নেহরু পার্কে গুলিবিদ্ধ হয়ে এখানেই লুটিয়ে পড়েছিলেন সুকুমারবাবু। —শৈলেন সরকার
বছরের প্রথম দিনে সকাল থেকে পার্কে লোক ঢুকেছে হুড়মুড়িয়ে। মাঝ দুপুরে তখন লোকে লোকারণ্য। খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, নৌকাবিহার, ব্যাডমিন্টনে জমে উঠেছে বার্নপুরের নেহরু পার্ক। কোথাও কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, ঘুরে দেখছেন পার্ক দেখভালের লিজ নেওয়া কর্তা সুকুমার বিশ্বাস।
সব কিছুই চলছিল ঠিকঠাক। হঠাৎই পরপর গুলির শব্দে ছন্দপতন। হুড়োহুড়ি করে যে যে দিকে পারেন, পালাতে শুরু করেন পর্যটকেরা। তারই মধ্যে দেখা যায়, লেকের ধারে কাদায় লুটিয়ে পড়েছেন সুকুমারবাবু। গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে তাঁর শরীর। পুলিশ এসে উদ্ধার করে যতক্ষণে হাসপাতালে পাঠায়, মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
বছর তেষট্টির সুকুমারবাবু, এলাকায় যিনি যিশু নামে পরিচিত। ২০১৬ সালের প্রথম দিনেই ভিড়ে ভরা পার্কে তাঁকে খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয় শহরে। পুলিশের বড় কর্তারা ছুটে আসেন। মোতায়েন করা হয় পুলিশের বড় বাহিনী। দুষ্কৃতীদের খোঁজে শহর ও আশপাশ জুড়ে তল্লাশি শুরু হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। বছর পেরিয়ে গেলেও এই ঘটনার কোনও কিনারা হয়নি। ধরা পড়েনি কোনও আততায়ী।
শিল্প শহরের উপকণ্ঠে দামোদরের গায়ে প্রায় ৭০ বছর আগে গড়ে তোলা হয় এই নেহরু পার্ক। ইস্কো কারখানার এই সম্পত্তি এখন রাষ্ট্রীয় সম্পদ। সাবেক আমলে একে ‘লা মেয়ার পার্ক’ বলে চিনতেন শিল্পাঞ্চলবাসী। ইস্কো কর্তৃপক্ষ পার্কের দেখাশোনার জন্য প্রতি পাঁচ বছরে এক বার দরপত্র ডেকে লিজ দেন। সেই সময়ে পার্কের লিজ পেয়েছিলেন সুকুমারবাবু। কিন্তু কর্মস্থলেই যে বেঘোরে তাঁর প্রাণ যেতে পারে, ভাবনাতেও আসেনি পরিবারের লোকজনের। কে বা কারা কীসের শত্রুতায় তাঁকে গুলি করে গেল, এখনও সেই উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছেন সুকুমারবাবুর স্ত্রী নিরুপমা বিশ্বাস।
স্বামীর মৃত্যুর পরে নিরুপমাদেবীই এখন পার্কের দেখাশোনা করেন। তিনি জানান, স্বামীর খুব প্রিয় ছিল এই পার্ক। তাই যথাসাধ্য সাজিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। তিনি জানান, দিনেদুপুরে স্বামী খুন হয়ে যাওয়ার পরে পুলিশ অনেক বার বাড়িতে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে গিয়েছে। ফোনেও কথা বলেছে। কিন্তু তার পরে আর কিছুই এগোয়নি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঘটনার পরেই জনা পাঁচেক স্যুট-টাই পরা যুবককে পার্কের কাঁটাতার টপকে ছুটে পালিয়ে যেতে দেখেছিলেন কিছু প্রত্যক্ষদর্শী। ওই যুবকেরাই আততায়ী বলে সন্দেহ করা হয়। সেই মতো পুলিশের গাড়িও ছোটে। তবে কারও হদিস মেলেনি। ঘটনার পরে কিছু দিন তদন্ত চলেছিল তৎপরতার সঙ্গে। তবু কেন কাউকে ধরা গেল না? পুলিশকর্তারা এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস শুধু বলেন, ‘‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। খুনের কিনারা ঠিকই হবে।’’
নিরুপমাদেবী অবশ্য এই আশ্বাসে আশার আলো দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘‘কেউ তো এখনও ধরা পড়ল না। আর কিনারা হবে বলে তো মনে হচ্ছে না!’’
• ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি বার্নপুরের নেহরু পার্কে ভিড়ের মধ্যে গুলি করে খুন সুকুমার ওরফে যিশু বিশ্বাসকে (৬৩)।
• পরপর গুলি করে কয়েক জন যুবক কাঁটাতার টপকে পালায় বলে পার্কে আসা কয়েক জনের কাছে জেনেছিল পুলিশ।
• কীসের শত্রুতায় খুন, অন্ধকারে পুলিশ ও পরিবার।
• এক বছর পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয়নি কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy