যাতায়াতের ভরসা এই পথই। নিজস্ব চিত্র।
শহর থেকে দূরত্ব মেরেকেটে চার কিলোমিটার। কিন্তু এমন জায়গাতেও পরিষেবা নিয়ে ভুরিভুরি অভিযোগ।
আসানসোলমুখী দু’নম্বর জাতীয় সড়কের বাঁ দিকে এগোলেই সালানপুরের মাধাইচক ও কোটশাল গ্রাম। বাঁক ঘুরে গ্রামে ঢুকতেই টের পাওয়া যায় রাস্তায় দীর্ঘ দিন মোরাম পড়েনি। রাস্তা ভরা খানা-খন্দ আর গর্ত। অথচ এই দুই গ্রাম থেকে ব্লকের অন্য কোথাও যেতে গেলে একামাত্র ভরসা এই রাস্তাটিই। সেখানে এখনও মেলে না পর্যাপ্ত পানীয় জল। এই অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন এথোড়া পঞ্চায়েতের এই দুই গ্রামের প্রায় হাজার দেড়েক পরিবার।
রাস্তা বেহাল হওয়ায় খুব দরকার ছাড়া গ্রামে গাড়ি ঢোকে না বলে জানান এলাকাবাসীরা। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, এলাকার কেউ অসুস্থ হলে তাঁকে ভ্যান রিকশায় চাপিয়ে বিস্তর ঝাঁকুনি সহ্য করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। অবস্থা সবথেকে খারাপ হয় বর্ষায়। ছিটেফোঁটা বৃষ্টিতেই রাস্তায় কাদা হয়ে যায় বলে জানান বাসিন্দারা। বিবেক ধীবর নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘রাস্তা বেহাল হওয়ায় ফি বছর বর্ষায় চটি জুতো হাতে নিয়ে খালি পায়ে যাতায়াত করতে হয়।’’
এই তল্লাটের আরও একটি প্রধান সমস্যা পানীয় জলের অভাব। বাসিন্দারা জানান, দু’দশকেরও আগে গ্রামে জল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন বসেছিল। প্রথম কয়েক মাস জলও আসে। কিন্তু তারপর থেকে আর জল মেলে না। স্থানীয় বাসিন্দা কালীপদ মুদি বলেন, ‘‘এলাকায় জল না আসায় প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ উজিয়ে এথোড়া থেকে জল বয়ে আনতে হয়।’’ এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে মোট ছ’টি জলের কল ও ৮টি নলকূপ রয়েছে। কিন্তু একটিতেও জল পড়ে না। গ্রামে গেলেই সাইকেলে জ্যারিকেন চাপিয়ে দূর থেকে জল আনতে দেখা যায় বাসিন্দাদের। প্রশাসনের তরফেও জল-সমস্যা মেটাতে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। স্থানীয় এক বধূ জানান, ব্লক প্রশাসনের তরফে এলাকায় জলের ট্যাঙ্কার পাঠানো হলেও তা অনিয়মিত। ট্যাঙ্কার থেকে যা জল মেলে, তাতে দৈনন্দিন কাজও হয় না বলে দাবি।
বাসিন্দাদের অভিযোগের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন এথোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান গোবিন্দ ধীবর। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামে পানীয় জলের ব্যাপক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু কী ভাবে সমস্যার সমাধান হবে, তা ভেবে কুল পাই না।’’ তিনি নিজেই জানান, গ্রামের মধ্যে জল সরবরাহের যে পাইপলাইনটি রয়েছে, কারিগরী ত্রুটির জন্য সেটি অকেজো। সমস্যা প্রসঙ্গে সালানপুরের বিডিও অরূপ সাধুখাঁ বলেন, ‘‘জলের সমস্যার কথা জানি। সে কারণেই ট্যাঙ্কে করে পানীয় জল সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে রাস্তা ও জলের কলের বিষয়ে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজ নেব।’’
বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বিধানসভা ভোটের আগে গ্রামে গিয়ে জল ও রাস্তার সমস্যা সমাধানের একপ্রস্থ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শাসক, বিরোধী ইভয় পক্ষই। বারবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘নির্বাচন সবে শেষ হয়েছে। আমরা এই ধরনের গ্রামগুলি চিহ্নিত করা চালাচ্ছি। সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
গ্রামবাসীদের একাংশ অবশ্য জানান, না আঁচালে শুধু আশ্বাসে কাজ হবে না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy