বাঁ দিকে, এখানেই ছিল মূর্তি। ডান দিকে, উধাও এই মূর্তিই। নিজস্ব চিত্র
চোরের নজরে এ বার কবির মূর্তিও! আসানসোল পুরসভার তত্ত্বাবধানে থাকা কুলটির নিয়ামতপুরের একটি উদ্যান থেকে কাজী নজরুল ইসলামের মূর্তি উধাও হয়ে গিয়েছে। বুধবার এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশের পাশাপাশি সরব হয়েছেন শহরের বিশিষ্ট জনেরাও। প্রশ্ন উঠেছে পুরসভা, পুলিশ এবং দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংগঠনের ভূমিকা নিয়েও।
১৯৯৮-র ডিসেম্বরে আসানসোল পুরসভার ৬১ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ামতপুর জিটি রোড লাগোয়া এলাকায় নজরুল উদ্যানটি তৈরি হয়েছিল। সেখানেই ছিল নজরুলের মূর্তিটি। মূর্তিটি সিমেন্টের তৈরি। পুরসভা জানায়, সাবেক কুলটি পুরসভার আর্থিক অনুদানে তৈরি উদ্যানটির দেখভালের দায়িত্ব পায় ‘নিয়ামতপুর ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’।
বাসিন্দারা জানান, এ দিন সকালে দেখা যায়, বেদি থেকে উধাও নজরুল-মূর্তিটি। ঘটনার কথা চাউর হতেই এলাকাবাসী তীব্র ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে নিয়ামতপুর ফাঁড়ির পুলিশ। যদিও এলাকাবাসীর দাবি, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, উদ্যানের যেখানে সেখানে প্রচুর মদের বোতল ও গ্লাস পড়ে রয়েছে। তা দেখেই এলাকাবাসীর অনুমান, সেখানে দুষ্কৃতীদের আসর বসেছিল।
কিন্তু ‘ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ দেখভালের দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে ঘটল এমন ঘটনা? সংগঠনের সভাপতি স্বপন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এটা ঠিকই, দেখভালের দায়িত্ব আমাদেরই ছিল। কিন্তু এক বছর আগে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চেয়ে পুরসভাকে উদ্যানের চাবি ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুরসভা আমাদের অব্যাহতি দিচ্ছে না। আমাদের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। রাতের অন্ধকারে কেউ এ কাজ করলে আমরা কী করতে পারি।’’ পুরসভার এক কর্তা যদিও এ প্রসঙ্গে জানান, দায়িত্ব দেওয়া-নেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এ ছাড়া পুলিশের ভূমিকা নিয়েও এলাকাবাসীর একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা জানান, নজরুল উদ্যানের দশ মিটারের মধ্যে পুলিশ ‘বুথ’ রয়েছে। তা হলে কী ভাবে পুলিশের নজর এড়িয়ে বেশ ভারী সিমেন্টের ওই মূর্তিটি উধাও হয়ে গেল। যদিও গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। জানিয়েছে, তদন্ত চলছে।
তবে এই ঘটনায় সরব হয়েছেন নাগরিকেরা। স্থানীয় কাউন্সিলর বাদল পুইতন্ডির বক্তব্য, ‘‘এটা কবির প্রতিই অবমাননা। দলমত নির্বিশেষ দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি।’’ সংস্কৃতিকর্মী মধুসূদন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করুক পুলিশ। উদ্যানটি সাজানোর জন্যও পদক্ষেপ করা দরকার।’’ বিষয়টি নিয়ে আসানসোল পুরসভার তরফে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘এটা জঘন্যতম অপরাধ। মূর্তি উদ্ধার এবং দোষীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের কাছে আর্জি জানিয়েছি। পুরসভা উদ্যানটিকে সাজিয়ে তুলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy