Advertisement
E-Paper

নখের ডগায় মাদক, হুঁশ হারাচ্ছে যাত্রী

বেশ কিছুক্ষণ ধরেই চলে যাত্রীর চালচলন খতিয়ে দেখা। তার পরে ট্রেন ছাড়লে আলাপ, খাওয়াদাওয়া এবং যাত্রীকে ঘুম পাড়িয়ে লুঠ।— গত কয়েক মাস ধরে চলন্ত ট্রেনে মাদক খাইয়ে যাত্রীদের সর্বস্ব লুঠ করার ঘটনা সামনে এসেছে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনে।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৮ ০৩:১২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বেশ কিছুক্ষণ ধরেই চলে যাত্রীর চালচলন খতিয়ে দেখা। তার পরে ট্রেন ছাড়লে আলাপ, খাওয়াদাওয়া এবং যাত্রীকে ঘুম পাড়িয়ে লুঠ।— গত কয়েক মাস ধরে চলন্ত ট্রেনে মাদক খাইয়ে যাত্রীদের সর্বস্ব লুঠ করার ঘটনা সামনে এসেছে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনে। আর তার পরেই সক্রিয় হয়েছেন আরপিএফ এবং রেলকর্তারা। তদন্তে নেমে তাঁরা জানতে পেরেছেন, বিশেষ পদ্ধতিতে চলছে এই দুষ্কর্ম।

আরপিএফ সূত্রে জানা যায়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি গয়াগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেন থেকে রাঁচীর বাসিন্দা সরবণ গুপ্তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। জ্ঞান ফেরার পরে তিনি পুলিশকে জানান, দু’জন সহযাত্রী তাঁকে ঠাণ্ডা পানীয় খেতে দেন। তারপর তাঁর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরলে দেখেন, চুরি গিয়েছে মানিব্যাগের টাকা ও ব্যাগ। এর কিছু দিন আগেই গভীর রাতে হাওড়াগামী কালকা মেল থেকে দু’জন অচেতন যাত্রীকে দুর্গাপুর স্টেশনে নামানো হয়। উদ্ধার হওয়া ওই দুই যাত্রী ধানবাদের সোনু কুমার রওয়ানি ও উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার বাসিন্দা অবিনাশ কুমার জ্ঞান ফেরার পরে পুলিশকে জানিয়েছেন, সহযাত্রীদের কাছ থেকে চা-বিস্কুট খেয়েছিলেন। তার পরেই তাঁরা অচেতন হয়ে পড়েন।

আরপিএফ সূত্রে জানা যায়, এমন ভুক্তভোগী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে নানা তথ্য।

সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে কয়েক জন দুষ্কৃতীকে ধরাও গিয়েছে। আরপিএফ-এর গোয়েন্দা আধিকারিকেরা জানান, ধৃতদের জিজ্ঞসাবাদ করে জানা গিয়েছে, সাধারণত স্টেশন থেকেই দুষ্কৃতীরা নির্দিষ্ট যাত্রীদের পিছু নেওয়া শুরু করে। আর এটা শুরু হয় সাধারণত টিকিট কাউন্টার লাগোয়া জায়গা থেকে। এর পরে ট্রেনে উঠে ওই নির্দিষ্ট যাত্রীর সঙ্গে শুরু হয় আলাপ জমানো। তার পরে হকারদের কাছ থেকে নানা খাবার কিনে চলে খাওয়ানো। আর তাতেই কেল্লা ফতে।

কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন, হকারদের কাছ থেকে নেওয়া খাবারে কী ভাবে মেশানো হয় মাদক? মাদক খাইয়ে লুঠের ঘটনায় তদন্তকারী আরপিএফ ইনস্পেক্টর দীপঙ্কর দে জানান, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, এরা হাতের বুড়ো আঙুলের নখে ওষুধ লুকিয়ে রাখে। হকারদের কাছ থেকে খাবার বা পানীয় হাতে নিয়েই তা নখের সংস্পর্শে আনা হয়। আর এর ফলে খাবারের সঙ্গে সহজেই মিশে যায় খাবার।

ঠিক কী ধরনের মাদক মেশানো হয়? মাদকের ফলে জ্ঞান হারানো বেশ কয়েক জন রোগীকে কাছ থেকে দেখেছেন আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস। তাঁর কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে এ ধরনের মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বোঝা গিয়েছে সাধারণত ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়।’’ মাদক মেশানোর ক্ষেত্রেও বিশেষ কিছু ‘সতর্কতা’ নেয় দুষ্কৃতীরা। তদন্তকারীরা জানান, সাধারণ ভাবে মাদকের পরিমাণ এমন থাকে যাতে যাত্রীর মৃত্যু না হয়। কিন্তু দু’-একটি ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও ঘটে। যেমন, বছর কয়েক আগে দমদমের বাসিন্দা পুরসভা কর্মী দদন শর্মা হাওড়া-অমৃতসর মেলে সফর করার সময় দুষ্কৃতীদের দেওয়া পানীয় খেয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর।

এই পরিস্থিতিতে বিপত্তি এড়াতে নজরদারি বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন রেলকর্তারা। সেই সঙ্গে তাঁরা জোর দিচ্ছেন যাত্রী সচেতনতার উপরেও। আরপিএফ-এর সিনিয়র কমান্ডান্ট অচ্যুতানন্দ ঝা বলেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনা রুখতে কিছু দিন আগে আসানসোল ডিভিশনে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে।’’

Miscreant Passenger train
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy