Advertisement
০৮ মে ২০২৪

নিরাপত্তা থেকে সেতুর কাজ, প্রশ্ন সবেই

সংখ্যালঘু উন্নয়নে জেলার কাজের গতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় রাজ্যের সংখ্যালঘু কমিশন। মঙ্গলবার বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার দফতরে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ ইনতাজ আলি শা। বিভিন্ন দফতরের কাজের অগ্রগতির খোঁজখবর নেন তিনি। প্রশ্ন ওঠে, সংখ্যালঘু মহিলাদের নিরাপত্তায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

বিডিএ-র দফতরে সংখ্যালঘু কমিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক চলছে প্রশাসনের। —নিজস্ব চিত্র।

বিডিএ-র দফতরে সংখ্যালঘু কমিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক চলছে প্রশাসনের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৫ ০০:৪৯
Share: Save:

সংখ্যালঘু উন্নয়নে জেলার কাজের গতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় রাজ্যের সংখ্যালঘু কমিশন। মঙ্গলবার বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার দফতরে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ ইনতাজ আলি শা। বিভিন্ন দফতরের কাজের অগ্রগতির খোঁজখবর নেন তিনি। প্রশ্ন ওঠে, সংখ্যালঘু মহিলাদের নিরাপত্তায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকের শুরুতেই সংখ্যালঘু উন্নয়নের অগ্রগতি নিয়ে তথ্য পেশ করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রণবকুমার বিশ্বাস। শুরু হয় একের পর এক প্রশ্ন। সংখ্যালঘু কমিশন যে মিড-ডে মিল, অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, সে কথা পরিষ্কার ভাবে এ দিনের বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়। কমিশনের কর্তারা প্রশ্ন তোলেন, কি কারণে পূর্বস্থলী ২ ব্লকে এক বছর ধরে একটি সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে? এ ছাড়া জেলার চারটি ব্লকে আইটিআই তৈরি হলেও বাকি ব্লকগুলিতে কেন করা যাচ্ছে না, সে প্রশ্নও ওঠে। অতিরিক্ত জেলাশাসকেরা স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়ে যান। কোনও মতে প্রশ্নের ধাক্কা সামলে তাঁরা জবাব দেন, ‘‘সেতুর কাজ চলছে। অন্য ব্লকেও আইটিআই করার প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে।” সভাতেই কমিশনের কর্তা জানতে পারেন, ৩১টি ব্লকের মধ্যে মাত্র ৬টি ব্লকে সংখ্যালঘু উন্নয়ন খাতে ‘কমিউনিটি শৌচাগার’ তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। তথ্যে উঠে আসে, এখনও পর্যন্ত ‘পূর্ণ সাক্ষর’ জেলায় ৯৮৫ জন শিশু স্কুলের মুখ দেখেনি। এরপরেই সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান জেলা প্রশাসনের কর্তাদের উদ্দেশে উন্নয়নের কাজে গতি আনার পরামর্শ দেন।

এ দিনের সভায় জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) আসেননি তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই কমিশনের চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “এ রকম গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সিএমওএইচের আসা উচিত ছিল। তার প্রতিনিধি হয়ে যিনি এসেছেন, তিনি তো কোনও প্রশ্নেরই জবাব দিতে পারছেন না।” এ ছাড়া মহিলা পাচারের ঘটনা জেলায় কতগুলি ঘটেছে, কতজন পাচার হয়ে যাওয়া মহিলাকে উদ্ধার করা হয়েছে, বধূ নির্যাতনের মামলা কতগুলি হয়েছে— পুলিশের কাছে এ সব খুঁটিনাটি তথ্যও জানতে চান কর্তারা। সব উত্তর না দিতে পারলেও পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা জানান, এ বছর মহিলা পাচারের অভিযোগ হয়েছে ৬টি। তবে পাচার হয়ে যাওয়া ৪৯ জন মহিলাকে উদ্ধার করা হয়েছে।

বৈঠক শেষে সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আলহাজ ইনতাজ আলি শা’র কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছিল, জেলার সংখ্যালঘু উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজকর্মে খুশি নয় কমিশন। তিনি বলেন, “আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। কাজে গতি আনতে হবে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কাছ থেকে সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে নানা তথ্য চাইছেন, কিন্তু জেলা প্রশাসন আমাদের সবসময় তথ্য দিয়ে সাহায্য করছে না।” এ ব্যাপারে বিশেষ করে জেলা পুলিশের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন ওই কর্তা। তিনি সাফ বলেন, “পুলিশের কাছ থেকে আমরা অনেক তথ্য চেয়েও পাচ্ছি না।” যদিও পুলিশের কর্তাদের দাবি, ‘‘সংখ্যালঘু কমিশন যে সব তথ্য আমাদের কাছে চেয়েছেন, সেই সব তথ্য সঙ্গেসঙ্গেই দেওয়া হয়েছে। তবে এটাও ঠিক, সব তথ্য তখনই হাতের কাছে পাওয়া যায় না, সেই রকম কিছু তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।

বৈঠকে সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্যেরা ছাড়াও জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল, মহকুমাশাসকেরা, বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রণব কুমার বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত ও খাদ্য) রত্নেশ্বর রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তরুণ হালদার প্রমুখ হাজির ছিলেন। ছিলেন দলেরই নেতা-কর্মী খুনে অভিযুক্ত কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি তৃণমূলের জাহের শেখ। পুলিশ, প্রশাসনের কর্তাদের উপস্থিতিতে বৈঠকে তাঁর হাজির থাকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

বৈঠক শেষে জেলার এক মহকুমাশাসক বলে ফেলেন, “এটা তো পুরো ইন্টারভিউ!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

burdwan bridge building security trinamool tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE