জোড়া সঙ্কটের জেরে কমছে রক্তদানের হার, মনে করছেন নানা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যেরা। এক দিকে, নতুন প্রজন্মের নিরুৎসাহ। অন্য দিকে, নানা শিবিরে উপহার দেওয়ার চল শুরু হওয়ায় অনেক ছোট শিবির রক্তদাতা পাচ্ছেন না। এর জেরেই হাঁসফাঁস পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে ওই অভিযোগ ওই সদস্যদের।
সম্প্রতি বর্ধমানের বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত ‘ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরাম’-এর ১৯তম জেলা সম্মেলনে বারবার উঠে এল এই প্রসঙ্গ। রক্তদানের মতো এমন মহান ব্রতে উপহারের কুপ্রভাব নিয়ে একটি বিতর্কসভাও আয়োজিত হয়। রাজ্য জুড়ে এর বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির উপরে জোর দিতে হবে বলে দাবি করেন প্রতিনিধিরা।
রক্তদানের সঙ্গে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির কর্তারা জানান, সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ইদানীং যুবক-যুবতীদের একটি বড় অংশ স্বেচ্ছায় রক্তদানে বিমুখ। পড়াশোনা বা কর্মক্ষেত্রের চাপে এই ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তাঁরা দূরে থাকছেন। প্রায় ৬০ শতাংশ রক্তদাতাই পঞ্চাশোর্ধ। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্লাড ডোনার্স ফোরাম’-এর রাজ্য সহ-সম্পাদক তথা বর্ধমানের প্রাক্তন আহ্বায়ক দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নবীনদের এই নিরুৎসাহ নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত। আঞ্চলিক থেকে রাজ্য স্তর পর্যন্ত ধারাবাহিক প্রচার-অভিযান চলছে। আমাদের বিশ্বাস, এই পরিস্থিতি সাময়িক।’’
কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে ভাল রক্ত পর্যাপ্ত মজুত রাখতে হলে নবীনদের যোগদান জরুরি বলে মনে করেন আসানসোল জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রধান সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘তরুণদের রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ ভাল থাকে। তাই কাজ ভাল হয়।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘নতুন প্রজন্ম নিজেদের নিয়ে এত ব্যস্ত যে স্বতস্ফূর্ত হয়ে এগিয়ে আসছে না। অন্যদেরও উৎসাহিত করছে না।’’
কিছু রক্তদান শিবিরের আয়োজকেরা উপহার দেওয়ার চল শুরু করায় বিরক্ত রক্তদাতা সংগঠনের প্রতিনিধিরা। জেলা সমন্বয় কমিটির কার্যকরী সদস্য তপন সরকারের কথায়, ‘‘এই চল আমাদের চিন্তা দ্বিগুন বাড়িয়েছে। এর ফলে যেখানে উপহার মিলছে, সেখানে রক্তদাতাদের ভিড় বাড়ছে। ছোট-ছোট শিবিরগুলি করা দুষ্কর হচ্ছে।’’ তাঁর আরও দাবি, উপহারের লোভে অনেকে বেশি রক্ত দিচ্ছেন। তাতে সুরক্ষা ব্যবস্থা শিকেয় উঠছে। দেবাশিসবাবুর অভিযোগ, ‘‘অনেক রাজনৈতিক নেতা বা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি ক্ষমতা জাহিরের জন্য রক্তদান শিবিরে উপহার দেন। এ সব বন্ধে আন্দোলন হচ্ছে।’’