Advertisement
০৪ মে ২০২৪
সংস্কারে রিপোর্ট পুরসভার

কোনও পার্ক আবর্জনায় ভরা, কোথাও শুধু মিটিং

নামেই সাজানো বাগান। কিন্তু পরিচর্যা বা সংস্কারের কোনও বালাই নেই। শহরের নানা পার্ক তাই ভরে রয়েছে ঝোপজঙ্গল, আবর্জনায়। তাই ইচ্ছে থাকলেও সেই মুখো হতে চান না শিশু থেকে প্রবীণ, কেউই। হাল ফেরাতে আসানসোল পুর এলাকার ৫০টি এমন পার্কের সৌন্দর্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয় সরকারের আমরুত প্রকল্পে আর্থিক অনুমোদনের জন্য একটি বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে পাঠানো হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।

হয় না রক্ষণাবেক্ষণ। আসানসোলের এক পার্কে। ছবি: শৈলেন সরকার

হয় না রক্ষণাবেক্ষণ। আসানসোলের এক পার্কে। ছবি: শৈলেন সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৬ ০০:৩০
Share: Save:

নামেই সাজানো বাগান। কিন্তু পরিচর্যা বা সংস্কারের কোনও বালাই নেই। শহরের নানা পার্ক তাই ভরে রয়েছে ঝোপজঙ্গল, আবর্জনায়। তাই ইচ্ছে থাকলেও সেই মুখো হতে চান না শিশু থেকে প্রবীণ, কেউই। হাল ফেরাতে আসানসোল পুর এলাকার ৫০টি এমন পার্কের সৌন্দর্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কেন্দ্রীয় সরকারের আমরুত প্রকল্পে আর্থিক অনুমোদনের জন্য একটি বিশদ প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে পাঠানো হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।

আসানসোল পুর এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক পার্ক রয়েছে। শীতের দুপুর হোক বা গরমের বিকেল, শহরের মানুষের কাছে সময় কাটানোর জন্য সেগুলি উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু অধিকাংশ পার্কই বেহাল পড়ে রয়েছে। নাগরিকেরা সেখানে যেতেই চান না। যেমন, কল্যাণপুর আবাসন এলাকার পার্কটি ঝোপ জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে। শিশুদের মনোরঞ্জনের সে রকম কোনও ব্যবস্থাও নেই। এলাকার এক প্রবীণ নাগরিকের আক্ষেপ, ‘‘ভেবেছিলাম বিকেলে অবসর সময়টা ওখানে কাটানো যাবে। এখন দেখছি অযথাই তৈরি করা হয়েছিল।’’

একই দশা বার্নপুর নিউটাউন এলাকার নন্দীনি পার্কের। পরিকাঠামো বলতে প্রায় কিছুই নেই সেখানে। স্থানীয় বাসিন্দা মহুয়া ঘোষের ক্ষোভ, ‘‘পরিচর্যাই যদি না করবে তো পার্ক তৈরি করার দরকার কী!’’ কুলটির মজিদিয়া পার্কটি নামেই পার্ক। সেখানে না আছে শিশুদের খেলাধুলো করার কোনও সরঞ্জাম, না প্রবীণদের বসার ব্যাবস্থা। শুকনো মাঠের চার দিকে হাড়গোড় বেরিয়ে পড়া ইটের দেওয়াল। স্থানীয় বাসিন্দা বিদ্যানন্দ শর্মা বলেন, ‘‘এই পার্কটি শিশুদের খেলার উপযোগী করে তোলার আবেদন করেছি বহু বার। সবাই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে ফিরে তাকাননি।’’

রানিগঞ্জের নিবারণচন্দ্র ঘটক উদ্যানটির হালও তথৈবচ। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। সাফ হয় না ঝোপজঙ্গলও। বাসিন্দাদের আক্ষেপ, বাম আমলে ঢাকঢোল পিটিয়ে তৈরি হলেও পরে আর দেখভাল হয়নি। বিপ্লবীর নামে তৈরি উদ্যানটি অসামাজিক কাজ কারবারের আখড়া হয়ে উঠেছিল বলেও এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ।

আসানসোলের মিউনিসিপ্যাল পার্ক নানা রাজনৈতিক দলের সভাস্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে সবের জন্য একটি মঞ্চও রয়েছে। এ ছাড়া আর প্রায় কিছুই নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনা কয়েক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার মধ্যে পার্কে লাউডস্পিকার বাজিয়ে সভাসমিতি প্রাণ ওষ্ঠাগত করে তোলে। তাঁদের আর্জি, এটি পুরোমাত্রায় শিশু ও প্রবীণদের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হোক।

নাগরিকদের চাহিদা ও আবেদনের প্রেক্ষিতে শহরের পার্কগুলি সাজিয়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান শহরের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি। সে জন্য আর্থিক অনুদান চেয়ে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। পুরনো পার্কগুলি সংস্কারের পাশাপাশি নানা ধর্মীয় স্থলের সামনে সাধারণের সুবিধায় নতুন কিছু উদ্যান তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে জিতেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘পুর এলাকায় অন্তত ৫০টি উদ্যান সাজাব আমরা। এই বিষয়ে খসড়াও তৈরি হয়ে গিয়েছে।’’

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে জামুড়িয়ার ক্ষুদিরাম ও গুঞ্জন পার্ক, রানিগঞ্জের সুকান্ত উদ্যান ও নিবারণ ঘটক পার্ক, আসানসোল দক্ষিণের নন্দিনী পার্কের সংস্কার করা হবে। এ ছাড়া আসানসোল দক্ষিণে ভুতাবুড়ি মন্দির, উত্তরে চন্দ্রচুড় ও ঘাগরবুড়ি মন্দির, কুলটির চিনাকুড়ি ও শ্রীপুর রোড এলাকায় নতুন উদ্যান তৈরি হবে। শীঘ্রই কাজ শুরু হয়ে যাবে দাবি মেয়রের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

park No maintenance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE