Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Hasan Azizul Haque

Hasan Azizul Huq: ছেলেবেলার গ্রাম ছুঁয়েই ছিলেন আজিজুল

২০০৮ সালে আনন্দ পুরস্কার নিয়ে মঙ্গলকোটের যবগ্রামে ছেলেবেলা ছুঁতে এসেছিলেন কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। সেই শেষ।

সাহিত্যিকের ছবি, বই হাতে শোকাতুর পরিজনেরা।

সাহিত্যিকের ছবি, বই হাতে শোকাতুর পরিজনেরা। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা 
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৫০
Share: Save:

পাখি কাঁটাতার মানে না। ‘আগুনপাখি’ও তেমনই।

২০০৮ সালে আনন্দ পুরস্কার নিয়ে মঙ্গলকোটের যবগ্রামে ছেলেবেলা ছুঁতে এসেছিলেন কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। সেই শেষ। সোমবার রাতে তাঁর প্রয়াণের খবর পান বাল্যকালের বন্ধু, আত্মীয়েরা। তাঁর এক নাতনি জেসমিনা বেগমের কথায়, ‘‘বিখ্যাত মানুষ বা লেখক নন, দাদু হিসেবেই মিশতেন উনি। গ্রামের সবার খবর নিতেন। তাঁর বই, অন্যদের বই পড়েছি কি না, জানতে চাইতেন। বই থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলতেন। আর পছন্দ করতেন বাড়ির রান্না, চা।’’

এ বঙ্গের পাঠকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসের আগে থেকেই। ১৯৬০ পর্যন্ত ভারতেই নাগরিক ছিলেন তিনি। এখনও তাঁর বহু ছাত্রছাত্রী রয়েছেন ওই গ্রামে। রয়েছেন বন্ধুরা। গ্রামে গেলে সেই সব ঘরেই পা পড়ত তাঁর। স্কুলের পাশের পুকুর থেকে সাঁতরে পানিফল আনা, ডোবা থেকে ছিপ ফেলে মাছ ধরা, বাজি ধরে সাঁতার কাটার কথা মনে করে চোখ ভিজে যাচ্ছে তাঁদের।

প্রাক্তন শিক্ষক ও নাট্যকার রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ১১ বছর বয়স থেকে বন্ধুত্ব তাঁর। ‘অচেনা হাসান আজিজুল হক’ নামে রঞ্জিতবাবুর একটি বই-ও প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘গত ফেব্রুয়ারিতেই বইটা বেরিয়েছে। দু’বার রাজশাহিতে ওঁর বাড়ি গিয়েছি। আর যবগ্রাম এলে তো আমরা সর্বক্ষণের সঙ্গী। অনেক স্মৃতি ভিড় করে আসছে।’’

যবগ্রামের স্কুল থেকেই ১৯৫৪ সালে ম্যাট্রিক দিয়েছিলেন হাসান আজিজুল। তার পরে ও পারে যান। কিন্তু সে যাওয়া একেবারে চলে যাওয়া নয়। রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়ে অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে ফিরে আসেন নিজের স্কুলেই। ২০০৮ সালে এসেও স্কুলবাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর জেঠতুতো দাদা নুরুল হক মোল্লা জানান, পুরনো ভিটে আর নেই। আত্মীয়দের বাড়িতেই উঠতেন। ছোটবেলায় রাতভর গল্প করবেন বলে লুকিয়ে বন্ধুদের বাড়িতে ঢোকাতেন। তাঁর মনে পড়ে, ‘‘ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা থেকে চাষবাস, সব কথা জিজ্ঞাসা করতেন। ভাসবাসতেন ঘরে ভাজা মুড়ি, খই খেতে।’’ এ দিন স্কুলে তাঁর স্মৃতিচারণ হয়। শিক্ষাকর্মী অংশুমান পাল বলেন, ‘‘ওঁকে ভোলা সম্ভব নয়।’’

তাঁর লেখায় বরাবর বদলে যাওয়া জীবন, বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কথা উঠে এসেছে। বহু মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তিনি। কাটোয়া মহকুমা গ্রন্থাগারের সম্পাদক তুষার পণ্ডিত বলেন, ‘‘ব্যক্তির মৃত্যু হলেও তাঁর সৃষ্টি অমর। মানুষ হিসেবে, লেখক হিসেবে উনি আমাদের মনে থাকবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hasan Azizul Haque
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE