প্রতি দিনই কাকভোরে বেরিয়ে ট্রেন ধরতে হয় কাটোয়া ঘুটকিয়াপাড়ার সুহৃদ সাহাকে। আগে যখন কলকাতার বাস চলত, তখন প্রয়োজন অনুয়ায়ী যেতে পারতেন তিনি। আবার কাপড়ের ব্যবসায়ী ঘোষহাটের দিলীপ পালকে ফি মাসে বারচারেক শিলিগুড়ি যেতে হয়। ট্রেনের টিকিট না পেলে যাওয়াটাই মুশকিল হয়ে পড়ে তাঁর। এদের মতোই অনেকেরই অভিযোগ, দূরপাল্লার বাস না থাকায় যাতায়াতে অসুবিধে বাড়ছে কাটোয়ায়। কলকাতা হোক, বা উত্তরবঙ্গ ট্রেনের টিকিট না পেলে যাওয়া বাতিলও করতে হচ্ছে অনেকসময়।
পড়াশোনা পাশাপাশি ব্যবসা সংক্রান্ত নানা কাজে কলকাতা, মালদা, শিলিগুড়ি যান কাটোয়ার বহু মানুষ। চিকিৎসার প্রয়োজনে কলকাতা যাওয়ার সংখ্যা তো আরও বেশি। অথচ বাস না থাকায় ট্রেনই একমাত্র ভরসা যাওয়া-আসার। শহরের বাসিন্দাদের দাবি, ট্রেনে সংরক্ষিত কামরার টিকিট মেলে না বেশির ভাগ সময়। বাস থাকলে আরামে যাওয়া যায়। সময়ে পৌঁছনোর জন্য অতিরিক্ত ভাড়া দিতেও রাজি যাত্রীরা। হরগৌরিপাড়ার পম্পা মণ্ডল, গৌরাঙ্গপাড়ার পিউ সূত্রধরদের মতে, ‘‘সকালে ট্রেন ধরতে না পারলে দুপুর-সন্ধ্যায় বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কলকাতা বা হাওড়াগামী বাস চালু হলে সেই সমস্যা মিটবে।’’ ব্যবসায়ী সমিতির তরফে বিদ্যুৎ নন্দী আবার জানান, মূলত ফুল, চাল, পুতুল ও কাপড়ের ব্যবসার প্রয়োজনে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ দরকার হয়। লরির তুলনায় বাসে অনেক কম খরচে মালপত্র নিয়ে যাওয়া যায়। দূরপাল্লার বাস চালু হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ব্যবসায়ীক যোগাযোগ বাড়বে।
কাটোয়া বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, আগে কলকাতাগামী বাস চললেও বছর তিনেক ধরে কলকাতা, বারাসতগামী বাস বন্ধ। বন্ধ দুর্গাপুরগামী ও সিউড়ি থেকে ভায়া কাটোয়া, কৃষ্ণনগর সরকারী বাস পরিষেবাও। এমনকী, বছর আটেক আগে প্রতিদিন দু’বার করে চলা বাঁকুড়াগামী বাসও বন্ধ হয়ে যায়। বছর পাঁচেক আগে বন্ধ হয় কাটোয়া হয়ে কৃষ্ণনগর থেকে চিওরঞ্জনগামী বাসও।আর উত্তরবঙ্গ যাওয়ার বাস কোনওদিন ছিলইনা। ওই সংগঠনের দাবি, দূরপাল্লার বাস বলতে সালার থেকে কাটোয়া হয়ে দীঘা এবং বোলপুর হয়ে দুর্গাপুরগামী সরকারী বাস চালু রয়েছে। চলে ভায়া রাণাঘাট কল্যাণীগামী বাস। কিন্তু বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেল কেন?
ওই সংগঠনের সভাপতি নারায়ণচন্দ্র সেনের কথায়, ‘‘দূরপাল্লার বাস এক বার নিয়ে যেতে আসতে অন্তত হাজার আটেক টাকা খরচ। অনেক সময় সেই টাকাটুকুও ওঠে না। আবার নতুন বাস কিনতেও বাইশ লক্ষের মতো খরচ। ফলে দূরের বাস চালানো মুশকিল।’’ তাঁর আরও দাবি, দিনে দিনে ছোট গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। টোটো, ভ্যানোতে চাপিয়েও মালপত্র অনেকদূর নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁর যুক্তি, নতুন দূরপাল্লার বাস চালু করতে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তা, ভাগীরথীর উপর সেতু তৈরি হওয়া দরকার। অনেক জায়গাতেই একমুখী রাস্তা থাকার জন্যও দূরের বাস চালানো মুশকিল বলে জানান তিনি। বাস বন্ধ হওয়ায় পকেটে টান বাস চালকদেরও। বাপি ঘোষ, সালাম শেখদের কথায়, ‘‘বাস বন্ধ হওয়ায় লরি চালাতে হচ্ছে। কিন্তু তাতে রোজগার কম।’’ যদিও প্রশাসনের কাছে এ নিয়ে তাঁরা কোনও আর্জি জানাননি বলে জানা গিয়েছে। কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, বাস মালিক সংগঠনের তরফে রাস্তা বা অন্য সমস্যাগুলি জানানো হলে সমাধান করার চেষ্টা করা যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy