দুর্গাপুরের অঙ্গদপুরের কারখানায় পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
বোনাসের হার বৃদ্ধির দাবিতে বেসরকারি কারখানায় কর্মীদের কাজে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল আইএনটিটিইউসি-র বিরুদ্ধে। রবিবার সকালে দুর্গাপুরের ওই ফেরো অ্যালয় কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কারখানা কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, দিনভর তা চালু হয়নি। দ্রুত সুরাহা না হলে কারখানা বন্ধের কথাও ভাববেন তাঁরা, দাবি আধিকারিকদের।
প্রতি বছর পুজোর আগে শ্রম দফতর, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও কারখানা মালিকদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে বোনাস সংক্রান্ত ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১০ অক্টোবর পুরসভার তথ্যকেন্দ্রে বৈঠক হয়। নানা সমস্যার কথা জানিয়ে কারখানা মালিকদের সংগঠনের তরফে আগেই ওই বৈঠকে হাজির না থাকার কথা জানানো হয়েছিল। মাত্র দশ জন মালিক শেষমেশ বৈঠকে যোগ দেন।
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, ত্রিপাক্ষিক কোনও চুক্তি এ বার হয়নি। চুক্তির খসড়া তৈরি হয়। গত বারের হারেই বোনাস দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়। তাতেই সই করেন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। মালিক সংগঠনের পদাধিকারীদের কোনও সই নেই। গোটা বিষয়টি জানার পরেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল শ্রমিক মহলে।
অঙ্গদপুরের ওই কারখানায় প্রায় দেড়শো জন ঠিকাকর্মী রয়েছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, ‘মেমোরেন্ডাম অফ সেটেলমেন্ট’ অনুযায়ী আগের বছরের হারে অর্থাৎ ৮.৩৩ শতাংশ হারে বোনাস এবং দেড়শো টাকা অতিরিক্ত এক্সগ্রাসিয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত শনিবার কার্যকর করে দিয়েছেন তাঁরা। অভিযোগ, রবিবার সকাল ৬টা নাগাদ দু’জন এসে বোনাসের হার বাড়ানোর দাবি তুলে চুল্লির প্রায় ১৫-২০ জন কর্মীকে কাজে ঢুকতে বাধা দেয়। তারা নিজেদের আইএনটিটিইউসি কর্মী বলে দাবি করে। এর জেরে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, প্রতি ঘণ্টায় ২-৩ লক্ষ টাকা হারে লোকসান হচ্ছে বলে কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি।
কারখানার রেসিডেন্ট ডিরেক্টর সিবিএ ভার্মা জানান, শনিবার শহরের বিধায়ক তথা আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পাড়িয়ালের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। রবিবার দুপুরে তিনি বাড়িতে ডেকেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন সকাল থেকেই কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন আর দেখা করার যৌক্তিকতা কোথায়? তবু ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। আইএনটিটিইউসি-র উচ্চ নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, এমনিতেই বিদ্যুতের সমস্যায় জেরবার তাঁরা। তার উপরে এমন পরিস্থিতি চললে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন তাঁরা। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানান, বিষয়টি পুলিশকেও জানিয়েছেন তাঁরা। এ দিন কারখানাতেও যায় পুলিশ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিধায়ক বিশ্বনাথবাবু জানান, শ্রমিকেরা ১৫ শতাংশ হারে বোনাস দাবি করেছেন। তিনি তাঁদের সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ‘‘কারখানায় কাজ বন্ধ রয়েছে কি না, আমার জানা নেই। তবে যখনই বেতন বৃদ্ধি বা বোনাসের দাবি ওঠে, কারখানা কর্তৃপক্ষ কাঁদুনি গাইতে শুরু করেন। এটা চলতে পারে না। আমি শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে সহমত।’’
আইএনটিটিইউসি-র জেলা চেয়ারম্যান ভি শিবদাসন অবশ্য বলেন, ‘‘কারখানার কাজ বন্ধ করে কোনও আন্দোলন আমরা সমর্থন করি না। কারা উৎপাদনে বাধা দিয়েছে, খোঁজ নেব। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মেটানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy