ভোল বদলাবে এই রাস্তার। মেহেদিবাগানে তোলা নিজস্ব চিত্র।
গত ডিসেম্বরে রাস্তা সৌন্দর্যায়নের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল পুরসভা। কিন্তু বাদ সাধেন দলেরই তৎকালীন মন্ত্রী। ভোটের আগে হকার ও ব্যবসায়ীরা বিগড়ে যেতে পারেন এই আশঙ্কায় তাঁর নির্দেশেই কার্যত হিমঘরে চলে যায় ওই পরিকল্পনা। ভোট মিটতেই ফের নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে বর্ধমান শহরের ভেতর দিয়ে যাওয়া জিটি রোডের সৌন্দর্যায়ন নিয়ে।
মঙ্গলবার দুপুরে জেলাশাসক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ ও প্রশাসনের অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকে বসেন পুরকর্তারা। জানা গিয়েছে, বীরহাটা থেকে বর্ধমান স্টেশন পর্যন্ত জিটি রোডের সৌন্দর্যায়নের কাজ ফের কী ভাবে ও কবে থেকে শুরু হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। যদিও পুরপ্রধানের সঙ্গে বিধায়কের আকচা-আকচি এ বারেও সামনে এসে গিয়েছে। সভায় তাঁকে ডাকা হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। যদিও পুরপ্রধান স্বরূপ দত্তের দাবি, তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
দু’দিন আগেই শহরের টাউন হলে দলের একটি বৈঠকে উন্নয়ন বা সৌন্দর্যায়নের ব্যাপারে বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে চলার জন্য পুরপ্রধানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস। তার মধ্যেই আবারও বিধায়ককে না ডাকার বা উপেক্ষা করার অভিযোগ উঠে গেল পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে। যদিও পুরপ্রধান বলেন, “বিধায়ককে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি এখন এ রকম কথা বলছেন কেন বুঝতে পারছি না।”
গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ওই রাস্তা সৌন্দর্যায়নের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে পুরসভা। দফায় দফায় রাস্তার উপর স্থায়ী ও অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন পুরসভার কর্তারা। প্রস্তাবে রাজিও হয়ে গিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ীরা। সেই মতো ২৩ জানুয়ারি থেকে পুরসভার জারি করা নিয়মনীতি ব্যবসায়ীদের মানতে হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পুরসভার পরিকল্পনা ছিল, প্রথমে রাস্তা পরিষ্কার করা হবে। তারপরে ধাপে ধাপে সৌন্দর্যায়ন করা হবে। কিন্তু গোটা পরিকল্পনায় বাদ সাধেন রবিরঞ্জনবাবুর একটি নির্দেশ। ভোটের আগে এই সৌন্দর্যায়নে হিতে বিপরীত হতে পারে এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি তথা তৃণমূলের তৎকালীন মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়। পুরকর্তা ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের তিনি নির্দেশ দেন, এখন সৌন্দর্যায়নের কোনও প্রয়োজন নেই। এতে শুধু টাকা খরচ হবে। বিধায়কের দাবি ছিল, বর্ধমান উন্নয় পর্ষদ এক বছর আগে শহর সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছিল। কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে পরিকল্পনা-চিত্র করা হয়েছিল। ৮ কোটি টাকা খরচ করা হবে বলে ওই সংস্থা জানিয়েছিল। কাজ শুরুর আগে পূর্ত দফতরের অনুমতি নিতে গিয়ে জানা যায়, পুরসভা জিটি রোড চওড়া করার পরিকল্পনা নিয়েছে। পূর্ত দফতর কী করতে চাইছে দেখে নিয়ে কাজ শুরু করার জন্যই ওই সৌন্দর্যায়ন কর্মসূচি স্থগিত রাখার জন্য বলেছিলেন তিনি। যদিও পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত তা মানতে চাননি। তিনি জানিয়েছিলেন, মৌখিক আলোচনায় হকারেরা আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন। ফলে টাকা নষ্ট বা ক্ষোভের কোনও জায়গা ছিল না।
এখন অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। ভোট শেষ। রবিরঞ্জনবাবুও বিধায়ক হলেও বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি নন। এই ফাঁকেই পুরসভা জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে জিটি রোডের দু’ধারে সৌন্দর্যায়নের কাজ দ্রুত সঙ্গে শেষ করতে চাইছে বলে জানাচ্ছেন পুরসভার একাংশ কর্মীরাই। পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত বলেন, “ওই সময় বিধায়ক কেন বাধা দিয়েছিলেন, সেটা সবাই জানেন, বোঝেন। এখন তাঁর উদ্দেশ্য সফল হয়ে ভোট-বৈতরণী পার করে গিয়েছেন। এ বার জনগনের ইচ্ছেকে সম্মান জানানোটাই আমাদের কাজ। সেই লক্ষ্যেই জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ফের সৌন্দর্যায়নের প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে।”
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, এ দিনের বৈঠকে আগের সিদ্ধান্তগুলোই কার্যকর রয়েছে। যেমন, জিটি রোডের দু’ধারে প্রকাশ্যে মাংস কাটা নিষিদ্ধ করা হবে। যত্রতত্র থুতু ফেললে জরিমানা আদায় করা হবে। কার্জন গেট সংলগ্ন এলাকাকে হকারমুক্ত অঞ্চল করাও পুরসভার উদ্দেশ্য। এ ছাড়াও রাস্তার উপর যে দোকানগুলি রয়েছে তার সামনে ৫ ফুট করে জায়গা ছেড়ে রাখতে হবে। যেখান-সেখান জঞ্জাল ফেললে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হবে। এ ছাড়াও ২৪০ জন হকারকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধে দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যবিমাও করানো হবে। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “পুরসভার উদ্যোগে প্রশাসন পাশে রয়েছে। সৌন্দর্যায়ন হলে শহরটাকে দেখতে ভাল লাগবে। বহিরাগতরাও প্রাচীন ও ঐতিহ্যশালী এই শহরের প্রশংসা করবেন।”
আর গতবার যিনি বাধা হয়েছিলেন সেই রবিরঞ্জনবাবু কী বলছেন? তাঁর কথায়, ‘‘রাস্তা চওড়া হবে বলে তখন বলেছিলাম টাকা নষ্ট করে লাভ কী? এখন নতুন করে সৌন্দর্যায়নের উদ্যোগের কথা আমাকে কেউ জানায়নি। এ বার পুরসভা বুঝবে।” পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত অবশ্য এ সবে পাত্তা না দিয়ে জোর গলায় বলছেন, ‘‘এ সপ্তাহ থেকেই নির্দেশগুলো কার্যকর হয়ে যাবে। পুজোর আগে কাজ শেষ করে শহর নতুন ভাবে সেজে উঠবে।’’
তবে না আঁচালে বিশ্বাস নেই শহরবাসীর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy