এখানে দোল-উৎসবের বয়স প্রায় তিন শতাব্দী। তবে আউশগ্রামের জঙ্গল ঘেরা গ্রাম রামনগরে উৎসবের আনন্দের পাশাপাশি মহাপ্রভু-মহিমার বিশেষ ইতিহাসটিও ঝালিয়ে নিতে চান এলাকাবাসী।
মন্দিরের সামনে সাত বিঘা জায়গায় দোলের সন্ধেয় গৌরাঙ্গের মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রা দেখতে গ্রামবাসীরা ছাড়াও ভিড় জমান কলকাতা, দুর্গাপুর-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তের মানুষ। দোলের দিন সকালে আয়োজন করা হয় পংক্তি ভোজ।
কী ভাবে শুরু হল এই উৎসব? জনশ্রুতি, উৎকলের এক সন্ন্যাসী হুগলিতে রাজরোষে বন্দি হয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে, চৈতন্যদেবের এক পার্ষদ ওই সন্ন্যাসীকে রক্ষা করেন। এর পরেই আনুমানিক তিন শতাব্দী আগে ওই সন্ন্যাসী আউশগ্রামে শ্রীগৌরাঙ্গের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করেন। সেবাইতদের দাবি, চন্দন কাঠের তৈরি সাড়ে তিন ফুটের ওই মূর্তিটি এখনও পূজিত হন। পাঁচ বছর অন্তর তাতে রঙের প্রলেপ পড়ে। জনশ্রুতি, সিরাজদ্দৌল্লার স্ত্রী লুৎফ-উন-নিশা স্বপ্নাদেশ পেয়ে ১৭৪৮ সালে মহাপ্রভুর মন্দিরটি তৈরি করেন। তবে সেই মন্দিরটি ভেঙে যাওয়ায় পাঁচ বছর আগে তা নতুন করে তৈরি করা হয় বলে জানান স্থানীয় যুবক উৎসব চট্টোপাধ্যায়।
শ্রীগৌরাঙ্গ মন্দিরের অন্যতম সেবাইত আশিস অধিকারি জানান, নবাব আলিবর্দি খাঁ মহাপ্রভুর নামাঙ্কিত ৩৬৫ বিঘা দেবত্তর সম্পত্তি করমুক্ত করেন। তাঁর লেখা দলিলও রয়েছে। আউশগ্রামের ১৫টি গ্রামে ওই সব জমি ছড়িয়ে ছিল। আরও দাবি, ১৭৮৭ সালের স্থানীয় জমিদারও ৫৬ একর ১৫ কাঠা জমি দান করেন।
আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে কাজ করা রাধামাধব মণ্ডলের দাবি, ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক, প্রত্নতত্ত্ববিদ দেবাংশীকুমার পান জানান, দলিলে নবাব আলিবর্দির স্বাক্ষরও রয়েছে। নবাব জমির পাশাপাশি বেশ কিছু স্বর্ণমুদ্রাও দান করেন। যদিও সে সব মুদ্রা দুষ্কৃতীরা লুঠ করে নিয়ে যায়।” সেবাইতদের দাবি, ওই সব দেবত্তর সম্পত্তি ‘দখল’ হতে হতে এখন ১৫ বিঘেতে ঠেকেছে।
তবে এ সব সত্ত্বেও উৎসবের জৌলুস কমেনি। সেবাইত পরিবারের মেয়ে সোমা চট্টোপাধ্যায়, বধূ সুমিতা অধিকারিরা বলেন, “যাঁরা দেবত্তর সম্পতি চাষ করতেন, এক সময় তাঁরা বিঘেপিছু পাঁচ টাকা করে দিতেন উৎসবের সময়। সে দিন না থাকলেও বাসিন্দাদের সহযোগিতায় উৎসব নিয়ে উচ্ছ্বাস দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy