Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Printing press

ব্যবসায় মন্দা, নববর্ষে উধাও ছাপাখানার ব্যস্ততা

বর্ধমান শহরের রাজগঞ্জ মহন্তস্থলের পরমানন্দ মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে ছাপাখানার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। গত কয়েক বছর বাজারের হাল দেখে তিনি এ বার শুভেচ্ছাপত্রে ২০২৪ সালের উল্লেখ করেননি।

ইংরেজি নববর্ষের ক্যালেন্ডার ছাপা বর্ধমানের বিসি রোডে।

ইংরেজি নববর্ষের ক্যালেন্ডার ছাপা বর্ধমানের বিসি রোডে। ছবি: উদিত সিংহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৬
Share: Save:

ডিসেম্বরের শেষ থেকে নতুন বছরের প্রথম কয়েক দিন পর্যন্ত ছাপাখানায় ব্যস্ততার সেই চেনা ছবি এখন উধাও। ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছাপত্র, ক্যালেন্ডার ও ডায়েরি ছাপানো হয় এই সময়ে। রাত জেগে কাজ চলে ছাপাখানায়। ছাপাখানা মালিকদের দাবি, আধুনিক প্রযুক্তির ধাক্কা এবং মোবাইলের বাড়তে থাকা ব্যবহারে শুভেচ্ছাপত্র ও ডায়েরি বিলির ঐতিহ্য আজ অস্তাচলে।

বর্ধমান শহরের রাজগঞ্জ মহন্তস্থলের পরমানন্দ মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে ছাপাখানার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। গত কয়েক বছর বাজারের হাল দেখে তিনি এ বার শুভেচ্ছাপত্রে ২০২৪ সালের উল্লেখ করেননি। শুধু ‘শুভ নববর্ষ’ বা ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ লেখা কার্ড রেখেছেন, যাতে এ বছর বিক্রি না হলে সেগুলি পরের বছরে বিক্রি করা যায়। তাঁর কথায়, ‘‘হাতে গোনা কয়েকটি কার্ড রেখেছি। বাজারে খুবই মন্দা।’’ ছাপার ব্যবসায় যুক্ত শহরের ময়ূরমহলের ব্যবসায়ী রঞ্জন গোস্বামী বলেন, ‘‘ডায়েরি বা কার্ডের বরাত এখন মেলে না বললেই চলে। টিমটিম করে জ্বলছে ক্যালেন্ডারের ব্যবসা। অল্প যে ক’টি ক্যালেন্ডারের বরাত মেলে, তা নতুন বছরের আগেই দিয়ে দেওয়া হয়। তাই আগের চাপ এখন আর নেই।’’

আর এক ব্যবসায়ী রাজকুমার পণ্ডিত বলেন, ‘‘আগে বিমা কোম্পানির লোকজন প্রচুর ডায়েরি, ক্যালেন্ডারের বরাত দিতেন। এখন তা মেলে না। কিছু ক্যালেন্ডার করা হয়েছে এ বার। তবে সংখ্যা খুবই কম। বছরের শেষদিন রবিবার হওয়ায় এ বার দোকান খুলিনি।’’

ব্যবসায়ী সৌরভ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘স্মার্ট ফোন থেকে শুরু করে নানা আধুনিক ডিজিটাল জিনিসপত্র আসায় ডায়েরি, ক্যালেন্ডারের ব্যবহার কমিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। গ্রিটিংস কার্ডের আধিপত্য আগেই হারিয়ে গিয়েছে। তাই ব্যবসার পরিসরও কমে আসছে প্রত্যেক বছর। এ বার নতুন বছরের জন্য নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে।’’

বর্ধমান টাউন হল পাড়ার এক ছাপাখানার কর্মী শেখ পিন্টু বলেন, ‘‘কোভিডের পরে ডায়েরি, ক্যালেন্ডারের চাহিদা কমে গিয়েছে অনেকটাই। আগে বিমা কোম্পানিগুলি ১৫০-২০০টি ডায়েরি, ক্যালেন্ডারের বরাত দিত। তারা এখন নামরক্ষায় হাতেগোনা কিছু ক্যালেন্ডার করতে বলে।’’ ছাপাখানার কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছর ধাপে ধাপে নেমেছে শুভেচ্ছাপত্র এবং ডায়েরি ও ক্যালেন্ডারের চাহিদা। এখন শুভেচ্ছাপত্রের বরাত কেউ দেন না। নতুন বছর পড়ার আগে থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী ভাবে শুভেচ্ছাপত্র বিক্রির স্টল বসত। এখন তার সংখ্যাও কমেছে। সব মিলিয়ে কার্ড, ডায়েরি ও ক্যালেন্ডারের চাহিদা অর্ধেকের বেশি কমে গিয়েছে।

বিমা সংস্থার কর্মী সুখেন রায় এবং একটি সংগঠনের সদস্য শরৎ কোলে বলেন, ‘‘ডায়েরি, ক্যালেন্ডার ছাপানোর খরচ বেড়েছে। অন্য দিকে, এ সবের চাহিদা কমেছে। মানুষের রোজগার কমে আসায় খুব অল্প সংখ্যক ডায়েরি, ক্যালেন্ডার করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE