ট্রান্সফর্মার ফেটে আগুন লাগল বর্ধমান শহরের কাছেই পালিতপুরের একটি ফেরো অ্যালয় কারখানায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে কারখানার দোতলায় থাকা একটি ট্রান্সফর্মার ফেটে বিপত্তি ঘটে। মূ্হুর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে যায় কারখানার একাংশে। পরে দমকলের সাতটি ইঞ্জিন প্রায় চার ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। অগ্নিসংযোগের কারণ খতিয়ে দেখতে ওই কারখানায় যান মহকুমাশাসক (বর্ধমান সদর) মুফতি শামিম সওকত। তাঁর কাছ থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পরে সন্ধ্যায় কারখানা পরিদর্শন করেন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন ও জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল। কারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দমকল।
দমকল ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া রোড থেকে সিউড়ি রোডে যাওয়ার বাইপাস রাস্তার উপর পালিতপুরে দশ বছর আগে ওই কারখানাটি তৈরি হয়েছিল। চার তলার এই কারখানায় দোতলার একটি ট্রান্সফর্মার এ দিন বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ ফেটে যায়। আগুন ছিটকে পাশের ট্রান্সফর্মারেও অগ্নিসংযোগ ঘটে। পরপর দুটি ট্রান্সফর্মারে আগুন লেগে যাওয়ার পরে দোতলায় মজুত করা প্রচুর কেবল পাইপ-সহ দাহ্য পদার্থ ফাটতে থাকে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে কারখানার ভিতরে। দমকলের বিভাগীয় আধিকারিক (দুর্গাপুর) তুষারকান্তি সেন বলেন, “কারখানাটি চারতলার। দোতলায় পাশাপাশি দুটি ট্রান্সফর্মার ছিল। একটি ট্রান্সফর্মার থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে বলে আমাদের ধারণা। হতাহতের কোনও খবর নেই।” তিনি জানান, বর্ধমান ছাড়াও দুর্গাপুর, পানাগড়, ভাতার থেকে দমকলের ছোট ও বড় মিলিয়ে সাতটি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার চেষ্টা করে।
ওই কারখানার কর্মী বাপি রায় ও শেখ আনোয়াররা বলেন, “আমরা কারখানার ভিতর কাজ করছিলাম। হঠাৎ দেখি কারখানার দোতলা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। ট্রান্সফর্মার ফাটার আওয়াজ পেতেই আমরা সবাই ভয়ে কারখানা ছেড়ে বেরিয়ে আসি। দমকলকে খবর দেওয়া হয়।” ওই কারখানার কর্মীরাই প্রথমে জলাধার থেকে জল নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। বর্ধমান ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ফাল্গুনী রজক বলেন, “আমি আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধ্যে কারখানায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি, দমকলের একটি ইঞ্জিন ও কিছু শ্রমিক আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর দেখে জেলাশাসক ও দমকলে খবর দিই।’’
পুলিশ ও দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে প্রশাসনিক কর্তাদের ধারণা, খুব বেশি হলে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে পারে ওই কারখানা কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যায় জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার কারখানার কর্মী ও দমকলের বর্ধমানের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। দমকলের বর্ধমানের ওসির কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্টও চাওয়া হয়। দমকলের দাবি, প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরে কারখানায় অগ্নিসুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা ছিল বলেই মনে করছেন না তাঁরা। এমনকী, দমকলের ‘নো অবজেকশন’ শংসাপত্র ওই কারখানার ছিল না বলে কর্তারা জানিয়েছেন। যদিও সংস্থার কর্তা আর পি দ্বিবেদীর দাবি, তাঁদের কাছে সব নথি রয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে চাননি তিনি।