কাঁকসার মলানদিঘিতে চাঁদা আদায়।—নিজস্ব চিত্র।
রাস্তা আটকে চাঁদা তোলায় ব্যস্ত জনা কয়েক যুবক। এক দিকে লরি-ট্রাক আটকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। অন্য দিকে তখন কয়েকজন ব্যস্ত ছোট গাড়ি আটকাতে। শহরের ভিতরের রাস্তাই হোক বা রাজ্য সড়ক, গত কয়েকদিন ধরে সর্বত্র চিত্রটা এমনই।
দুর্গাপুরের মুচিপাড়া থেকে কাঁকসার শিবপুর যাওয়ার ঝকঝকে চওড়া সড়ক। দ্রুত গতিতে গাড়ি চলে। কিন্তু এখন ছবিটা বদলে গিয়েছে। মলানদিঘি এলাকায় রাস্তা আটকে চলছে চাঁদা তোলা। তার জেরে যানজট তৈরি হচ্ছে। কিছুটা দূরেই পুলিশ ক্যাম্প। কিন্তু পুলিশকর্মীরা দেখেও না দেখার ভান করে আছেন বলে গাড়ির চালকদের অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সকাল থেকেই ওই রাস্তায় চাঁদা তোলা শুরু হয়ে যাচ্ছে। গাড়ি আটকে চাঁদা দেওয়ার আবেদন করা হচ্ছে। কাজ না হলে জোরজুলুম শুরু। প্রতিবাদ করলেই জুটছে গালমন্দ। চালকেরা জানান, ট্রাক বা লরি পিছু একশো থেকে দু’শো টাকা এবং ব্যক্তিগত গাড়ির থেকে একশো টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।
পানাগড়-দুবরাজপুর রাজ্য সড়কেও জোর করে গাড়ি আটকে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছে। কাঁকসার মিনিবাজারের কাছে দুর্গাপুজোর সময়েও চাঁদার জুলুম দেখা গিয়েছিল। কালীপুজোতেও সেই একই ছবি নজরে এসেছে। ওই রাস্তাতেই বসুধা মোড়েও গাড়ি আটকে চাঁদা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে, যানজট হচ্ছে। যান নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে ব্যস্ত থাকতে দেখা গিয়েছে ঠিকই। তবে চাঁদা আদায়কারীদের হঠিয়ে যানবাহনের গতি বাড়াতে পুলিশের কোনও উদ্যোগ নজরে পড়েনি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকটি লরির চালক বলেন, ‘‘পুলিশের টহল থাকলে দিনের বেলায় এ ভাবে চাঁদার জুলুমের মুখে পড়তে হয় না।’’ একই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। কাঁকসা থানার পুলিশের অবশ্য দাবি, চাঁদার জুলুম নিয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। লরি বা গাড়ি মালিকদের পাল্টা বক্তব্য, থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ জানাতে সময় লাগে। তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছনোর তাড়া থাকে। তাছাড়া অভিযোগ জানালে পরে এই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময়ে বিপাকে পড়তে হতে পারে। চাঁদা আদায়কারীদের ক্ষোভ গিয়ে পড়তে পারে তাঁদের উপর। ঝামেলা এড়াতে তাঁরা কোনও বিবাদে যেতে চান না।
দুর্গাপুর শহরেও নানা জায়গায় গাড়ি আটকে চাঁদা তোলার ছবি দেখা গিয়েছে। মুচিপাড়া থেকে স্টেশনে যাওয়ার পথে সগড়ভাঙা এলাকায় যানজটে আটকে যাওয়া লরি ও গাড়ির সারিতে চাঁদা তুলতে দেখা গিয়েছে কয়েকজন যুবককে। তবে পুলিশের গাড়ি আসতেই তারা পালিয়ে যায়। রাতুড়িয়া-অঙ্গদুপর শিল্পতালুকে আসা-যাওয়ার পথে লরি, ট্রাক আটকে চাঁদা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশে টহল থাকায় চাঁদা নিয়ে কোনও গণ্ডগোল পাকায়নি।
কালীপুজোর আগে চাঁদার জন্য জুলুম বন্ধে প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকায়। পুলিশ অবশ্য তা মানতে রাজি নয়। তাদের দাবি, চাঁদা আদায় বন্ধে টহলদারি চলছে। তবে চাঁদা আদায়ের জন্য গত কয়েকদিনে কত জনকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়েছে, তা পুলিশ জানাতে পারেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy