Advertisement
০৬ মে ২০২৪

ফল, সব্জির দামে পকেটে ছ্যাঁকা

‘‘কলা কত করে গো?’’ উত্তর এল, ‘‘৫০ টাকা ডজন’’— লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন বাজারে এসে থলে হাতে ভিড়মি খেলেন কাটোয়ার মাধবীতলার গোবিন্দ দাস। কিন্তু কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো বলে কথা! অগত্যা পুজোর ফর্দে ছাঁটকাট করে ফল-মিষ্টি কিনে বাড়ি গেলেন তিনি।

কোথাও চলছে মূর্তি কেনাবেচা, কোথাও ফল-সব্জির দোকানে ভিড়। নিজস্ব চিত্র।

কোথাও চলছে মূর্তি কেনাবেচা, কোথাও ফল-সব্জির দোকানে ভিড়। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪৩
Share: Save:

‘‘কলা কত করে গো?’’ উত্তর এল, ‘‘৫০ টাকা ডজন’’— লক্ষ্মীপুজোর আগের দিন বাজারে এসে থলে হাতে ভিড়মি খেলেন কাটোয়ার মাধবীতলার গোবিন্দ দাস। কিন্তু কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো বলে কথা! অগত্যা পুজোর ফর্দে ছাঁটকাট করে ফল-মিষ্টি কিনে বাড়ি গেলেন তিনি।

শুক্রবার শুধু কাটোয়ার বাজার নয়, বর্ধমান শহর, কালনাতেও মধ্যবিত্তের পকেটে ছ্যাঁকা লাগার ছবিটা একই রকম ছিল। কোথাও ফল কিনতে গেলে খিচুড়ি ভোগের বাজারে টান পড়েছে। আবার কোনও গেরস্থ বাড়ি মিষ্টি-মোয়া-নাড়ুর পরিমাণ কমিয়ে নৈব্যেদ্য সাজিয়েছেন।

ক্রেতাদের দাবি, সব্জির থেকেও ফলের বাজার আগুন বেশি। বর্ধমান শহরের রানিগঞ্জ বাজারে আপেল ৮০ টাকা, কলা ৩০ টাকা ডজন, পেয়ারা ৩০ টাকা কেজি দরে বিকিয়েছে এ দিন। সঙ্গে ছিল ‘মল্টা লেবু’, যার দাম প্রতিটি ৪০ টাকা। দোকানিরা জানান, মুসাম্বি লেবুর মত দেখতে হলুদ রঙের এই লেবুর চাহিদা ভালই। বিকিয়েছে ব্যাঙ্গালুরু ফুটিও। কালনাতেওআপেল কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বেদানা ১৫০ টাকা, আঙুর ৩০০ টাকা, নাসপাতি ১২০ টাকা, পানিফল ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ক্রেতাদের দাবি, দু’দিনের প্রতিটা ফলের দাম অন্তত কেজিতে ২০-৩০ টাকা করে বেড়ে গিয়েছে। সার্কাস ময়দানের মানস মল্লিক বলেন, ‘‘৮০ টাকা কেজি আঙুরের দাম এখন ২৫০ টাকা। কিন্তু লক্ষ্মীপুজো বলে কিনতেই হচ্ছে।’’

মিষ্টি ক্ষেত্রে আবার ব্যাপারটা অন্যরকম। ক্রেতাদের দাবি, দাম একই রেখে চেনা মিষ্টির আকার ছোট করে দিয়েছেন বিক্রেতারা। দোকানিদের যদিও দাবি, ছানা, চিনি থেকে কারিগরের মজুরি সব বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়াতেই হয়েছে। রাত জেগে কাটোয়ার এক মিষ্টি বিক্রেতা কমলরঞ্জন ঘোষের কথায়, ‘‘প্রতিদিন ৫০ কেজি ছানার মিষ্টি হলেও এই ক’দিন রোজ ১০০ কেজি ছানার মিষ্টি বানাতে হচ্ছে। ছানা ১৩০ টাকা কেজি, যেখানে অন্যদিন ৮০ টাকা কেজিতে পাওয়া যায়। আবার দাম বাড়ালে ক্রেতা আসবেন না। ফলে একটু তো ভাবতেই হয়।’’

তবে শুধু তো ফল-মিষ্টি নয়, রয়েছে নানা রকম তরকারি, ভাজা দিয়ে খিচুড়ি ভোগের আয়োজনও। সেখানেও কপালে ভাঁজ মধ্যবিত্তের। কালনার পাইকারি বাজারে এ দিন সকাল থেকেই ফুলকপির চাহিদা ছিল বেশি। ছোট ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস, আর মাঝারি ফুলকপি ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিক্রেতাদের দাবি, দেশি ফুলকপির জোগান কম থাকায় আকারে বড় ব্যাঙ্গালুরুর ফুলকপি ভাল বিকিয়েছে। দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এ ছাড়াও পটল ২৫ টাকা, কুমড়ো ২০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, লঙ্কা ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। চকবাজারের এক আড়তদার মনোরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই সব্জি কম আসছে। লক্ষ্মীপুজোর চাহিদার তুলনায় জোগান অনেকটাই কম।’’

কম কেন? কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এইসময় বাজারে জলদি জাতীয় সব্জি ওঠে। কিন্তু সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে নিম্নচাপের বৃষ্টিতে অনেক সব্জি গাছ জমিতে পচে গিয়েছে। অত্যাধিক গরমেও চাষে ক্ষতি হয়। মহকুমা কৃষি দফতরের এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘মাস দেড়েক আগের বৃষ্টিতে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে। গাছ পচে যাওয়ার পরে অনেক চাষিই আবার গাছ লাগাতে পারেননি।’’

এ দিকে মনের মতো সব্জি না পেয়ে চিন্তিত গেরস্থেরা। কালনার বধূ কল্পনা রায়ের কথায়, ‘‘প্রতি বছর লক্ষ্মীপুজোয় পড়শিদের নিমন্ত্রণ থাকে। জিনিসের যা দাম তাতে মান রাখতে পারব কি না কে জানে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Laxmi puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE