Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
migratory birds

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে পরিযায়ী পাখির মৃত্যু

ডিসেম্বর শুরু হয়ে গেলেও শীতের দাপট তেমন নেই এখন। তবে মরসুমের অতিথিরা এসে পৌঁছেছেন আগেই। কয়েকবছর আগেও বর্ধমান শহরের কৃষ্ণসায়রে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি ভিড় করত।

চরে মৃত পাখি। নিজস্ব চিত্র

চরে মৃত পাখি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:২২
Share: Save:

নভেম্বরের শেষ দিকেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বিভিন্ন জলাশয় এবং দামোদরে দেখা মিলতে শুরু করেছে পরিযায়ীদের। তবে উদ্বেগ বাড়িয়েছে দামোদরে বেশ কিছু পাখির মৃত্যু। পক্ষীপ্রেমীরা বিষয়টি নিয়ে তদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন। বন দফতরের রেঞ্জ অফিসার কাজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। পাখিগুলিকে মারা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। কী ভাবে তাঁদের মৃত্যু হল সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে ময়না-তদন্ত করা হচ্ছে। ওই এলাকায় নজরদারিও চলছে।’’

ডিসেম্বর শুরু হয়ে গেলেও শীতের দাপট তেমন নেই এখন। তবে মরসুমের অতিথিরা এসে পৌঁছেছেন আগেই। কয়েকবছর আগেও বর্ধমান শহরের কৃষ্ণসায়রে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি ভিড় করত। কিন্তু পরবর্তীতে মুখ ফিরিয়েছে তারা। বরং ওই জলাশয়ের উল্টো দিকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাজি হোস্টেলের পাশের পুকুরে আস্তানা তৈরি করেছে তারা। গোলাপবাগ ক্যাম্পাসেও দেখা মিলছে ভিন দেশি পাখিদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিতোষ পাল, সদানন্দ কুম্ভকার, সঞ্জয় চক্রবর্তীরা জানান, অন্য বার জানুয়ারিতে দেখা মিলত পাখিদের, এ বার নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়েছে পাখিদের আনাগোনা। বর্ধমান ২ ব্লকের চক্ষণজাদী, বড়শুল, মাণিকহাটি, চিত্রপুর, পালা শ্রীরামপুর, বাঁধগাছার কাছে দামোদরেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেখা মিলছে পরিযায়ীদের।

তার মধ্যেই বড়শুলে দামোদরে চরে পরিয়ায়ীদের মৃত্যু নিয়ে ছড়িয়েছে উদ্বেগ। গত বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার পর্যন্ত প্রায় ছ’টি পাখিকে বালির চরে মৃত অবস্থায় বা জলে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছেন পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা। মৃত পাখিগুলিকে ময়না-তদন্তের জন্য বন দফতরের হাতে তুলে দিয়েছেন তাঁরা। ওই সংগঠনের অন্যতম অর্ণব দাস জানান, দুটি করে রাডি সেলডাক এবং পন্ড হেরন, একটি রিভার লাপওয়াইল এবং একটি বক জাতীয় পাখি মারা গিয়েছে। মৃত্যুর কারণ জানতে দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। সঙ্গীদের মৃত্যুর কারণে বড়শুল এলাকার দামোদর ছেড়ে পরিযায়ীরা কাঞ্চননগরের দিকে সরে আসছে বলেও তাঁদের দাবি। বিষয়টি লিখিত ভাবে বর্ধমানের মুখ্য বনধিকারিকের নজরে এনেছেন তাঁরা।

পরিবেশ গবেষক তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক সন্তু ঘোষ বলেন, ‘‘শীতকালীন পরিযায়ী পাখী সাধারণত তিব্বত, চিন ও সাইবেরিয়া থেকে আসে। এই সময়ে ওই এলাকায় তীব্র ঠান্ডার পাশাপাশি খাদ্যের অভাব দেখা যায়। তা ছাড়া এই সময় পাখিদের প্রজনন কাল। ফলে উষ্ণ জায়গার খোঁজে তারা কয়েক হাজার মাইল পথ পেরিয়ে আসে।’’ পরিবেশবিদ অয়ন মণ্ডল জানান, বর্ধমানে আসা পাখিরা হলো হাঁসজাতীয়। যেমন, লেসার হুইসেলিং ডাক, হিমালয় থেকে আসা রাডি সেল ডাক। সাইবেরিয়া থেকে আসা রেড ক্রস পোচার্ড, নর্দান পিনটেল, গাডওয়াল, কটন পিগমি গুসও দেখা যায়। দেখা মেলে রিভার টার্ন, গ্লোল্ডেন প্লোভার জাতীয় পাখিরও। অয়ন বলেন, ‘‘দামোদরে আসা পাখিগুলি রাডি সেলডাক। যার বাংলা নাম চখাচখি। এগুলি আসে তিব্বত থেকে। এই পাখিগুলি একটু বড় হওয়ায় এদের খাদ্যের চাহিদা বেশি। তাই এরা নদীতে বেশি নামে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

migratory birds Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE