E-Paper

গণেশের শেষযাত্রার আয়োজনের দায়িত্বে মিরাজ, মহসিনেরাই

কাটোয়ার সিঙি পঞ্চায়েতের সিমুলিয়া গ্রামে প্রায় ২৯০ ঘর বাসিন্দা রয়েছেন। বেশির ভাগই মুসলিম পরিবার। টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে থাকতেন বৃদ্ধা লক্ষ্মী হাজরা ও তাঁর দেওর গণেশচন্দ্র হাজরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪৩
চলছে পারলৌকিক কাজের আয়োজন। নিজস্ব চিত্র

চলছে পারলৌকিক কাজের আয়োজন। নিজস্ব চিত্র

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে মারা যান বছর পঞ্চাশের গণেশচন্দ্র হাজরা। কিন্তু বৃদ্ধা বৌদি ছাড়া কেউ ছিলেন না তাঁর। একাকী বৃদ্ধার কান্না শুনে ছুটে আসেন গ্রামেরই মিরাজ শেখ, সাহাদুল শেখরা। একজোট হয়ে ওই বৃদ্ধের দেহ সৎকারের সব ব্যবস্থা করে ফেলেন তাঁরা। উদ্যোগী হয় মসজিদ কমিটিও। বৃদ্ধা বলেন, ‘‘বিপদে ভাইয়েরা পাশে না দাঁড়ালে কিছুই করতে পারতাম না।’’

কাটোয়ার সিঙি পঞ্চায়েতের সিমুলিয়া গ্রামে প্রায় ২৯০ ঘর বাসিন্দা রয়েছেন। বেশির ভাগই মুসলিম পরিবার। টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে থাকতেন বৃদ্ধা লক্ষ্মী হাজরা ও তাঁর দেওর গণেশচন্দ্র হাজরা। দুর্ঘটনায় একটি পা জখম হওয়ায় হাঁটাচলায় অসুবিধা হত তাঁর। তেমন কাজও করতে পারতেন না। গ্রামবাসী জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। তিন মেয়েরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বৌদির কাছেই থাকতেন তিনি। এ দিন বিকেলে আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত মারা যান ওই প্রৌঢ়। বৃদ্ধার কান্না শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। সৎকারের যাবতীয় ব্যবস্থা তাঁরাই করবেন বলে জানান। মৃতের দু’পায়ে আলতা দেওয়া, ধূপ, তুলসী পাতা, চন্দন দিয়ে সাজানো তাঁরাই করেন। প্রয়োজনীয় টাকাও জোগাড় করেন সবাই মিলে।

সিমুলিয়া থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে রয়েছে শ্মশানঘাট। দেহ নিয়ে যেতে দু’টি ট্রাক্টর ভাড়া করা হয়। বাঁশ কেটে শববাহী খাটও তৈরি করেন তাঁরা। সন্ধ্যায় বাড়ির উঠান থেকে আত্মীয়ের মতোই দেহ কাঁধে নিয়ে ট্রাক্টরে তোলা হয়। ভেসে আসে ‘হরিবোলের’ আওয়াজও।

মিরাজ শেখ নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘গ্রামে একটিই হিন্দু পরিবার রয়েছে। গণেশবাবু মারা যাওয়ার পরে তাঁর সৎকারে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই ব্যাপারে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামের মসজিদ কমিটি।’’ মহসিন মল্লিক, লাল্টু শেখ, ভাসান শেখরাও বলেন, ‘‘হিন্দু রীতি মেনেই সৎকারের যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। গোটা গ্রাম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।’’

বৃদ্ধা লক্ষ্মী বলেন, ‘‘যখনই বিপদে পড়েছি ওই ভাইয়েরা পাশে দাঁড়িয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পরেও ওঁদের সাহায্য পেয়েছিলাম। এ বারও ওরা এগিয়ে এসেছে। গ্রামের মানুষদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’ পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধর্ম নিয়ে যারা হানাহানি করে তাঁদের চোখ খুলে দিল সিমুলিয়া।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Purbasthali

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy