জল-কাদা পেরিয়ে যাতায়াত। অগ্রদ্বীপ ফেরিঘাটে অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
আড়াই কিলোমিটার রাস্তা তৈরির আশ্বাস পেতে লেগে গেল ১১ বছর।
২০০৫ সালের ৫ অগস্ট ভাগীরথীর ভাঙনে নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল অগ্রদ্বীপ-বেথুয়াডহরি রাজ্য সড়কের একাংশ। তারপর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রাত্যহিক যাতায়াতের ভরসা ছিল নদী পেরিয়ে পাঁচ কিলোমিটার উজিয়ে গিয়ে ট্রেন। নিত্য ভাঙনের আতঙ্কে অনেকে গ্রাম ছেড়ে চলে যান। বাম আমলে মন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত অগ্রদ্বীপে এসে ভাঙনে রোধে বিদেশি প্রযুক্তি আনেন। কিন্তু সেই পদ্ধতিই তলিয়ে যায়। ওই রাস্তার দেড় কিলোমিটার অংশ, তিন দিক নদীঘেরা গ্রামের বহু জমি গ্রাস করে ভাগীরথী।
এখন অবশ্য ছবিটা কিছুটা বদলেছে। সেচ দফতরের এক বাস্তুকারের কথায়, ‘‘ভাগীরথী নির্দিষ্ট সময় অন্তর গতিপথ বদলায়। সেই নিয়মেই এখন ওই অংশের ভাঙন আটকে গিয়েছে।’’ সেচমন্ত্রীও রাস্তা গড়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
অগ্রদ্বীপের পুরনো বাসিন্দারা জানান, বর্ধমানের মধ্যে থেকেও নদিয়ার সঙ্গেই মূল যোগাযোগের ছিল অগ্রদ্বীপের। কৃষিজাত পণ্য তো বটেই, দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রি করতেও নদিয়ার বিভিন্ন হাটেবাজারে যাতায়াত ছিল। অগ্রদ্বীপের বিখ্যাত গোপীনাথ মেলা দেখতেও ওই রাজ্য সড়ক ধরেই আসতেন দর্শনীর্থীদের একটা বড় অংশ। কিন্তু রাস্তা তলিয়ে যাওয়ার পর থেকে মার খেয়েছে সব কিছুই। অগ্রদ্বীপ ঘাটের ইজারাদার ভিখু হালদার বলেন, ‘‘ওই রাস্তা তৈরি হলে লোক সমাগম হবে। অগ্রদ্বীপ আবার বেঁচে উঠবে। ধুঁকতে থাকা ফেরিঘাটগুলিরও চেহারা ফিরবে।’’
গ্রামের ধারে গিয়ে দেখা যায়, ভাগীরথীর পাড়ে আড়াই কিলোমিটার জুড়ে পিচ রাস্তাটা হঠাৎ করে নদীতে মিশে গিয়েছে। বালি মাটিতে ধুলে উড়ছে। একটু জল পড়লেই কাদা। তার মধ্যেই বাস ধরতে চার কিলোমিটার দূরের নদিয়ার নাকাশিপাড়ার কুলেকাঁটা গ্রামে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। রাস্তা না থাকায় গ্রামে অ্যাম্বুল্যান্সও ঢোকে না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভাগীরথী পেরিয়ে কাটোয়া হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই অনেক সময় মারা যান রোগী। স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুধীর বিশ্বাস বলেন, ‘‘২০০৫ সাল থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বাস করছি। হাতে মোবাইল, অথচ বেরোনোর রাস্তা নেই। গ্রামটাকে বাঁচাতে রাস্তার খুব দরকার ছিল।’’
জানা যায়, এই রাস্তা তৈরির জন্য অগ্রদ্বীপ গ্রাম পঞ্চায়েত একটা উদ্যোগ করেছিল। বাজারদরের থেকে অনেক কম দামে চাষিদের কাছ থেকে ৬৭ শতক জায়গাও কেনা হয়। কিন্তু কিছু চাষি পঞ্চায়েতকে জায়গা দিতে অস্বীকার করায় পরিকল্পনা মার খেয়ে যায়। স্থানীয় বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ভাঙনে রাস্তা তলিয়ে গিয়েছে বলে সেচ দফতরকেই তা তৈরির দায়িত্ব নিতে বলেছিলাম। সেচমন্ত্রী দাবি মেনেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ।’’ ওই রাস্তা তৈরির জন্য গ্রামের মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়াবেন বলেও তাঁর আশা।” ফি বছর গোপীনাথ মেলায় আখড়া নিয়ে বসেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনিও বলেন, “বেশ কয়েক বছর ধরেই উদ্যোগ চলছে। এখন অগ্রদ্বীপেই গোপীনাথ থাকেন। রাস্তা তৈরি হওয়ার পর গোপীনাথকে ঘিরেই গড়ে উঠবে পর্যটন।” বুক বেঁধেছেন চাষিরাও। অগ্রদ্বীপের শুকদেব ঘোষ বলেন, “পাড় বাঁধানো, রাস্তা তৈরি হলে তো আনন্দের কথা। আমরা ফসল বিক্রি করতে পারব। ফড়েদের উপর নির্ভর করতে হবে না।’’
তবুও না আঁচালে বিশ্বাস নেই অনেকের। গ্রামের ঘোষ পাড়ার বধূ করুণা ঘোষের কথায়, “ভাগীরথীর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছি। বাড়ি-জমি সব গিলে নিয়েছে সর্বগ্রাসী। মন্ত্রী আশ্বাস পূরণ হবে তো?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy