Advertisement
E-Paper

নির্দেশে বুড়ো আঙুল, বালি তোলা চলছেই

গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে নদী থেকে বালি তোলায় মানা। তারপরেও দিনরাত খাদান থেকে বালি তোলা চলছেই। গত শুক্রবার মঙ্গলকোটের বক্সিনগরে বালিবোঝাই ডাম্পারের ধাক্কায় চার জনের মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল ছবিটা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪১
ঝোপের আড়ালে লুকনো বালি তোলার যন্ত্র। নিজস্ব চিত্র।

ঝোপের আড়ালে লুকনো বালি তোলার যন্ত্র। নিজস্ব চিত্র।

গ্রিন ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে নদী থেকে বালি তোলায় মানা। তারপরেও দিনরাত খাদান থেকে বালি তোলা চলছেই।

গত শুক্রবার মঙ্গলকোটের বক্সিনগরে বালিবোঝাই ডাম্পারের ধাক্কায় চার জনের মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল ছবিটা। রবিবার আবার রায়নার বামুনিয়া গ্রামের বাসিন্দারা বালিবোঝাই লরি আটকে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, পরিবেশ বিধিকে শিকেয় তুলে রাতের অন্ধকারে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে একের পর এক ট্রাকে বালিবোঝাই করা হচ্ছে।

সপ্তাহ দু’য়েক আগে জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর ‘ওভারলোডিং’ গাড়ি ধরতে পথে নেমেছিলেন। তিনি দেখেন, কালো ত্রিপলে মোড়া একটি ট্রাক পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। গাড়িটিকে আটকে ত্রিপল খোলার পরেই বিষম খাওয়ার জোগাড় সভাধিপতির। তাঁর কথায়, “ট্রাকের ভিতর ছোট ছোট বস্তায় করে বালি রাখা ছিল। যাতে পাচার করার সময় কারও চোখে না পড়ে।” সাধারণত যে ট্রাকে বা ডাম্পারে বালি নিয়ে যাওয়া হয় তা খোলাই থাকে। ফলে ছোট ছোট বস্তায় করে বালি নিয়ে যাওয়া তুলনায় অভিনব বলেই পুলিশের কর্তারা মনে করছেন।

যথেচ্ছ ভাবে বালি তোলায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে গত মার্চে কেন্দ্রীয় গ্রিন ট্রাইব্যুনাল খাদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। জুনে এক শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দেয়, জেলাশাসকের নেতৃত্বে কমিটি গড়ে পরিবেশের ভারসাম্য ধরে রাখতে পারবে এমন সংস্থার হাতেই খাদানের দায়িত্ব দিতে হবে। এর জন্য অনলাইনে দরপত্র ডাকারও নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে যতদিন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন না হয়, ততদিন খাদান বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার শর্তেই ইজারাদারদের খাদান থেকে বালি তোলার অনুমোদন দেওয়া হবে।”

কিন্তু প্রশাসনের অনুমোদনের ভরসা না করে দেদার বালির গাড়ি যে ছুটছে জেলার দুই প্রান্তের অজয় ও দামোদরের খাদানগুলিই তার প্রমাণ। জেলা পুলিশের রিপোর্ট বলে, গত এক মাসে অন্তত শতাধিক বালির গাড়ি আটক করা হয়েছে। গত শুক্রবার বাদশাহী রোডে মঙ্গলকোট থানার পাশ দিয়ে প্রচন্ড গতিতে যাওয়ার সময় মোটরবাইককে ধাক্কা মারে একটি বালিবোঝাই ডাম্পার। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের ভূমিকার প্রশ্ন তুলে থানা ঘেরাও করেন। বালির গাড়িটিতেও আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে অজয়ের উপর কোগ্রাম, সাগিরায় রয়েছে একাধিক বেআইনি খাদান।

রায়নার হিজলনা পঞ্চায়েতের বামুনিয়া গ্রামে আবার দামোদরের উপর পরপর বেআইনি খাদান রয়েছে। গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, রাত হতেই বালির গাড়ি দামোদরের পাড়ে দাঁড়াতে শুরু করে। দিনের আলোয় লুকিয়ে রাখা মাটি তোলার যন্ত্র খাদানে নামিয়ে বালি তোলা হয়। আলো ফোটার আগে পর্যন্ত বালি তোলা হয়। পরে ঝোপঝাড়ের আড়ালে যন্ত্র লুকিয়ে পালায় লোকজন। বামুনিয়ায় গিয়ে জানা যায়, জাকতা থেকে বামুনিয়া পর্যন্ত ১২টি বালির খাদান রয়েছে। বালি তোলার পর গাড়িটিকে ত্রিপল দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়। খাদানে যেতেই দেখা যায়, বালি তোলার কাজ ব্যস্ত বেশ কিছু কর্মী কাশবনে ঢুকে পড়েন।

জেলাশাসক বলেন, “নিয়মিত তল্লাশি চলছে। ধরপাকড়ও হচ্ছে।”

Illegal Sand trafficking Burdwan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy