Advertisement
০৫ মে ২০২৪

স্কুলের পথে ফাঁকা খুদের মাথা

রাজ্য জুড়ে প্রচার চলছে, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’। হেলমেট ছাড়া পেট্রোল দেওয়া হবে না, পাম্পগুলিতে এমন নিয়ম জারি হয়েছে। তবে তার পরেও যে সবার হুঁশ ফিরেছে, তেমনটা নয়।

বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের রাস্তায়।ছবি:বিকাশ মশান

বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের রাস্তায়।ছবি:বিকাশ মশান

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর ও আসানসোল শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:১৯
Share: Save:

রাজ্য জুড়ে প্রচার চলছে, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’। হেলমেট ছাড়া পেট্রোল দেওয়া হবে না, পাম্পগুলিতে এমন নিয়ম জারি হয়েছে। তবে তার পরেও যে সবার হুঁশ ফিরেছে, তেমনটা নয়। অনেক মোটরবাইক আরোহী নিজেরা তো বটেই, এমনকী কচিকাঁচাদেরও মাথা ফাঁকা রেখে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কলকাতার এক স্কুলের অধ্যক্ষা নিজে দাঁড়িয়ে থাকছেন স্কুলের গেটে। হেলমেট ছাড়া অভিভাবকের মোটরবাইকে চড়ে আসা পড়ুয়াদের পত্রপাঠ ফিরিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন আসানসোল-দুর্গাপুরের নানা স্কুল কর্তৃপক্ষ। এমন কোনও ব্যবস্থার কথা তারাও ভাবছে, জানিয়েছে কিছু স্কুল।

সকাল হোক বা দুপুর, শিল্প শহরের যে কোনও প্রধান রাস্তায় দাঁড়ালেই নজরে পড়ে, মোটরবাইকে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দিচ্ছেন বাবা-মা। আগে তো সবার মাথাই ফাঁকা থাকত। এখন কড়াকড়ির জেরে অভিভাবকের মাথায় হেলমেট উঠলেও বেশির ভাগ খুদের মাথাতেই তা থাকে না। একটু উঁচু ক্লাসের ছেলেমেয়েরা বিনা হেলমেটে স্কুটি চালাচ্ছে, এমন ছবিও দেখা যায়।

বার্নপুরের রিভারসাইড স্কুলের অধ্যক্ষ সুশীল সিংহ জানান, তাঁরা ইতিমধ্যে স্কুলের পড়ুয়াদের পরিবহণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক কর্মশালা করেছেন। সেখানে আলোচনা হয়েছে, স্কুটার বা মোটরবাইক চালানোর সময়ে হেলমেট পরতেই হবে। সুশীলবাবু বলেন, ‘‘কলকাতার স্কুলটির উদ্যোগ চমৎকার। আমিও পরের অভিভাবক-সভায় প্রত্যেকের কাছে মোটরবাইক বা স্কুটার চালানোর সময়ে হেলমেট পরার অনুরোধ করব।’’ তিনি আরও জানান, স্কুলের পথে প্রত্যেক অভিভাবক ও পড়ুয়াকে হেলমেট পরার পরামর্শ দিতে শুক্রাবারই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।

আসানসোল কলেজিয়েট স্কুলের টিচার ইন-চার্জ ঋত্বিক হোমরায় জানান, তাঁরা এ বিষয়ে স্কুলে আগেই একটি সাধারণ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। তবে অভিভাবকদের সতর্ক করার বিষয়টি আগে ভাবেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রত্যেক অভিভাবকের কাছে আবেদন জানাতে শুরু করব।’’ তিনি জানান, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কোনও পড়ুয়াকেই তাঁরা স্কুটার বা মোটরবাইক নিয়ে স্কুলে আসার অনুমতি দেন না। তবে অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসেন। এ বার তাঁরাও হেলমেট ব্যবহার করছেন কি না দেখা হবে।

আসানসোলের মনিমালা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুলেখা মাজি বলেন, ‘‘কলকাতার স্কুলটির উদ্যোগ থেকে আমরা শিক্ষা নিলাম।’’ শুক্রবার থেকেই স্কুলে এ ব্যাপারে নোটিস ও প্রত্যেক ক্লাসের শুরুতেই শিক্ষিকারা ছাত্রীদের নিয়মের কথা মনে করিয়ে দেবেন বলে জানান তিনি। আসানসোলের চেলিডাঙা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশিসকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরা অভিভাবকদের আগেও হেলমেট পরে চলার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু অনীহাই হোক বা সচেতনতার অভাব, অভিভাবকেরা অনেকেই তা মেনে চলছেন না। ফের বিজ্ঞপ্তি দেবেন বলে জানান তিনি।

দুর্গাপুরের ডিএভি মডেল স্কুলের অধ্যক্ষা পাপিয়া মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন সময়ে পড়ুয়াদের মাধ্যমে অভিভাবকদের এ ব্যাপারে নির্দেশিকা পাঠিয়ে থাকি। এ ছাড়া স্কুলে ঢোকা-বেরনোর সময়ে মাঝে-মাঝে শিক্ষক ও স্কুলের কর্মীরা পরীক্ষা করেন।’’ এমএএমসি মডার্ন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তরুণ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কলকাতার স্কুলটির মতো কোনও পদক্ষেপের কথা আমাদের স্কুলের জন্যও ভাবতে পারি।’’ কমলপুরের গোয়েঙ্কা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুব ভাল উদ্যোগ। অভিভাবকদের সচেতন করা এবং পড়ুয়াদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা নেব।’’

বৃহস্পতিবার হেলমেট না পরিয়ে বাচ্চাকে মোটরবাইকে চড়িয়ে স্কুলে পৌঁছে দিতে আসা এক অভিভাবক বলেন, ‘‘এতটা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি ভাবিনি। কলকাতার স্কুলে যে ভাবে ক্লাস করতে না দেওয়ার নিয়ম চালু হয়েছে তা প্রশংসনীয়। হেলমেট পরার অভ্যাস তৈরি হবে।’’ প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলেকে প্রতিদিন স্কুলে দিয়ে আসেন বি-জোনের ইন্দ্রনাথ ভৌমিক। তিনি বলেন, ‘‘সবথেকে অবাক হই যখন দেখি বাবার মাথায় হেলমেট, অথচ খুদের মাথা ফাঁকা। সবাইকে সচেতন হতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Helmetless risk
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE