শ্যামপুরে মোটরবাইক মিছিল তৃণমূলের। অনেকেরই মাথায় নেই হেলমেট। ছবি: বিকাশ মশান
শহরে শিল্প বাঁচানোর আন্দোলনে বাম শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়াই করেছে তারা। দূরত্ব রেখে চলেছে তৃণমূল প্রভাবিত আইএনটিটিইউসি-র সঙ্গে। কিন্তু পুরভোটের মুখে সংগঠনের সমর্থক শ্রমিকদের তৃণমূলের পাশে থাকার জন্য অনেক কারখানাতেই বার্তা দিচ্ছেন আইএনটিইউসি নেতারা। কংগ্রেসের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কারখানায় আইএনটিইউসি করেন, কিন্তু বাইরে তৃণমূল— এমন স্বার্থপর নেতারাই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’’
দুর্গাপুরে পুরভোটে তৃণমূলকে হারাতে ‘গণতন্ত্রপ্রেমী, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি’কে একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। এর পরে শহরের ৪৩টি ওয়ার্ডের ৩৫টিতে বামেরা ও ৮টিতে কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, এত কম ওয়ার্ডে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ও প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রার্থিতালিকা তৈরির অভিযোগে সরব হয় দলের একাংশ। গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ছেড়ে আসা বিশ্বনাথ পাড়িয়ালকে তড়িঘড়ি প্রার্থী করা নিয়েও আপত্তি ছিল ওই অংশের নেতাদের। তাঁদের বেশিরভাগই আইএনটিইউসি-র সঙ্গে যুক্ত। বিধানসভা ভোটের সময়ে প্রকাশ্যে বিরোধিতায় না গেলেও এ বার পরিস্থিতি পাল্টেছে।
পুরভোটে কংগ্রেস বা বামের পাশে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসপি এবং ডিপিএলের আইএনটিইউসি ইউনিট। ডিএসপি-র ইউনিটের সভাপতি বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের দাবি, প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে তেমন কোনও নির্দেশিকা আসেনি। শহর কংগ্রেসের তরফেও তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। অধিকাংশ ওয়ার্ডে কংগ্রেসের কোনও প্রার্থীও নেই। তিনি বলেন, ‘‘সংগঠনের অনেকেই কাকে ভোট দেবেন, সে নিয়ে বিভ্রান্ত। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের কেউ-কেউ আমাদের সভায় সমর্থন চাইতে এসেছিলেন। আমরা তাঁদের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
রবিবার বিকেলে ডিপিএল কলোনিতে আইএনটিইউসি-র একটি সভাতেও তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে আইএনটিইউসি সূত্রের খবর। ডিপিএলে সংগঠনের নেতা উমাপদ দাস জানান, জাতীয় সড়কের বাঁ পাশে ডিপিএলের দিকে কোনও ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী নেই। প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেও সুরাহা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণপন্থী দলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’’
আইএনটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিকাশ ঘটক জানান, সংগঠনের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের সরাসরি সম্পর্ক নেই। শিল্প বাঁচাও আন্দোলনে বাম সংগঠনের সঙ্গে একজোট হয়ে লড়াই করা হয়েছে। আইএনটিটিইউসি-কেও সঙ্গে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা আসেনি। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভার তুলনায় পুরভোটে পরিস্থিতি আলাদা। তাই সরাসরি কে কার পক্ষে তা খোঁজ না নিয়ে বলা মুশকিল।’’
গোটা বিষয়টি নিয়ে অবশ্য বিরক্ত কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি দেবেশবাবুর দাবি, আইএনটিইউসি-র নাম করে কিছু নেতা নিজেদের ডালেই কুড়ুল মারছেন। সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘শিল্পের দুরবস্থার জন্য কেন্দ্রের পাশাপাশি বর্তমান রাজ্য সরকারও সমান দায়ী। শিল্পরক্ষার নামে আমরা তিন বছর ধরে যৌথ আন্দোলন করেছি। এখন যদি কেউ তৃণমূলকে সমর্থনের কথা বলে, তবে ভবিষ্যতে কাকে বন্ধু হিসেবে বাছতে হবে, তা শ্রমিকেরা বুঝে যাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy