোনের মধ্যে মেজ নাজিবুল পরিবারের প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। ছেলের মাধ্যমিকে ৮১ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়াটাই মা-বাবার কাছে আকাশ ছোঁয়ার সামিল। মাটির বাড়িতে পাঁচ জনের সংসারে গাদাগাদি করে কী ভাবে যে ছেলেটা পড়াশোনা করল, সেটাই ভেবে পান না তাঁরা। কাটোয়া জানকীলাল শিক্ষা সদনের ছাত্র নাজিবুল জানায়, রোজ হরিপুর থেকে দু’কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেত সে। স্কুল থেকে সাইকেলটা পাওয়ার আগে ভ্যান বা বাসেই যাতায়াত করতে হতো। তবুও স্কুল কামাই করত না। নাজিবুলের বাবা রুস্তম শেখ চাষবাস করেই সংসার চালান। পড়াশোনা না জানলেও ছেলের পড়ার জন্য সবরকম চেষ্টা করে গিয়েছেন তিনি। পড়ার ফাঁকে বাবাকে সাহায্য করত নাজিবুলও। মা ফতেমা বিবি বলেন, ‘‘বরাবরই স্কুলে প্রথম হতো আমার মেজ ছেলে। ছোট থেকেই পড়াশোনার দিকে ঝোঁক। আমরা গরিব মানুষ। ছেলেকে সেভাবে পড়াতে পারিনি। তবে ও আরও নম্বর আশা করেছিল।’’ নাজিবুলও বলে, ‘‘৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে যাব ভেবেছিলাম। উচ্চ মাধ্যমিকে আরও খাটব।’’
মেজ ভাইয়ের পড়ার খরচ জোগাতে গিয়ে দাদার পড়া হয়নি। মাধ্যমিক দেওয়ার পর থেকে সংসারের হাল ধরার জন্য তিনি রাজমিস্ত্রি। এখন ভাইয়ের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নই তাঁরও স্বপ্ন। নাজিবুল জানায়, গৃহশিক্ষকের কাছে অঙ্ক, ইংরেজি পড়ত সে। ভৌতবিজ্ঞান বিনা পারিশ্রমিকেই দেখিয়ে দিতেন আর এক শিক্ষক। কিন্তু এ বার লড়াই আরও কঠিন। ডাক্তারি পড়ার খরচের কথা ভেবে এখন থেকেই চিন্তার ভাঁজ তার কপালে। তবে নাজিবুলের মেরুদন্ড তার পরিবারই। দিনরাত খেটে ছেলের স্বপ্নে অক্সিজেন জোগাচ্ছেন তাঁরা। একটাই আশা, পরের প্রজন্মকে যেন লাঙলের ভরসায় দিন কাটাতে না হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy