Advertisement
০৮ মে ২০২৪

খনি-কারখানা সচল, বাস কম শিল্পাঞ্চলের রাস্তায়

অফিস-কাছারি খোলা। কিন্তু লোকজন নেই। স্কুল-কলেজ চালু। কিন্তু পড়ুয়ার তেমন দেখা নেই। ঢিমেতালে চলেছে বাস। কিন্তু যাত্রীর আসন ফাঁকা। বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের দিন এমন ছবিই দেখল আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল। তবে খনি ও নানা কল-কারখানায় উৎপাদন প্রায় স্বাভাবিক ছিল বলে জানা গিয়েছে। দোকানপাট অনেকাংশে খোলা থাকলেও ক্রেতা প্রায় ছিল না। যাত্রী না মেলায় দুপুরের পর থেকে বাসেরও বিশেষ দেখা মেলেনি।

সুনসান দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড। —নিজস্ব চিত্র।

সুনসান দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০২:৩৯
Share: Save:

অফিস-কাছারি খোলা। কিন্তু লোকজন নেই। স্কুল-কলেজ চালু। কিন্তু পড়ুয়ার তেমন দেখা নেই। ঢিমেতালে চলেছে বাস। কিন্তু যাত্রীর আসন ফাঁকা।

বৃহস্পতিবার ধর্মঘটের দিন এমন ছবিই দেখল আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল। তবে খনি ও নানা কল-কারখানায় উৎপাদন প্রায় স্বাভাবিক ছিল বলে জানা গিয়েছে। দোকানপাট অনেকাংশে খোলা থাকলেও ক্রেতা প্রায় ছিল না। যাত্রী না মেলায় দুপুরের পর থেকে বাসেরও বিশেষ দেখা মেলেনি।

আসানসোল মহকুমায় প্রতি দিন প্রায় সাড়ে চারশো মিনিবাস চলে। এ দিন সাকুল্যে ১০-১৫টি রাস্তায় নেমেছে। আসানসোল মিনিবাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, ‘‘যাত্রী ছিল না। তবু কিছু রুটে কিছু বাস চলেছে।’’ শিল্পাঞ্চল থেকে প্রতি দিন প্রায় আড়াইশো বড় বাস চলে। তাদের সংগঠনের সম্পাদক প্রকাশ মণ্ডল দাবি, এ দিন একটিও চলেনি। আসানসোল থেকে কলকাতার উদ্দেশে প্রতি দিন সকাল ৬টা থেকে ভলভো বাস পরিষেবা চালু হয়ে যায়। এ দিন তা হয়েছে দুপুর আড়াইটে থেকে। তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরি সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘বাস ইউনিয়ন আমাদের দখলে থাকা সত্ত্বেও কেন এ দিন বাস চলেনি তা নেতাদের কাছে জানতে চেয়েছি। মালিকপক্ষের সঙ্গেও কথা বলছি।’’ বাস না চলায় যে যাত্রীরা রাস্তায় বেরিয়েছিলেন তাঁরা চড়া ভাড়া গুনে অটোয় সওয়ার হন। আইএনটিইউসির পরিবহণ কর্মী সংগঠনের নেতা সঞ্জয় সেনগুপ্ত দাবি করেছেন, শিল্পাঞ্চলে সর্বাত্মক পরিবহণ ধর্মঘট হয়েছে। দুর্গাপুর থেকে কলকাতাগামী সরকারি বাসের চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও যাত্রী ছিল কম। সকালে কয়েকটি মিনিবাস রাস্তায় নামলেও যাত্রী না মেলায় দুপুরের পর থেকে তাদের আর দেখা প্রায় মেলেনি।

বৃহস্পতিবার আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বেশিরভাগ বাজারই বন্ধ থাকে। এ দিন তাই এমনিই অনেক বাজার বন্ধ ছিল। অন্যত্রও দোকানপাট খুলেছিল কম। আসানসোল বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বাণী মণ্ডল দাবি করেন, আদালত খোলা ছিল। কিন্তু মানুষজন আসেননি। তাই বিশেষ কাজ হয়নি। আইনজীবীদের উপস্থিতিও তুলনায় কম ছিল। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস বলেন, ‘‘সরকারি দফতরগুলিতে কর্মীদের হাজিরা স্বাভাবিক ছিল।’’ দুর্গাপুরের মহকুমাশাসকের অফিসে কস্তুরী সেনগুপ্তও বলেন, ‘‘কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মানুষের ভোগান্তির খবরও নেই।’’ তিনি জানান, সরকারি অফিসে হাজিরা স্বাভাবিক ছিল। মহকুমাশাসকের দফতরেই হাজিরা ছিল ৯৭.৫ শতাংশ।

নানা শিল্প সংস্থা ও খনিতে অবশ্য হাজিরা স্বাভাবিক ছিল বলে জানা গিয়েছে। ইস্কো স্টিল প্ল্যান্টের উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল বলে জানান সংস্থার জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার। ইসিএলেও স্বাভাবিক উৎপাদন হয়েছে বলে জানান সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়। চিত্তরঞ্জন রেল কারখানার জনসংযোগ আধিকারিক মন্তার সিংহও হাজিরা ও উৎপাদন স্বাভাবিক থাকার কথা জানিয়েছেন। ডিএসপি-র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিভুরঞ্জন কানুনগো জানান, এমনিতে হাজিরা থাকে ৯৩-৯৪ শতাংশ। এ দিন ছিল প্রায় ৯২ শতাংশ।

সিটুর জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘শত বিরোধিতা সত্ত্বেও মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।’’ আসানসোলের সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘কোনও প্ররোচনা ছাড়াই পুলিশ আমাদের ৬০ জন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।’’ আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাস, আসানসোলের কংগ্রেস নেতা রবিউল ইসলামেরা বলেন, ‘‘শাসকদলের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে মানুষ ধর্মঘট সমর্থন করেছেন।’’ বিজেপি-র আসানসোল জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকারের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের মানুষ সন্ত্রাসের জবাব দিয়েছেন। আমাদের কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। পুলিশ আমাদের ৪৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।’’

পক্ষান্তরে, আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় যদিও বলেন, ‘‘অফিস-কাছারি, কল-কারখানায় হাজিরা স্বাভাবিক ছিল। ধর্মঘট ব্যর্থ হয়েছে। ’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE