Advertisement
E-Paper

কোবরা বাহিনীতে ছিলাম, আশ্বস্ত করলেন জওয়ান

ষোলো বছর প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার সুবাদে বেশ কয়েক বার ভোটকর্মীর দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবু প্রতি বার চিঠি পাওয়ার পর থেকেই একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়, ভোট না মেটা পর্যন্ত যেটা সঙ্গ ছাড়ে না।

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০০:৩৮
দেবব্রত মুখোপাধ্যায় (দ্বিতীয় পোলিং অফিসার)

দেবব্রত মুখোপাধ্যায় (দ্বিতীয় পোলিং অফিসার)

ষোলো বছর প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতার সুবাদে বেশ কয়েক বার ভোটকর্মীর দায়িত্ব সামলানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবু প্রতি বার চিঠি পাওয়ার পর থেকেই একটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়, ভোট না মেটা পর্যন্ত যেটা সঙ্গ ছাড়ে না।

বাড়ি কাঁকসার বিরুডিহা গ্রামে। এ বার দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বেনাচিতি নেতাজি বালিকা বিদ্যালয়ের বুথে দ্বিতীয় পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পেয়েছিলাম। ভোটের আগের দিন, ১০ এপ্রিল ভোটের জিনিসপত্র নেওয়ার কেন্দ্রে (ডিসিআরসি) পৌঁছে যাই সকাল-সকাল। আমার বুথের বাকি তিন ভোটকর্মীও একে একে এসে গেলেন। ইভিএম-সহ সব জিনিস নিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। প্রচণ্ড গরম ছিল। খাবার জল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা গরম হয়ে গিয়েছিল যে তেষ্টা মিটছিল না। গলা ভেজাতে তা-ই খেতে হচ্ছিল। ডিসিআরসি-তে মনে হচ্ছিল, এ বার মহিলা কর্মীর সংখ্যা অন্য বারের থেকে বেশি। তাঁর খুব উৎসাহ নিয়ে কাজ করছিলেন।

বিকেল ৪টে নাগাদ ভোটকেন্দ্রে পৌঁছই। দোতলা স্কুল। উপরে ছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। নীচে বড় হলঘরে ভোটকক্ষ। আমাদের রাত্রিবাসও সেখানে। একটি কুঁজোয় জল রাখা ছিল। সেই ঠান্ডা জল খেয়ে যেন সারা দিনের ক্লান্তি মিটে গেল। আলাপ হল কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে। এক জন বেশ গর্বের সঙ্গে বললেন, ‘‘আমি কোবরা বাহিনীতে ছিলাম।’’ তাঁরা সবাই বললেন, ‘‘এখানে কোনও ভয় নেই। নিশ্চিন্তে কাজ করবেন।’’ শুনে বেশ আশ্বস্ত লাগছিল। আমাদের সুবিধে-অসুবিধের দিকে খেয়াল রাখছিলেন এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। রাতে তিনিই রুটি-তরকারি এনে দিলেন। তার মধ্যে আমরা পরের দিনের জন্য বেশ কিছু কাজকর্ম সেরে নিলাম। খাওয়াদাওয়ার পরে ঘুমোতে গেলাম।

কিন্তু একটা উৎকণ্ঠা রয়েই গিয়েছে। তাই ঘুম ভাল হল না। ভোর ৩টে নাগাদ উঠে পড়েছিলাম। ৫টার মধ্যে সবাই তৈরি। মক পোল শুরু সকাল ৬টায়। হলঘরটি ভোটের জন্য তৈরি করে ফেলা হল। সকাল ৭টা থেকে ভোট শুরু। গোড়া থেকেই লম্বা লাইন। দ্বিতীয় পোলিং অফিসার হিসেবে ভোটারদের সই করানো, আঙুলে কালি লাগানো, ক্রমিক নম্বর লেখা, স্লিপ দেওয়ার দায়িত্ব আমার। তাই নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় হল। টানা ঘণ্টা চারেক এমন ভিড় ছিল ভোটারদের। তার পরে লাইন খানিকটা কমল। মাঝে এক ফাঁকে দুপুরের খাবার খেয়েই আবার বসে পড়তে হল। তবে দুপুরের পর থেকে ভোটারের আনাগোনা কমে গেল। দিনের শেষে দেখা গেল, ভোট পড়েছে নব্বই শতাংশের বেশি।

সন্ধে ৬টায় ভোট শেষের পরে সব কাজ সেরে ডিসিআরসি পৌঁছতে রাত ৯টা হয়ে গেল। সেখানে তখন যেন হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে, কে কত আগে ইভিএম জমা দিয়ে বাড়ির পথ ধরতে পারে! আমার নিজের দলেই দেখলাম, চলে যেতে পারলে বাঁচেন। প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত রয়ে গেলাম শুধু আমিই। বর্ধমানগামী বাস ধরে যখন বাড়ি পৌঁছলাম, তখন মাঝরাত। কষ্ট, ক্লান্তি ভুলে স্মৃতি হয়ে রইল শুধু চেনা-অচেনা সহকর্মীদের সঙ্গে দেড় দিনের অভিজ্ঞতা।

assembly election polling officer bardwan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy