Advertisement
০৫ মে ২০২৪
নজরে বর্ধমান

শ্বশুরবাড়ি যাবে কিশোরী, রায়ে ক্ষুব্ধ হাইকোর্ট

অপহরণের অভিযোগ করেছিল মেয়েটির পরিবার। সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মেয়েটিও স্বীকার করেছিল, সে নাবালিকা। আবার নিজের মুখেই জানিয়েছিল, সে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে। তার পরেও তাকে শিশুকল্যাণ কমিটির কাছে না পাঠিয়ে কী করে ‘শ্বশুরবাড়িতে’ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে নিম্ন আদালত, কী করেই বা মূল অভিযুক্তের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছে— সে প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৩০
Share: Save:

অপহরণের অভিযোগ করেছিল মেয়েটির পরিবার। সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মেয়েটিও স্বীকার করেছিল, সে নাবালিকা। আবার নিজের মুখেই জানিয়েছিল, সে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে। তার পরেও তাকে শিশুকল্যাণ কমিটির কাছে না পাঠিয়ে কী করে ‘শ্বশুরবাড়িতে’ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে নিম্ন আদালত, কী করেই বা মূল অভিযুক্তের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছে— সে প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট।

বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া ও দেবীপ্রসাদ দে-কে নিয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, ‘১৬ বছরের মেয়ে কী করে আইনের চোখে বিবাহিত হয়?’ গত বুধবার ওই মামলার রায়ে ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের দেওয়া মূল অভিযুক্তের (মেয়েটির ‘বর’) আগাম জামিনও নাকচ করে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছে, ওই নাবালিকাকে দ্রুত তদন্তকারী অফিসারের কাছে পেশ করতে হবে। হাইকোর্টে এই মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী অরূপ কুমার মণ্ডলের দাবি, “ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, নাবালিকা বিয়ের মতো আইনবিরুদ্ধ কাজকে জেলা আদালত আইনসিদ্ধ করে তুলেছে। সে জন্য ওই রায়ের প্রতিলিপি (আনন্দবাজারের কাছে রয়েছে) জেলা আদালতে পাঠিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।”

পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত বছর অগস্টে পড়তে যাওয়ার সময় মেমারির একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। প্রথমে নিখোঁজ ডায়েরি করলেও পরে বাঁকুড়ার খাতড়ার একটি পরিবারের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয় মেমারি থানায়। অভিযোগের ভিত্তিতে নিখোঁজ ছাত্রীর ‘ননদ’কে প্রথমে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পরে ‘শ্বশুরবাড়ি’র লোকেরা লোকজন জুটিয়ে মেয়ের বাড়ি ভাঙচুর করে জানিয়ে ফের মেমারি থানায় পৃথক মামলা হয়। পুলিশ এ বার অভিযুক্ত যুবকের বাবাকে গ্রেফতার করে। বাবা-মেয়ে দু’জনেই আপাতত জেল হাজতে। তার পরেই ওই যুবক আগাম জামিনের জন্য জেলা আদালতে আবেদন করেন। বিচারক মেমারি থানাকে গত ৩ জানুয়ারি কেস ডায়েরি-সহ অন্যান্য নথি জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। ওই দিন আগাম জামিনের শুনানি চলাকালীন ‘নিখোঁজ’ ছাত্রীটি জেলা আদালতে হাজির হয়ে স্বেচ্ছায় বিয়ে করা এবং সে ‘শ্বশুরবাড়ি’তেই থাকার ইচ্ছার কথা জানায়।

জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর সুব্রত হাটি বলেন, “মেয়েটির জন্ম ২০০০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। সে যে নাবালিকা, তার উল্লেখ ছিল কেস ডায়েরিতে। ওই প্রসঙ্গ তুলে অভিযুক্ত যুবকের আগাম জামিনের বিরোধিতা করেছিলাম। তার পরেও তার আগাম জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।’’

অন্য দিকে, নিজের মেয়ের খোঁজ না মেলায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির এজলাসে মামলা করেন তার মা। ওই মামলা চলাকালীন আইনজীবীরা জানান, বর্ধমানের জেলা আদালতের নির্দেশে ৩ জানুয়ারি আগাম জামিন পেয়ে গিয়েছেন তাঁর মক্কেল। ওই জামিন নাকচের জন্য ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করে মেয়েটির পরিবার। অভিযোগকারীর আইনজীবী ধনঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেলা আদালতে গিয়ে মেয়েটি জানিয়েছিল, সে নাবালিকা। এই মর্মে হলফনামাও দেয়। তার পরেও আশ্চর্যজনক ভাবে অভিযুক্তের আগাম জামিন মঞ্জুর হয়। হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, জেলা আদালত ওই মেয়েটির পরিচয়পত্র কিংবা বয়সের প্রমাণ দেখেনি। সে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে, এই বিষয়টিই প্রাধান্য পেয়েছে।’’

অভিযুক্ত যুবকের আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘কেন মেয়েটির হলফনামাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে ক্ষোভ করেছে হাইকোর্ট।’’

এই প্রসঙ্গ তুলে নিজেদের রায়ে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, কেস ডায়েরির তিন নম্বর পাতায় মেয়েটির বয়সের শংসাপত্র দেওয়া রয়েছে। মেয়েটি নাবালিকা হওয়ায় তার গোপন জবানবন্দি নিয়ে তাকে শিশুকল্যাণ কমিটির কাছে পাঠানো উচিত ছিল জেলা আদালতের। শিশুকল্যাণ কমিটি গোটা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে মেয়েটিকে কোনও সরকারি হোমে অথবা অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিত। এ ক্ষেত্রে সেই পদ্ধতি মানা হয়নি।

অনেক চেষ্টা করেও ওই নাবালিকা বা অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

High Court Minor Marriage Kidnap
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE