Advertisement
E-Paper

পুরনো ডাক্তারবাবুকেই চাই, ক্ষোভ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে রং করিয়েছেন। পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য দরবার করেছেন প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে। তিনি প্রসূন খাঁড়া। মেমারির দেবীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ছিলেন। সম্প্রতি বদলি হয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরে। বদলির খবর চাউর হতেই গ্রামবাসীরা এক জোট। দাবি, বদলি রুখতে হবে ডাক্তারবাবুর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৭
দেবীপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

দেবীপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করে রং করিয়েছেন। পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য দরবার করেছেন প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে। তিনি প্রসূন খাঁড়া। মেমারির দেবীপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ছিলেন। সম্প্রতি বদলি হয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুরে। বদলির খবর চাউর হতেই গ্রামবাসীরা এক জোট। দাবি, বদলি রুখতে হবে ডাক্তারবাবুর। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রসূনবাবু চলে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবার মান কমছে।

প্রসূনবাবুর শুরুর দিনগুলো কেমন ছিল? গ্রামবাসীরাই জানান, ২০০৭-র ১৭ নভেম্বর দেবীপুরে কাজে যোগ দেন প্রসূনবাবু। তখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ছিল কার্যত খণ্ডহর। ভেঙে পড়েছিল ভবন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সীমানার ভিতরেই গরু, ছাগলের অবাধ বিচরণ দেখা যেত। তেমন ওষুধপত্রও মিলত না। স্বাস্থ্যকর্মীদেরও নিয়মিত দেখা মিলত না বলে অভিযোগ। দিনভর খোলা থাকত না বর্হিবিভাগও। গ্রামবাসীরা জানান, ডাক্তারবাবু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দিয়েই স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়মিত হাজিরার বিষয়ে কড়া নজর রাখতে শুরু করেন। এরপর পঞ্চায়েতে দরবার করে একশো দিনের প্রকল্পে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে পরিষ্কার করানো হয়। ভেঙে যাওয়া জানলাগুলিও ফের খাড়া করেন তিনি। তৈরি হয় রোগীদের টিকিট কাউন্টার। নিজে থেকে নিয়ে আসেন প্রায় ৬০ ধরনের ওষুধ। নিজের পকেট থেকে লক্ষাধিক টাকা খসিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রং করানো হোক বা সীমানার মধ্যেই সোনাঝুরি, মেহগনি গাছ লাগানো— ধীরে ধীরে ডাক্তারবাবুর হাতে ভোলবদল হতে থাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভিড় জমাতে শুরু করেন দেবীপুর, কালনা ১ ও ২ ব্লকের রোগীরাও। বর্হিবিভাগে ফি দিনই দেখা যায় প্রায় শ’তিনেক রোগীকে।

ঘটনার সূত্রপাত মাস দেড়েক আগে। বদলির নির্দেশ আসে প্রসূনবাবুর। প্রায় এক সপ্তাহ থেকে তিনি আর দেবীপুরে আসেন না। তবে তাঁর জায়গায় দু’জন চিকিৎসককে পাঠানো হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর। তবে দুর্গা মুর্মু, রামপদ বাগদের মতো বাসিন্দাদের দাবি, ‘‘অন্যেরা আসুন। কিন্তু প্রসূনবাবুকে চাই। বেলা ন’টার আগেই উনি চলে আসতেন। সকলের পাশে দাঁড়াতেন।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রসূনবাবু চলে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে আর তেমন পরিষেবা মিলছে না। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার বাসিন্দাদের একাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের গেটে প্রসুনবাবুকে ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিক্ষোব দেখান। অভিযোগ, শুক্র ও শনিবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখা মেলেনি কোনও কর্মীর। রোগীদের ফিরেও যেতে হয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের। গ্রামবাসীরা ইতিমধ্যেই প্রসূনবাবুর বদলি রোখার দাবিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে দরবার করেছেন।

যদিও ওই ডাক্তার চলে যাওয়ার পর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মান নেমে গিয়েছে, এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে। স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, কয়েকজন লোক স্বাস্থ্যকর্মীদের ঢুকতে দিচ্ছে না। স্বাস্থ্যকর্মীদের হয়রানিও করা হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ মেমারির বিএমওএইচ ধিরাজ রায়ের। বিষয়টি মেমারি থানাকেও জানানো হয়েছে বলে খবর। আজ, সোমবার স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে নির্বিঘ্নে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে পারেন, তার জন্য পুলিশি সাহায্য চাওয়া হয়েছে বলে খবর। ধিরাজবাবুর দাবি, ‘‘দু’জন চিকিৎসক পেয়েছে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সরকারি নিয়ম মেনেই প্রসূনবাবু বদলি হয়েছেন। তবে গ্রামবাসীদের দাবি উচ্চতর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘বদলির নির্দেশ এসেছে স্বাস্থ্য ভবন থেকে। তাই নির্দেশ মানতেই হবে।’’

আ যাঁকে নিয়ে এত কাণ্ড, তিনি কী বলছেন? প্রসূনবাবু বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ। বাড়িতে রয়েছে। তবে দেবীপুরের অনেকেই আমাকে ফোনে জানিয়েছেন যে তাঁরা পরিষেবা পাচ্ছেন না। শুনে খারাপ লেগেছে। সুস্থ হয়ে নতুন জায়গায় যোগ দেব।’’

Debipur Health Centre Protest doctor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy