দীর্ঘদিন ধরেই লোক নেই বেগপুর পঞ্চায়েতের কার্যনির্বাহী আধিকারিক ও সচিব পদে। ফলে ব্যাঙ্কের সমস্ত লেনদেন থেকে একশো দিনের প্রকল্পে মজুরদের টাকা দেওয়া, এমনকী বেতনও আটকে গিয়েছে অনেকের। তৃণমূল পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতের দাবি, বছরের গোড়ায় এই দুই আধিকারিক অন্যত্র চলে যাওয়ার পর থেকেই এভাবেই ধুঁকছে পঞ্চায়েতটি।
গত তিন বছরে একশো দিনের প্রকল্পে ভাল কাজ করে প্রশাসনের নজরে এসেছে বেগপুর পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, কার্যনিবার্হী পদে বিশ্বজিৎ পাল এবং সচিব পদে কর্মরত ছিলেন উদয়চাঁদ বসু। ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে দু’জনের কাছেই বদলির নির্দেশ আসে। বিশ্বজিৎবাবুকে পাঠানো হয় কালনা ২ ব্লকের পূর্বসাতগাছিয়া পঞ্চায়েতে। আর উদয়বাবুকে মেমারির বিজুর ২ পঞ্চায়েতে যোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু বদলি হিসাবে কেউ না আসায় পঞ্চায়েত তাঁদের যাওয়ার ছাড়পত্র দেয় না। পরে এপ্রিল মাস নাগাদ তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ নির্দেশিকা আসে। পঞ্চায়েত দু’জনকেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে কার্যনির্বাহী পদটি শূন্যই রয়েছে। সচিব পদটিতে যদিও ২৯ এপ্রিল নারায়ণ নন্দী নামে এক জন যোগ দেন। বেগপুর পঞ্চায়েতের দাবি, নানা প্রকল্পের লেনদেনের জন্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের স্বাক্ষর দরকার হয়। কোনও কারণে এই পদে লোক না থাকলে একই দায়িত্ব দেওয়া যায় সচিবকে। নারায়ণবাবু কাজে যোগ দেওয়ার পরে পঞ্চায়েতের তরফে একটি সাধারণ বৈঠক ডেকে ব্যাঙ্কের লেনদেনের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। পাশাপাশি তার ডিজিট্যাল স্বাক্ষরও আলাদা করে তৈরি করানো হয়। কারণ, ১০০ দিনের প্রকল্পে বর্তমানে ই- পেমেন্ট চালু রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যে কোনও প্রকল্পের টাকা পেতে গেলে প্রধানের সঙ্গে আরও এক জনের ডিজিট্যাল স্বাক্ষর দরকার হয়। কিন্তু এর মাঝেই জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতর পঞ্চায়েত কর্মীদের একটি পদোন্নতির তালিকা প্রকাশ করে। ওই তালিকায় নাম ছিল নারায়ণবাবুরও। ২৮ মে তিনি মন্তেশ্বরের পিপলন পঞ্চায়েতে কার্যনির্বাহী আধিকারিক পদে যোগ দেন। অন্যদিকে মামুদপুর ২ পঞ্চায়েতের সচিব কৃষ্ণচন্দ্র রায় বেগপুর পঞ্চায়েতের ওই পদে উন্নীত হয়ে আসেন। কিন্তু বেগপুর পঞ্চায়েতের অভিযোগ, পদোন্নতি হলেও পুরনো পঞ্চায়েত ছেড়ে কাজে যোগ দেন নি তিনি। ফলে ফাঁকাই রয়ে গিয়েছে পদদু’টি।
বেগপুর পঞ্চায়েতের প্রধান শিউলি মল্লিক বলেন, ‘‘বর্তমানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে লোক না থাকায় ১০০ দিনের কাজ এবং পুরনো কাজের টাকা দিতে পারছে না পঞ্চায়েত। কারণ পঞ্চায়েতের ব্যাঙ্কিং লেনদেনই বন্ধ। এ ছাড়া স্বাভাবিক যে সমস্ত কাজকর্ম তাও টাকার অভাবে করা যাচ্ছে না। এমনকী পঞ্চায়েত যে সমস্ত কর্মীর বেতন দেয় তাদের টাকাও আটকে রয়েছে।’’ প্রধানের দাবি, সমস্যার কথা জেলা সভাধিপতি সহ বেশ কিছু আধিকারিকের গোচরে আনা হয়েছে।
এ দিকে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম শিকেয় ওঠাই ক্ষোভ ছড়িয়েছে শাসকদলের অন্দরেও। ওই পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল নেতা ইনসান মল্লিক বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কিং লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়াই একটি কাঁচা রাস্তার কাজ-সহ বহু কাজ আটকে গিয়েছে। সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে পঞ্চায়েত পিছিয়ে পড়বে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘নারায়ণবাবুকে যে পিপলন পঞ্চায়েতে পাঠানো হয়েছে সেখানে ওই পদে একজন লোক রয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy