প্রতি দিনই হিমঘরের দরজা খুলে এসে বসেন তাঁরা। কিন্তু বছর তিনেক ধরে হিমঘর বন্ধ থাকায় বেতন পান না কেউই। এসটিকেকে রোডের ধারে খাজুরডিহি সমবায় হিমঘরের ওই জনা ছয়েক কর্মীর দাবি, ‘‘এক দিকে এক বড় হিমঘর থাকার পরেও আলু রাখতে নাজেহাল হচ্ছেন এলাকার ছোট ও প্রান্তিক চাষিরা। আর আমরাও বেতনের আশায় হা পিত্যেশ করে বসে আছি।’’
১৯৬৫ সালে বিঘে ছয়েক জায়গার উপর বর্ধমান কো-অপারেটিভ সোসাইটির অধীনে ওই সমবায় হিমঘরের পথ চলা শুরু। ৩২ হাজার বস্তা আলু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। ১৯৯৭-এর পরে আলু রাখার পরিমাণ বাড়িয়ে আশি হাজার বস্তা করা হয়। তবে ২০০৪ সালে হিমঘরের ১ নম্বর ইউনিটের গ্যাস লিক করে পুরোনো ইউনিটটি বিকল হয়ে পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় লাখ বিশেক টাকা লোকসান হয়। তারপর থেকেই বিপত্তির শুরু। বেশ কিছু যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে যায়। নষ্ট হয় ২৫ হাজার বস্তা আলু। পরে ওই ইউনিট মেরামত করা হলেও চালু করা যায়নি। লক্ষাধিক টাকার বিদ্যুতের বিল বকেয়া থাকায় সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ দফতর। শেষমেশ ২০১৪ জানুয়ারিতে পাকাপাকি ভাবে তালা ঝুলে যায় হিমঘরে। সেই থেকে কর্মীদের বেতনও বন্ধ।
ওই বছরই বেনফেডের একটি প্রতিনিধিদল হিমঘর পরিদর্শন করে সমবায় দফতরে আশি লক্ষ টাকার একটি প্রস্তাব পাঠানোর পরামর্শ দেন। বার চারেক প্রস্তাব পাঠানো হলেও নানা কারণে তা বাতিল হয়ে যায় বলে জানান হিমঘর মানেজিং কমিটির সম্পাদক অশোক বন্দোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘কাটোয়া থানা এলাকায় ৫টি হিমঘর থাকলেও বর্তমানে কেবলমাত্র বেসরকারি মালিকানার জাজিগ্রামের হিমঘরটিই চালু রয়েছে। খাজুরডিহির এই হিমঘরটি চাষিদের জন্যই চালু করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরাই কোনও লাভ পাচ্ছেন না।’’ এর মধ্যে ২০১৫ সালে হিমঘরের বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মারটিও চুরি যায়।
কাটোয়ার দুই ব্লক, এমনকী পূর্বস্থলী বা ভাতারের একটা অংশের চাষিদের ভরসা ছিল এই হিমঘর। খাজুরডিহির বাসিন্দা, ছোট চাষি শেখ শাহিদুল্লা, রামহরি পাল, ফরজ শেখরা বলেন, ‘‘আগে অল্প আলু উঠলেও যখন যেমন প্রয়োজন আলু রাখতে পারতাম। এখন দু’বস্তা আলু রাখতে গেলেও সাতগেছিয়া বা মেমারি যেতে হয়। এতে যাতায়াতের খরচও বাড়ে, লোকসান হয়।’’
হিমঘরের ছয় কর্মীরও দাবি, বেতন না পেয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। কেউ দিনমজুরের কাজ, কাউকে আবার ধারদেনা করেই দিন গুজরান করতে হচ্ছে। প্রবীরবরণ ঘোষাল, শেখ আব্দুল কুদ্দুস, আনোয়ার হোসেনদের কথায়, ‘‘হিমঘরে তালা ঝোলার পর থেকে সংসার চালাতে সামান্য কাজ করি। তাতে আর চলছে কই!’’ ধ্রবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় নামে আর এক কর্মী বলেন, ‘‘সমবায় থেকে বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। সেই আশাতেই রয়েছি।’’
সমবায়ের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক বনানী দাস চক্রবর্তীর আশ্বাস, ‘‘হিমঘরটি চালু করার জন্য সমবায় দফতরে কথা হয়েছে।’’ কর্মীদের বকেয়া বেতন মিটিয়ে হিমঘর চালু করার বিষয়টি দেখারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।