মেয়ের সঙ্গে ইন্দ্রনাথবাবু। নিজস্ব চিত্র।
শিরদাঁড়ার সমস্যায় হাঁটা-চালাই কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বেনাচিতির যুবক, বছর ৩৫-এর ইন্দ্রনাথ রায়চৌধুরীর। দিল্লির এইমস, চেন্নাইয়ের নামী বেসরকারি হাসপাতাল— সবখানেই কড়া নেড়েছিলেন ইন্দ্রনাথবাবু। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই সব জায়গায় গিয়ে তেমন লাভ হয়নি। শেষমেশ প্রায় অসাধ্য সাধন করলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অস্থি বিভাগের চিকিৎসকেরা, তাও নিখরচায়।
সমস্যাটা শুরু হয়েছিল বছর আটেক আগে। দিল্লিতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করার সময় কোমর ও ‘হিপ জয়েন্টে’ ব্যথা শুরু হয় বলে জানান ইন্দ্রনাথবাবু। এইমসে দেখানোর পরেও ব্যথা না কমায় চাকরি ছেড়ে বেনাচিতি ফিরে আসতে বাধ্য হন। পরে চেন্নাইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয় তাঁর। ব্যথাও খানিকটা কমে। বছর কয়েক আগে সেখানের চিকিৎসকেরা জানান, অস্ত্রোপচার করতে হবে। তবে তার জন্য খরচ পড়বে প্রায় ৬ লাখ টাকার মতো। টাকার অঙ্ক শুনে আর চেন্নাই যাওয়ার সাহস পাননি ইন্দ্রনাথবাবু। এ দিকে তিন বছর ধরে হাঁটা-চলাতেও সমস্যা তৈরি হয়। ন’মাস উঠতেই পারেননি বিছানা থেকে।
শেষমেশ যোগাযোগ করেন বর্ধমান মেডিক্যালে। সম্প্রতি তাঁর অস্ত্রোপচারও হয় সেখানে। অস্থি-বিভাগের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে প্রায় দেড় মাস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ইন্দ্রনাথবাবু। এখন অনেকটাই সুস্থ। বাড়িতে বিশ্রামে রয়েছেন তিনি। ইন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়েছি। বেসরকারি হাসপাতালে টাকার অঙ্ক শুনে ফিরে এসেছি। আর সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করার সাহসই দেখাননি। বর্ধমান মেডিক্যালে আমার এক টাকাও খরচ হয়নি।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবকের ডান দিকের হিপ জয়েন্ট পাল্টাতে হয়েছে। সেরামিকের তৈরি কৃত্রিম হিপ জয়েন্টের দাম প্রায় দেড় লাখ টাকা! কী ভাবে নিখরচায় চিকিৎসা সম্ভব হল? বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অস্থি-বিভাগের প্রধান চিন্ময় দে বলেন, “স্টেট ইলনেস ফান্ড থেকে এক লাখ টাকার বেশি মেলে না। সেরামিকের বদলে অন্য কোনও ধাতুর তৈরি হিপ জয়েন্ট কিনলে হয়তো ওই টাকার মধ্যেই হয়ে যেত। কিন্তু সেগুলি কয়েক বছরের বেশি টেকে না। সকলে মিলে চেষ্টা করায় ইন্দ্রনাথবাবুর চিকিৎসা ও সেরামিকের হিপ জয়েন্ট জোগাড় করতে সমস্যা হয়নি।” চিকিৎসকেরা জানান, এই রোগটির নাম, ‘ব্যাম্বু স্পাইন’। শিরদাঁড়ার সঙ্গে হিপ জয়েন্টের নমনীয়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নড়াচড়া করা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
চিকিৎসক বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় ইন্দ্রনাথবাবুর অস্ত্রোপচার করেন। তাঁর দাবি, “অস্ত্রোপচারটা বিরল। কারণ, ইন্দ্রনাথবাবুর হিপ জয়েন্ট বলে কোনও বস্তুই ছিল না। একটাই অস্থি হয়ে গিয়েছিল। অজ্ঞান করাও সহজ ছিল না।’’ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁয়ের দাবি, “এমন অস্ত্রোপচার আমাদের হাসপাতালে প্রথম হল।”
আর ইন্দ্রনাথবাবু কী বলছেন? তাঁর আশা, ‘‘আর মাস খানেকের মধ্যে কাজে যোগ দেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy