Advertisement
E-Paper

‘মাছি’ যেন না গলে, কড়া পাহারা

তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, বুধবার সন্ধ্যায় সেই ‘ফাঁক’ বন্ধ করার অলিখিত নির্দেশ ব্লকে ব্লকে পৌঁছতেই তেড়েফুঁড়ে মাঠে নেমে পড়েছেন তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীরা। কোনও ‘মাছি’ যাতে গলতে না-পারে তার জন্য শুরু হয়েছে কড়া পাহারা।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০১:০৩
পাত-পেড়ে: বড়শুলে কর্মীদের খাওয়াচ্ছে তৃণমূল। ছবি উদিত সিংহ 

পাত-পেড়ে: বড়শুলে কর্মীদের খাওয়াচ্ছে তৃণমূল। ছবি উদিত সিংহ 

বীরভূমের পথেই হাঁটার কৌশল নিয়েেছ পূর্ব বর্ধমান।

পাশের জেলার তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের স্পষ্ট নির্দেশ দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি, একটা মাছিও যেন গলতে পারে। মাছি বলতে বিরোধী দলের প্রার্থী। পূর্ব বর্ধমানেও দলের কর্মীদের কাছে নেতৃত্বের তরফে সেই অলিখিত বার্তা পৌঁছেছে বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। বুধবার সন্ধ্যায় বর্ধমান শহরের একটি অতিথিশালায় বসে গোপন বৈঠক করছেন চার-পাঁচ জন তৃণমূলের নেতা। সেখানে এক নেতা বলেছেন, পঞ্চায়েত স্তরে সিপিএম এবং বিজেপি বেশ কিছু প্রার্থী দিয়ে ফেলেছে। দেখতে হবে, আর কেউ যেন ব্লক অফিস পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে। অর্থাৎ, মনোনয়নপত্র যেন তুলতেই না পারে বিরোধীরা। বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই মোবাইল-বার্তায় সব ব্লকের নেতাদের কাছে নির্দেশ চলে গেল, ‘আর যেন মাছি গলতে না পারে , সেটা দেখতে হবে’।

বিরোধীদের অভিযোগ, ২০১৩ সালে তৎকালীন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডে মহকুমাশাসক দফতরে পঞ্চায়েত স্তরে প্রার্থীদের জন্যেও বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলেন। এ বার তা হচ্ছে ব্লক অফিসে। এবং সোমবার মনোনয়ন পর্ব শুরু হওয়ার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ব্লকে তৃণমূল কর্মীরা জমায়েত করে রেখেছেন। একাধিক জায়গায় বিরোধী প্রার্থীদের হুমকি ও মারধরের অভিযোগও উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। তবু তার ‘ফাঁক গলে’ সিপিএম এবং বিজেপি বেশ কিছু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।

তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, বুধবার সন্ধ্যায় সেই ‘ফাঁক’ বন্ধ করার অলিখিত নির্দেশ ব্লকে ব্লকে পৌঁছতেই তেড়েফুঁড়ে মাঠে নেমে পড়েছেন তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীরা। কোনও ‘মাছি’ যাতে গলতে না-পারে তার জন্য শুরু হয়েছে কড়া পাহারা। কিন্তু, ভুখা পেটে তো আর পাহারা হয় না। তাই ‘পাহারাদার’দের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে দল।

বৃহস্পতিবার সেই ছবি চোখে পড়ল কাটোয়া ২ ব্লকে। এ দিন দাঁইহাট পুর-শহরে থাকা ব্লক দফতরে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে বাধা পান বিজেপি প্রার্থীরা। অভিযোগ, শাসকদলের কয়েকশো কর্মী-সমর্থক রাস্তা আটকে তাঁদের মারধর করে। বোমা-পিস্তল নিয়ে তাড়া করে। তাঁদের গাড়ি, মোটরবাইকও ভাঙচুর করা হয়। বুধবার একই ভাবে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে বড়শুলে, বর্ধমান ২ ব্লক অফিসের আগেই মার খেয়ে পিঠটান দিয়েছিল বিজেপি। বৃহস্পতিবার বড়শুলে পুলিশের নজরদারি তুলনামূলক ভাবে বেশি ছিল। তৃণমূলের কর্মীদের হাজিরাও আগের চেয়ে বেশি ছিল। তাঁদের জন্য একটি কারখানার ভিতরে ভাত-ডাল-ফুলকপির ডালনা-চাটনির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

সেখানে গিয়ে দেখা গেল, গেটের দরজা লাগিয়ে পরিচিত মুখ দেখে তবেই ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। একই ব্যবস্থা হয়েছে জামালপুরও খণ্ডঘোষ ব্লকেও। ব্লক দফতর থেকে কিছুটা দূরে জটলা করে তৃণমূলের লোকেরা বসে রয়েছেন সেখানে। রাস্তা দিয়ে কেউ গেলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। খণ্ডঘোষে ম্যারাপ বেঁধে এক সঙ্গে দেড়শো জনের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল। গলসি ২ ব্লকে আবার ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিরোধীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। জেলা তৃণমূলের এক নেতার কথায়, “চেনার ভুলে দলেরই এক কর্মী মার খায়। তার উপর নজরদারি নিয়ে বিশেষ নির্দেশিকা ছিল না বলে বিজেপি-সিপিএম বেশ কিছু আসনে মনোনয়ন জমা দিয়ে ফেলেছিল।”

মঙ্গলকোট-কেতুগ্রাম ১ ব্লকেও ছবিটা আলাদা নয়। এরই মধ্যে আজ, শুক্রবার মঙ্গলকোট, রায়না ১, গলসি ২, খণ্ডঘোষ, আউশগ্রাম ১-সহ বেশ কিছু ব্লকে দল বেঁধে মনোনয়ন জমা দিতে যাবেন বিরোধীরা। অশান্তির আশঙ্কা তাই পুরোমাত্রায় রয়েছে।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, “আমরা প্রশাসনের উপরে ভরসা করছি না। ভোটের ময়দানও ছাড়ছি না। আমরা দলবদ্ধ ভাবে সব জায়গাতেই প্রার্থী দেব।” বিজেপির জোনাল পর্যবেক্ষক (রাঢ়বঙ্গ) নির্মল কর্মকারের দাবি, “কাটোয়ায় গোলমালের পরে প্রশাসন আমাদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য বিশেষ দিন দেবে বলে জানিয়েছে। মাঠ না ছাড়লে প্রশাসনও পিছু হঠবে, সেটা বোঝা যাচ্ছে।”

জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব অবশ্য বলেন, “ব্লক অফিসের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনও গণ্ডগোল হয়নি। বাইরে অশান্তির অভিযোগ আসায় পুলিশকে বিশেষ টহল দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অবাঞ্ছিত জমায়েত আটকাতে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।”

Panchayat Elections 2018 Political Clash TMC BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy