Advertisement
০৩ মে ২০২৪

খনি চালু কী উপায়ে, ধন্দ ডিপিএলে

এগোলেও সমস্যা। পিছোলেও সমস্যা। নিলামে পাওয়া খনি নিয়ে এখনই এমনই অবস্থা রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের।খনিটি নিলামে পেতে ইতিমধ্যে খরচ করা হয়েছে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি-সহ প্রায় দেড়শো কোটি টাকা।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০২:৫০
Share: Save:

এগোলেও সমস্যা। পিছোলেও সমস্যা। নিলামে পাওয়া খনি নিয়ে এখনই এমনই অবস্থা রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেডের।

খনিটি নিলামে পেতে ইতিমধ্যে খরচ করা হয়েছে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি-সহ প্রায় দেড়শো কোটি টাকা। খনি ফেরাতে গেলে এখন সেই লগ্নি নষ্ট হবে। আবার, খনিটি চালু করতে হলে এখনও যে পরিমাণ খরচ করতে হবে, তেমন আর্থিক পরিস্থিতি নেই সংস্থায়। ফলে, খনি চালুর বিষয়টি এখন বিশবাঁও জলে।

কোল ইন্ডিয়া থেকে কয়লা কিনে বরাবর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ডিপিএল। প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্রেতাই এলাকার বিভিন্ন শিল্পসংস্থা। কিন্তু ডিভিসি এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা থেকে কম দামে বিদ্যুৎ পাওয়ায় বহু সংস্থাই ডিপিএলের থেকে মুখ ফিরিয়েছে। ফলে, উৎপাদন কমেছে সংস্থার। এই পরিস্থিতিতে নিজস্ব খনি চালু করে বিদ্যুৎ মাসুল কমানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিল ডিপিএল। কিন্তু নিলামে খনি পাওয়ার পরে দু’বছর কেটে গেলেও মূলত আর্থিক কারণে তা চালু করতে পারেনি তারা।

২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিলামে বাঁকুড়ার বড়জোড়ার ট্রান্স দামোদর কোল ব্লকটি পায় ডিপিএল। প্ল্যান্ট থেকে খনির দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। ফলে, কয়লা পরিবহণে খরচ কম হবে, নিজস্ব কোল ব্লক থেকে তুলনায় কম দামে ভাল মানের কয়লা মিলবে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা সাবলীল হবে ও মাসুল কমানো যাবে— এমনই ভাবনা ছিল সংস্থার। সে জন্যই কেন্দ্রীয় নিলামে বছরে ১.০৮ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদনকারী খোলামুখ খনিটি ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ট্রেডিং অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন’ (ডব্লিউবিএমটিডিসি)-এর কাছ থেকে হস্তগত করে ডিপিএল। এই খনিকে ঘিরে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে ঋণভারে জর্জরিত রুগ‌্ণ সংস্থা।

ডব্লিউবিএমটিডিসি একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে খনির কাজ চালাত। ডিপিএল খনিটি হাতে পাওয়ার পরে পুরনো কর্মীদেরই বহাল রাখে। ডব্লিউবিএমটিডিসি-র মাধ্যমে কর্মীদের মজুরি দেয় ডিপিএল। বছর দেড়েক ধরে কার্যত বসে থেকে মজুরি নিয়ে হতাশ প্রায় সাড়ে পাঁচশো কর্মী। খনি চালুর জন্য অবসরপ্রাপ্ত এক আধিকারিককে মোটা বেতনে দু’বছরের জন্য বহাল করা হয়েছে। কেন্দ্রের কাছে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি জমা দিতে হয়েছে ডিপিএল-কে।

কিন্তু খনির উৎপাদন চালু করা যায়নি এখনও। সংস্থা সূত্রে জানা যায়, খনির জায়গার দাম বাবদ এখনও প্রায় দেড়শো কোটি টাকা দিতে হবে ডব্লিউবিএমটিডিসি-কে। এ ছাড়া খনি চালাতে বছরে একশো কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। কিন্তু সংস্থার সেই আর্থিক পরিস্থিতি নেই। ঋণের সুদ মেটাতে না পারায় মাঝে-মধ্যেই ডিপিএলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘সিজ’ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় কী ভাবে খনি চালু হবে, ধোঁয়াশা সংস্থার অন্দরেই।

ডিপিএলের আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাসের অভিযোগ, ‘‘খনির ব্যাপারে প্রথম থেকেই পরিকল্পনাহীন ভাবে এগিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। চূড়ান্ত লোকসানে চলা সংস্থাকে আরও পিছিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।’’ ডিপিএলের এক আধিকারিক জানান, ইতিমধ্যে খনির পিছনে প্রায় ১৪৭ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের কাছে তদ্বির করার আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘খনি নিয়ে এখন ছুঁচো গেলার মতো দশা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur Project Limited DPL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE