Advertisement
E-Paper

‘ভিটে হারালে কোথায় যাব’

জঙ্গলে ঘেরা আড়াই চাঁদা গ্রাম। বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা, প্রায় ৪০টি। গ্রামবাসীর দাবি, পাট্টা রয়েছে বড় জোর বারোটি পরিবারের।

বিপ্লব ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৫
সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৬টি রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, ২০১৮-র ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে পাট্টার আবেদন খারিজ হওয়া পরিবারগুলিকে উৎখাত করতে হবে।—ফাইল চিত্র।

সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৬টি রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, ২০১৮-র ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে পাট্টার আবেদন খারিজ হওয়া পরিবারগুলিকে উৎখাত করতে হবে।—ফাইল চিত্র।

জঙ্গলে ঘেরা আড়াই চাঁদা গ্রাম। বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা, প্রায় ৪০টি। গ্রামবাসীর দাবি, পাট্টা রয়েছে বড় জোর বারোটি পরিবারের।

গ্রাম, আঁধারশুলি। গ্রামবাসীর দাবি, গ্রামের প্রায় ৭০টি পরিবারের মধ্যে পাট্টা রয়েছে কুড়িটি পরিবারের হাতে।

পাট্টা না থাকা বিভিন্ন পরিবারগুলির কিন্তু দাবি, তাঁরা কয়েক পুরুষ ধরে বাস করছেন কাঁকসার মলানদিঘি, গোপালপুর, বনকাটি, ত্রিলোকচন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা গ্রামগুলিতে। কিন্তু পাট্টা নেই! আবার পাট্টা চেয়ে আবেদন করেছিল, এমন কিছু পরিবারও রয়েছে। কিন্তু, সেই আবেদন খারিজও হয়ে গিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্রর বেঞ্চ গত ১৩ ফেব্রুয়ারির শুনানিতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১৬টি রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, ২০১৮-র ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে পাট্টার আবেদন খারিজ হওয়া পরিবারগুলিকে উৎখাত করতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে কাঁকসার ওই পরিবারগুলির আশঙ্কা, তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

বৃহস্পতিবার আড়াই চাঁদা গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, পঞ্চাশোর্ধ্ব মাতাল মুর্মু বাড়ির দাওয়ায় বসে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বহুকাল এই গ্রামে আছি। ভেবেছিলাম, জমির একটা কাগজ থাক। তাই পাট্টার আবেদন করি। কিন্তু, তা খারিজ হয়ে যায়। ভিটে হারালে কোথায় যাব?’’

মাতালবাবু জানান, প্রধানত দিনমজুরি করেন তিনি। ভিটে-মাটি হারালে কার্যত পথে বসতে হবে। একই আশঙ্কা ওই গ্রামেরই বাসিন্দা, বছর চল্লিশের জয়ন্ত টুডুরও।

তবে এই আশঙ্কা শুধু মাতালবাবু বা জয়ন্তবাবুর নয়। কাঁকসার নানা এলাকার আদিবাসী ও অন্য বনবাসীদের একটা বড় অংশ, যাঁরা পাট্টার আবেদন করেও ‘কাগজ’ পাননি, তাঁরা আশঙ্কায় ভুগছেন।

কিন্তু কেন এমন আশঙ্কা? ত্রিলোকচন্দ্রপুররের বড়বাঁধের সুমি কিস্কু, লক্ষ্মী হেমব্রমেরা জানান, জঙ্গল তাঁদের আবাসের পাশাপাশি বেঁচে থাকারও মূল অবলম্বন। তাঁদের কেউ জঙ্গল থেকে শালপাতা সংগ্রহ করে থালা তৈরি করেন, কেউ বা শুকনো কাঠ আনেন জ্বালানির জন্য। আবার অনেকেই কেন্দু পাতা সংগ্রহ করে বিড়ি বাঁধেন। জঙ্গল থেকে উৎখাত হলে তাঁদের রুটি-রুজিও প্রশ্নের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন লক্ষ্মীদেবীরা।

আশঙ্কায় রয়েছেন, যাঁরা পাট্টার জন্য আর্জি জানাননি, তাঁরাও। প্রবীণ খেলারাম টুডু, বৃদ্ধা বুড়ি টুডু, মঙ্গলা হেমব্রম, বীরসা হেমব্রমেরা জানান, এই গ্রামগুলির একটা বড় অংশের মানুষই জানেন না কী ভাবে পাট্টার জন্য আবেদন করতে হয়। অথবা, আবেদনপত্রের সঙ্গে সঙ্গে কী কী কাগজপত্র জমা দিতে হয়। আদিবাসী অধিকার মঞ্চের কাঁকসা ব্লকের নেতা ভৈরব টুডু যদিও বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশের বিষয়ে এখনও আমরা কিছু জানি না।’’

বিডিও (কাঁকসা) সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ এখনও আমাদের কাছে আসেনি।’’

Land Forest Supreme Court of India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy