জেলার ২৭৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৯৮টি নির্মল গ্রাম। তারপরেও সরকারি হিসেবে ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৮৫১টি পরিবারে এখনও শৌচাগার নেই। গত দু’বছর ধরে বিভিন্ন প্রকল্পে শৌচাগার তৈরি করতে গিয়ে জেলা প্রশাসনের নজরে এসেছে, সরকারি হিসেবের বাইরে আরও ১ লক্ষ ১২ হাজার ৫২৫টি পরিবারের সদস্যদের শৌচকর্মের জায়গা নদীর চর, মাঠ-ঘাট। সবমিলিয়ে জেলার ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ৩৭৬টি পরিবারের নিজস্ব শৌচাগার নেই।
কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৯ সালের মধ্যে দেশকে ‘স্বচ্ছ’ করার পরিকল্পনা করেছে। পশ্চিমবঙ্গকে নির্মল করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২০১৭। আরও এক ধাপ এগিয়ে ২০১৬ সালের মার্চের মধ্যেই জেলায় শৌচাগারবিহীন পরিবারের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে চাইছে বর্ধমান জেলা প্রশাসন। কিন্তু সরকারি হিসেবেই যেখানে লক্ষাধিক পরিবার বাদ পড়ে গিয়েছে সেখানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতি পরিবারে শৌচাগারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। জেলার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ গোলাম জার্জিসের কথায়, “প্রশাসনের তালিকায় ৬২ হাজার শৌচাগারহীন পরিবারের নাম নেই। এ ছাড়া খাতায়কলমে শৌচাগার আছে অথচ বাস্তবে শৌচাগার নেই এ রকম পরিবারের সংখ্যাও প্রায় ৫০ হাজার। তবে আমরা এই পরিবারগুলিকে বাদ দিলে তালিকায় যে ২ লক্ষ ৪২ হাজার ৮৫১টি পরিবারের নাম রয়েছে তাদের শৌচাগার গড়ে দেওয়াটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালে জেলা প্রশাসন একেবারে প্রান্তিক স্তরে শৌচাগারহীন পরিবারের সংখ্যা নির্ধারণের জন্য সমীক্ষা চালায়। পঞ্চায়েতের আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, স্বচ্ছদূত কর্মীরা বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে এই সমীক্ষার রিপোর্ট তৈরি করেন। তালিকায় শুধু দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবার নয়, প্রান্তিক পরিবারগুলিরও নাম রাখা হয়। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী ১ লক্ষ ৯১ হাজার ৩১৬টি পরিবার এবং দারিদ্রসীমার উপরে ২ লক্ষ ৪০ হাজার ৩৭৪টি পরিবার শৌচাগারহীন। অর্থাৎ জেলায় ৪ লক্ষ ৩১ হাজার ৬৯০টি পরিবারের নিজস্ব কোনও শৌচাগার ছিল না। এর মধ্যে শৌচাগার না থাকা পরিবারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল গ্রামীণ এলাকায়। তার মধ্যে ভাতারে ২২৫৯৩, গলসি ২ ব্লকে ২২৩০৪, খণ্ডঘোষে ২৪৩৩০, মেমারি ১-এ ২২৭১২, কালনা ১ ব্লকে ১৯৭৮৮, পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকে যথাক্রমে ১৯৯২০ ও ১৮৮৪৩টি পরিবারের নিজস্ব শৌচাগার নেই।
এরপরে ২০১৩-১৪ আর্থিক বর্ষ থেকেই বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে শৌচাগার তৈরির উদ্যোগ নেয় বর্ধমান জেলা পরিষদ। শুরুর দিকে ‘নির্মল ভারত অভিযান’ প্রকল্পে ১০০ দিনের কাজে পরিবারগুলিকে শৌচাগার গড়ে দিত পঞ্চায়েত। সে বছর জেলায় মাত্র ৮১ হাজার ৫৭০টি শৌচাগার তৈরি হয়েছিল। পরের বছর ১০০ দিনের কাজ ও স্বচ্ছ ভারত মিশন বা মিশন নির্মল বাংলা মিলিয়ে ১ লক্ষ ৭ হাজার ২৬৯টি পরিবারকে শৌচাগার করে দেয় প্রশাসন। নির্মল মিশন বাংলা প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, শৌচাগার তৈরিতে ৯০০ টাকা দেবেন উপভোক্তা আর দশ হাজার টাকা ভর্তুকি দেবে সরকার। জেলার ৪ লক্ষেরও বেশি শৌচাগারহীন পরিবারের মধ্যে প্রথম দু’বছরে ১ লক্ষ ৮১ হাজার ৮৩৯টি পরিবারকে শৌচাগার তৈরি করে দেয় প্রশানস। বর্ধমান জেলা পরিষদের একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বারাবনি ব্লকে ১৪ হাজার ৪৩৫টি পরিবারের মধ্যে এখনও শৌচাগারহীন রয়েছে ১১,৮৩১টি পরিবার। ভাতার, গলসি ২, কালনা ১ ব্লকেও গত দু’বছরে মাত্র ৭৩৭১টি, ৫৩৬৯টি এবং ৪৯৪৮টি শৌচাগার তৈরি হয়েছে। একই অবস্থা মেমারি ১, পূর্বস্থলী ১ ও ২, কেতুগ্রাম ১ ও ২ ব্লকের। এই অবস্থায় জেলাকে নির্মল করার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সত্যিই চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy