আলপনা দিতে ব্যস্ত আবাসিকেরা। নিজস্ব চিত্র।
কেউ পুজো মণ্ডপ ঝাড়পোছে ব্যস্ত, কেউ আলপনা আঁকায়। কেউ আবার রঙিন আলোয় মু়ড়ে দিচ্ছেন মণ্ডপ। বিবরণ শুনে আর পাঁচটা পুজোর মতো মনে হলেও এই পুজোর দায়িত্ব যাঁদের ঘাড়ে তাঁরা সবাই মানসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রের রোগী। কালনা ২ ব্লকের পূর্বসাতগাছিয়া এলাকার আনন্দ ভবন মানসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রতিমা আনা থেকে শুরু করে পুজোর যাবতীয় জোগা়ড় করছেন তাঁরাই।
এসটিকেকে রোডের পাশে এই কেন্দ্রে ৪৮ জন রোগী আছেন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে মিউজিক থেরাপি, পড়াশোনা, যোগা-সহ নানা নিয়মের মধ্যে দিয়েই যেতে হয় তাঁদের। প্রাত্যহিকের ছক বদলায় পুজো এলে। গাছগাছালিতে ভরা এই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধানো মণ্ডপে প্রতিমা চলে এসেছে। ঝকঝক করছে মণ্ডপ চত্বর। ঢাকের আওয়াজ, রঙিন আলোয় শরৎ এসেছে সেখানে। আবাসিকেরা এক সঙ্গে মিলে ফুল তোলা, আলপনা দেওয়া, ভোগের বাসন ধোয়া, খাবারের মেনু তৈরি করছেন। এক দল আবার পুজোর কোন দিন কী অনুষ্ঠান হবে, কারা গান, নাচ, কবিতা পাঠ করবেন সেই তালিকা তৈরি করছেন। চলছে মহড়াও। এক পাশে বসে গান গাইছিলেন ভাতখণ্ডের খেয়াল নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি করা সুমনা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কোন্নগরে বাড়ির লোকজনেরা থাকেন। বছর চারেক হল অসুস্থতার জন্য এখানে আছি। পুজোয় এ বার আগমনী গাইব।’’ তাঁর পাশেই বিড়বিড় করে কবিতা আওড়াচ্ছিলেন সুমন রায়। তিনি জানান, পুজোয় কবিতা পড়বেন তিনি। যাতে ভুলে না যান তাই জোর অনুশীলন চলছে।
পঞ্চমীর দুপুরে এক মনে মণ্ডপে আলপনা দিচ্ছিলেন মাঝবয়সী সারদা বন্দ্যোপাধ্যায়, সোমা ভট্টাচার্য, কৃষ্ণা চক্রবর্তীরা। পুজোর কথা উঠতেই সারদাদেবী বলেন, ‘‘এখানে আসার পর আর দমদমের পুজো দেখিনি। অন্য কোথাও যেতে ভালও লাগে না। এখানে নিজে হাতে পুজোর কাজ করে শান্তি পাই।’’ ইংরাজিতে মাস্টার ডিগ্রি করা হাওড়ার আন্দুলের বাসিন্দা সোমাদেবীও বছর ছয়েক ধরে রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়িতে দেড়শো বছরের পুরানো দুর্গাপুজো। ওখানকার রাজপরিবারের পুজোও বিখ্যাত। কিন্তু এখানে আসার পরে আর অন্য পুজোয় যেতে ইচ্ছে করে না।’’
জানা যায়, মহালয়ার দিন থেকে নবমী পর্যন্ত নিরামিষ খান আবাসিকেরা। মেনু থাকে লুচি, পোলাও, ফুলকপি, পনির, এঁচড়। বোঁদে দিয়ে হয় মিষ্টিমুখ। দিনভর লুডো, তাস খেলা চলে মণ্ডপে। এক সময় এই কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন কলকাতার বাসিন্দা বৃদ্ধ পৃথীশ মিত্র। সুস্থ হওয়ার পরেও আর ফিরে যাননি। তাঁর কথায়, ‘‘সারা বছর রুটিন মেপে চলা হয়। পড়াশোনা থেকে গানবাজনার বাঁধা ধরা রুটিনে ছেদ পরে পুজোর দিন পনেরো আগে থেকে। এত আনন্দ আর কোনও অনুষ্ঠানে হয় না।’’
সংস্থার সম্পাদক সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রোগীদের বাড়ির সদস্যদের অষ্টমীর দিন নিমন্ত্রণ করা হয়। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, গল্পে নিমেষে কেটে যায় চার দিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy