পান গুমটিতে দেদার বিকোচ্ছে গুটখা। নিজস্ব চিত্র
রাজ্য সরকার পাঁচ বছর আগে গুটখা বিক্রি বন্ধের নির্দেশিকা জারি করেছিল। কিন্তু গুটখা বিক্রি বা গুটখা সেবন, কোনওটাই বন্ধ হয়নি শিল্পাঞ্চলে। যদিও বিক্রেতাদের দাবি, গুটখা আর বিক্রি হয় না। পানমশলা বিক্রি হয়।
এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, রাস্তার ধারের গুমটিগুলিতে থরে থরে ঝুলতে দেখা যায় রকমারি ছোট প্যাকেটের সারি। ক্রেতার তালিকায় কমবয়সি থেকে প্রবীণ সবাই রয়েছেন। দু’টি করে প্যাকেট কেনেন তাঁরা। একটিতে থাকে জর্দা। অন্যটিতে পানমশলা। এরপরে পানমশলার প্যাকেটে জর্দা মিশিয়ে পুরোটাই মুখের ভিতরে চালান করে দেন ক্রেতারা। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, মুখের ভিতরে এক ধরনের আবরণ থাকে। কিন্তু, এই মিশ্রণ সেই আবরণের উপরে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। সাদা-কালো দাগ হতে থাকে। যা, ক্যানসারের প্রাথমিক পর্যায়। এর ফলে, মুখগহ্বরের স্বাভাবিক সংকোচন-প্রসারণ বিঘ্নিত হয়। দীর্ঘদিন এমন হলে ধীরে ধীরে তা ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। মুখ, গলা, পাকস্থলী, খাদ্যনালী ও ফুসফুসে ক্যানসার হতে পারে। পাশাপাশি, যাঁরা এই মিশ্রণ মুখে নেন তাঁরা কিছুক্ষণের মধ্যেই যেখানে সেখানে থুথু ফেলতে শুরু করেন। এ ভাবেই বিভিন্ন সরকারি অফিস-কাছারির দেওয়ালে, শৌচাগারের বেসিনে লাল ছোপ ধরে গিয়েছে। এমনকী চলন্ত বাস বা যানবাহন থেকে থুথু ফেলায় তা পথচারীর গায়ে লাগার ঘটনাও ঘটে।
বিক্রেতারা অবশ্য জানাচ্ছেন, গুটখা আগে বিক্রি হতো। সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর থেকে আর বিক্রি হয় না। যে সংস্থা গুটখা তৈরি করত তারাই আর পাঠায় না। দুর্গাপুর স্টেশন সংলগ্ন বাজার এলাকার এক গুমটির মালিক রাকেশ ভকত বলেন, ‘‘আগে গুটখা বিক্রি হতো। সরকার বন্ধ করে দেওয়ার পরে আর বিক্রি হয় না। এখন পানমশলা বিক্রি হয়।’’ তবে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, আইনের ফাঁক গলেই গুটখার ব্যবহার চলছে রমরমিয়ে।
কীভাবে? সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, ২০১৩ সালের মে মাসে রাজ্যে ‘তামাক মিশ্রিত পানমশলা’ বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আগে পানমশলা ও জর্দা একসঙ্গে মিশিয়ে একটি প্যাকেটেই গুটখা হিসেবে বিক্রি হতো। প্যাকেটের গায়ে ‘গুটখা’ শব্দটি লেখাও থাকত। এখন গুটখা উৎপাদন সংস্থাগুলি পানমশলা বানায়। আলাদা প্যাকেটে বিক্রি হয় জর্দা। বিক্রেতারা পাশাপাশি দু’টি প্যাকেটই রাখেন। ক্রেতারাও একসঙ্গে দু’টি প্যাকেট কিনে মিশিয়ে নেন। এ ভাবেই ঘুরপথে চলছে গুটখা’র রমরমা কারবার। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞার পরে কিছুটা হলেও যে, বিক্রি কমে গিয়েছে বলে দাবি বিক্রেতাদের। তাঁদের কথায়, ‘‘আগে একটি প্যাকেটেই কাজ হতো। এখন দু’টি প্যাকেট কিনে তা কেটে মেশাতে হয়। এই হ্যাপা এড়াতে অনেকে গুটখা খাওয়া ছেডে় দিয়েছেন। তা ছাড়া, প্রশাসনের ধরপাকড়ের ভয়ও রয়েছে। তবে ক্রেতারা সচেতন না হলে বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ কখনই হবে না।’’
মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা বলেন, ‘‘স্কুল ও ব্লকস্তরে বেশ কয়েকবার সচেতনতা শিবির করা হয়েছে। এই ধরনের শিবিরের সংখ্যা বাড়ানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy