E-Paper

রফতানিতে কাঁটা, দাম পড়ছে গোবিন্দভোগের

চালকল ও ধান্য ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, গত বছর সদ্য ওঠা ধান কুইন্টাল প্রতি ২৮০০ টাকা পর্যন্ত চাষিরা বিক্রি করেছিলেন। সেখানে এ বার মিলছে ২৩০০ টাকা।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৭
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সদ্য ওঠা গোবিন্দভোগ ধান বিক্রি হচ্ছে কুইন্টাল প্রতি ২৩০০ টাকায়। সেখানে রত্না বা অন্য প্রজাতির আমন ধান চাষিরা বিক্রি করছেন ১৯৫০ থেকে ২০০০ টাকায়। তাঁদের দাবি, দুই ধানের দামে অন্তত দেড় হাজার টাকা ফারাক থাকে। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি একেবারে আলাদা।

দাম বেশি থাকায় সাধারণ আমন ধান (সেদ্ধ) চাষের বদলে গত তিন দশক ধরে গোবিন্দভোগ (আতপ) চাষই ভরসার জায়গা হয়ে উঠেছে পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, হুগলি ও পূর্ব মেদিনীপুরের চাষিদের একাংশের। আরব দুনিয়া ও ইউরোপের একাংশেও গোবিন্দ ভোগ চালের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এ বছর নতুন সেদ্ধ ধানের চেয়ে সদ্য উঠতে শুরু করা সুগন্ধী গোবিন্দ ভোগ ধানের দাম অনেকটাই কম। চালকল মালিকদের দাবি, কেন্দ্রের নীতিতে রফতানি আটকে যাওয়া ও অতিরিক্ত দামের জন্য দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে গোবিন্দ ভোগের চাহিদা কম থাকায় তারা ধান কিনতে পারছে না। তাই সুগন্ধী ধানের দাম পড়তির দিকে।

রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘গোবিন্দ ভোগ চালের রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী কয়েক বার কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছিলেন। আমাদের নজরে রয়েছে বিষয়টি।” নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, সমবায়ের মাধ্যমে রফতানি করার কথা জানিয়েছে কেন্দ্র সরকার। কিন্তু এই সমবায়ের রেজিস্ট্রেশন করানো সময়সাপেক্ষ। তার পরেও কৃষি দফতর থেকে দু’টি ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। যাঁরা আগ্রহী তাঁদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

চালকল ও ধান্য ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, গত বছর সদ্য ওঠা ধান কুইন্টাল প্রতি ২৮০০ টাকা পর্যন্ত চাষিরা বিক্রি করেছিলেন। সেখানে এ বার মিলছে ২৩০০ টাকা। আর পুরনো ধানের দাম ছিল ৩৮০০ টাকা। সেই ধান বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ টাকায়। পূর্ব বর্ধমান জেলায় রায়না, মাধবডিহি ও খণ্ডঘোষ (দক্ষিণ দামোদর) রাজ্যের গোবিন্দ ভোগ ধানের ‘গোলা’ বলে পরিচিত। সেখানে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়। উৎপাদন হয় প্রায় ১.৯০ লক্ষ টন ধান। চালকল মালিকদের কাছ থেকে জানা যায়, গোবিন্দভোগের নতুনের চেয়ে পুরনো ধানের কদর বেশি। দামও বেশি। কিন্তু গত বছরের অন্তত ৬০% ধান এখনও চাষি বা মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের ঘরে রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ ধান্য ব্যবসায়ী সমিতির দক্ষিণ দামোদরের সম্পাদক মাজেদ চৌধুরী বলেন, “সাধারণ ধানের সঙ্গে গোবিন্দ ভোগের দামের পার্থক্য কুইন্টালে ১৫০০-১৭০০ টাকা থাকে। সেখানে এ বার মাত্র ৩০০-৪০০ টাকা! এ রকম পরিস্থিতি আগে কোনও দিন দেখিনি।”

গোবিন্দ ভোগ চাষি অনন্ত হাটি, বিনয় ঘোষরা বলেন, “এক বিঘা জমিতে গোবিন্দ ভোগ চাষ করতে প্রায় ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। সেই খরচটা কী ভাবে তুলব, সেটাই চিন্তার।” রিপন শেখ, গোবিন্দ দাসদের দাবি, “গত বছরের অন্তত আট কুইন্টাল ধান মড়াইতে রয়েছে। সেই ধান বিক্রি হয়নি। নতুন ধানও জমবে। ধান কেনার খরিদ্দার নেই।” চালকল মালিক সংগঠনের দাবি, কেন্দ্রের রফতানি নীতির জেরে গোবিন্দ ভোগ বিদেশে যাওয়া আটকে গিয়েছে। গোবিন্দ ভোগ রাইস মিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামল রায় বলেন, “দক্ষিণ দামোদরের চালকলের উপরে পূর্ব বর্ধমান ছাড়াও বাঁকুড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুরের একাংশ চাষি নির্ভরশীল। রফতানি বন্ধ হওয়ায় চালের চাহিদা নেই। আমরাও ধান কিনতে পারছি না। চাষিরা ধানের দাম পাচ্ছেন না। রফতানি না উঠলে ধানের দাম আরও কমে যাবে।” তাঁর দাবি, ১৯৯১ সালে গোবিন্দ ভোগ দাক্ষিণাত্য জয়ে বেরিয়েছিল। সেই বাজার দখলের পরে ২০০১ সাল থেকে বিদেশের মাটিতে গোবিন্দ ভোগের যাত্রা শুরু হয়। এ বারের মতো আশঙ্কা আগে তৈরি হয়নি।

গোবিন্দ ভোগ ধানের সঠিক দামের দাবিতে কৃষকসভা আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইনসাফ যাত্রাতেও ধানের আঁটি নিয়ে মহিলাদের দেখা গিয়েছে। কৃষকসভার পূর্ব বর্ধমানের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিনোদ ঘোষের দাবি, “গোবিন্দ ভোগ আমাদের এলাকার চাষিদের মুখে হাসি ফোটায়। এ বার তাঁরা কাঁদছেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy