Advertisement
১৫ মে ২০২৪

সার্কাস কাঁদিয়ে চলল সাবিত্রী

কেয়ামুদ্দিনের মন ভাল নেই। থাকার কথাও নয়। তাঁবুর বাইরে, বর্ষা দুপুরের মতো গুম হয়ে আছেন তিনি।সে বার সাত আট দিনের জন্য ঘর ছেড়েছিল ‘মেয়ে’টা। তা নিয়ে কত কথা! আর এ বার?

এ বার পিলখানার পথে। উখড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

এ বার পিলখানার পথে। উখড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
অন্ডাল শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৫৭
Share: Save:

কেয়ামুদ্দিনের মন ভাল নেই। থাকার কথাও নয়।

তাঁবুর বাইরে, বর্ষা দুপুরের মতো গুম হয়ে আছেন তিনি।

সে বার সাত আট দিনের জন্য ঘর ছেড়েছিল ‘মেয়ে’টা। তা নিয়ে কত কথা! আর এ বার?

কেয়ামুদ্দিন বিড় বিড় করছেন— ‘‘এ বার তো এই তাঁবু, ত্রিপল, রিং ছেড়েই চলে যাবে হাতিটা!’’

দিল্লি থেকে চিঠি এসে গিয়েছে। সেন্ট্রাল জু অথরিটি (সিজেডএ) জানিয়ে দিয়েছে বন দফতরকে— হাতিটার রেজিস্ট্রেশন নেই। ওকে ধরে পাঠিয়ে দিন জলদাপাড়ার পিলখানায়।

আর কেয়ামুদ্দিন? পাঁচ-পাঁচটা দশক ধরে তার ‘মেয়ে’, সাবিত্রীকে ঘষে মেজে বড় করেছেন কেয়ামুদ্দিন। সে চলে গেলে তাকেও কি আর রাখবে সার্কালওয়ালারা!

সাবিত্রী একা নয়, সার্কাসের চারটে হাতিকেই পাঠিয়ে দিতে হবে পিলখানায়। বাঘ-ভালুকের মতো সার্কাসে হাতি-ঘোড়া রাখা বেআইনি নয় ঠিকই, তবে কিনা, তাদের জন্য সিজেডএ-এর কাছে রেজিস্ট্রশন করিয়ে রাখতে হয়। দিতে হয় মোটা অঙ্কের ফি। তার উপরে সে হাতির যত্নআত্তি কেমন হচ্ছে, মাঝে মধ্যে ‘ভিজিট’ করে তারও সুলুক সন্ধান করেন কর্তারা।

সিজেড-এর এক কর্তা বলছেন, ‘‘আরে ভাই ওরা তো গত তিন বছর ধরেই জন্তুগুলোর জন্য কোনও রেজিস্ট্রশনই করায়নি। তাকে দেখিয়ে মুনাফা লুঠছে আর সরকারকে ভাড়া গুনবে না!’’

অলিম্পিক সার্কাসের অসীম ভৌমিক বলছেন, ‘‘ফি দেব না কেন, আমাদের কাছে সমস্ত কাগজপত্র রয়েছে। কিন্তু সিজেডএ অনড়, বলছে, ২০১৫-র ২৮ অগস্ট’র পরে আর নাকি লেখাপড়াই হয়নি। রসিদ তো আমাদের কাছে আছে।’’

তা হলে বন কর্তাদের তা দেখাচ্ছেন না কেন? অসীমবাবু বলছেন, ‘‘ওঁরা শুনলে তো!’’

আট বছর আগে, দিন সাতেকের জন্য সার্কাস ছেড়ে চলে গিয়েছিল সাবিত্রী। কেয়ামুদ্দিন বলছেন, ‘‘সে বার কত কথা! মেয়ে তাঁবুর বাইরে রয়েছে, শুনতে খারাপ লাগলেও পাঁচ জনে পাঁচ কথা বলবে না!’’

সে বার, ম্যাটিনি শো-এর আগে তাঁবুর বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতেন কেয়ামুদ্দিন, যদি ফেরে।

কে কোথাকার এক ‘জঙ্গুলে ‘সত্যবান’ এসে চোখ টিপল, আর দিনভর তিন-তিন খানা শো মাতিয়ে রাখা সাবিত্রী কিনা তার ভ্রূ পল্লবের ডাকে সাড়া দিয়ে শুঁড় দুলিয়ে হারিয়ে গেল গঙ্গাজলঘাঁটির বনে?

সে বার ঘরে ফিরতেই অবশ্য চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল অলিম্পিক সার্কাস। সাবিত্রীও তার পুরনো মেজাজে মেতে গিয়েছিল সার্কাসের পাঁচ কিসিমের খেলায়।

কিন্তু এ বার তো সরকারই তাদের ‘কেড়ে’ নিচ্ছে! সোমবার আবার উখড়া থেকে বাঁকুড়ার মেজিয়ায় খেলা দেখাতে যাবেন সার্কাসওয়ালারা। কিন্তু সাবিত্রীকে ছাড়া খেলা জমবে তো, একরাশ শঙ্কা কেয়ামুদ্দিনের গলায়!

কেয়ামুদ্দিন বলছেন, ‘‘সাবিত্রীকে আটকাব, সে মুরোদ কি আমার আছে?’’ তার পর, লুঙ্গির খুঁটে মুছে নিচ্ছেন চোখ— ‘‘ভাল থাকিস সাবিত্রী আর ইয়াদ রাখিস আমাদের!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Circus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE